সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে হত্যার চেষ্টার দায়ে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের যাবজ্জীবন সাজার রায় দিয়েছে আদালত।

 

সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা বুধবার জনাকীর্ণ আদালতে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

আসামি বদরুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে রায়ে।

গতবছর ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস কোর্স) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথার খুলি ভেদে করে মস্তিষ্কও জখম হয়।

কলেজ ক‌্যাম্পাসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খাদিজাকে কোপানোর রোমহর্ষক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ‌্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বদরুলের সাজার দাবিতে মানববন্ধন হয় জেলায় জেলায়।

ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর অনেকটা সুস্থ হন খাদিজা। শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে তাকে পাঠানো হয় সাভারের সিআরপিতে। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন কলেজপড়ুয়া এই তরুণী।

খাদিজার ওপর হামলাকারী বদরুলকে ঘটনাস্থল থেকে ধরে তখনই পুলিশে দেয় জনতা। ঘটনার পরদিন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। বদরুলকে বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

মামলার তদন্তে নেমে খাদিজাকে কোপানোর ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। বদরুল নিজেও অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ পরান থানার এসআই হারুনুর রশিদ ৮ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এরপর ২৯ নভেম্বর ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয় সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে।

এ মামলায় বাদীপক্ষে মোট ৩৪ জনের সাক্ষ‌্য শুনেছে আদালত। খাজিদা নিজেও গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে গিয়ে নিজের জবানবন্দি তুলে ধরেন।

সাক্ষ‌্যে খাদিজা বলেন, ৫-৬ বছর আগে তাদের বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে থাকতেন বদরুল। সে সময় থেকেই তাকে উত্যক্ত করে আসছিলেন।

“বদরুলের নৃশংস হামলায় আমি সারা জীবনের জন্য প্রতিবন্ধী হয়ে গেছি। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি,” সাক্ষ‌্যে বলেন খাদিজা।

সাক্ষ‌্য শেষে যুক্তিতর্ক পর্যায়ে এসে আদালত বদল হয় এ মামালার। তিনটি ধারার মধ্যে একটিতে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার হাকিম আদালতে না থাকায় তা দায়রা আদালতে বদলি করা হয়।

দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ৫ মার্চ বিচারক রায়ের জন‌্য দিন ঠিক করে দেন।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০৮, ২০১৭)