স্টাফ রিপোর্টার : ২৪ এপ্রিল, ২০১৩। সকালে যখন দেশ জেগে ওঠার কথা নতুন দিনের আহ্বানে। ঠিক সেই সময় ঘটে যায় দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভবন ধসের ঘটনা। রানাপ্লাজার ট্যাজেডিতে সেদিন নিহত হন ১১৩৫ জন হতভাগ্য মানুষ। এর মাঝে ১০৫ জনের পরিচয় এখনো মেলেনি। আদৌ আর মিলবে কি না- সে বিষয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এই ১০৫ লাশের পরিচয় অশনাক্ত রেখেই শেষ করা হলো ডিএনএ পরীক্ষা।

রানা প্লাজা ধসের প্রায় এক বছরে অশনাক্ত ৩২২ জনের মধ্যে মোট ২০৬টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া ১১টি লাশের ক্ষেত্রে দুজনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল গত মঙ্গলবার শ্রম মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়।

শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শেষ দফার পরীক্ষায় আরও সাতটি লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। এঁরা হলেন পাবনার হাসিনা, ঢাকার রেখা, চুয়াডাঙ্গার শিরিন আক্তার, রংপুরের রাবেয়া, দিনাজপুরের মোমিনুল ইসলাম ও ফজিলা খাতুন এবং গোপালগঞ্জের রাফেজা। এ সাতজনের পরিবার এখন সহায়তা পাবে।

এখনো ১০৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগে মৃত ব্যক্তিকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের আগে অবশ্যই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার সুপারিশ করেছে জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি। এদিকে জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে দেওয়া পাঁচ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে- ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াই আট শতাধিক মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনাক্ত করার প্রক্রিয়া হিসেবে অনেক সময় পরিধেয় কাপড়, অলংকার, পকেটে পাওয়া দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানে কোনো ভুল হয়ে থাকতে পারে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব পরিবার ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াই মৃতদেহ গ্রহণ করেছে, সেসব পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে। যদি তাদের কারও ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে ল্যাবের তথ্যভান্ডারের সংরক্ষিত অশনাক্ত কোনো মৃতদেহের ডিএনএ প্রোফাইলের মিল পাওয়া যায়, তাহলে মৃতদেহ শনাক্তকরণে সম্ভাব্য ভুল শনাক্ত করা সম্ভব হবে। আর শুধু ভুলভাবে শনাক্ত মৃতদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষা করলে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সব তৈরি পোশাক কারখানায় সদস্যদের পর্যায়ক্রমে একটি ডিএনএ তথ্যভান্ডারের আওতায় আনা এবং নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক কর। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি অন্যান্য সংস্থায় নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে (বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ পেশার ক্ষেত্রে) ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা।

(ওএস/এটি/এপ্রিল ১০, ২০১৪)