নোয়াখালী  প্রতিনিধি : "কত সাংবাদিক এলো-গেলো আপনিই বা কি করবেন? এটা সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রীর এলাকা কিন্তুু তার বাড়ির দরজার সরকারি হাসপাতালটির চিত্র দেখে মনে হয় এসব দেখার কেউ নেই" আফসোস করে কথা গুলো বলছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় এক রোগি।

তিনি জানান, চিকিৎসক, কর্মচারী ও যন্ত্রপাতির সংকট নিয়েই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি রোগীর সংখ্যার তুলনায় জায়গা সংকট ও পুরাতন ভবনে বেহাল দশায় পুরো চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমই চলছে হুমকির মুখে। এখানে প্যাথলজি বিভাগের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ইসিজি ছাড়া উন্নত চিকিৎসায় সহায়ক কোনো যন্ত্রপাতি নেই। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে তিনশ’ ও আন্তঃবিভাগে গড়ে প্রতিদিন একশর বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।

তাই চিকিৎসক, কর্মচারী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে হাসপাতালটি তার পূর্ণাঙ্গ সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

এ বিষয়ে অভিযোগ করে মুছাপুর এলাকার বাসিন্দা নাজমা আক্তার বলেন, জ্বর ও দুর্বলতার কারণে তার ৩ বছরের শিশু সুরভীকে নিয়ে সকালে বহির্বিভাগে এসেছি বাচ্চাকে ডাক্তার দেখাবো বলে। রোগীদের ভিড় ও মাত্র একজন চিকিৎসক থাকায় ৩ ঘণ্টা পর বেলা ১২টায় ডাক্তারের কাছে যেতে পেরেছি। সেই সঙ্গে রোগীর ভিড়ে প্রচণ্ড গরমে নিজেকেই অসুস্থ মনে করছেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, ডাক্তার সংকটের কারণেই রোগীদের এ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল, প্যাথলজিস্ট পোস্টগুলোতে মাত্র একজন করে কর্মী থাকায় কেউ যদি ছুটিতে থাকেন সেদিন সেই বিভাগের পরীক্ষা নিরীক্ষা বন্ধ থাকে।

এছাড়াও হাসপাতালের একমাত্র আলট্রাসাউন্ড মেশিনটিও দীর্ঘদিন ধরে আলট্রাসনোলজিস্ট না থাকায় অব্যবহৃত হয়ে আছে। ডিজিটাল এক্সরে করার কোনো ব্যবস্থা তো নেই-ই বরং ম্যানুয়াল বা সনাতন পদ্ধতির যে একটি এক্সরে মেশিন আছে তাও এক্সরে টেকনোলজিস্ট না থাকায় রোগীদের পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে।

অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আবু নাছের জানান, তার ডান পায়ে ব্যথার কারণে হাঁটতে পারছেন না। সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসে কোনো অর্থোপেডিক ডাক্তার না পেয়ে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয়নি।

এতে করে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়েছে। চিকিৎসক, কর্মচারী এবং যন্ত্রপাতির সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সেলিম জানান, চিকিৎসক, কর্মচারী ও যন্ত্রপাতি চেয়েও না পাওয়ায় অনেক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেক সময় রোগীকে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে।

(এমইউএস/এএস/মার্চ ১০, ২০১৭)