বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে মানিকপুরে রয়েছে ইতালি গ্রাম নামে আলিশান এক পল্লী অঞ্চল। মানিকপুর ইউনিয়নের মধ্যে বাহেরচর, কল্যানপুর, মানিকপুর, উলুকান্দি, মায়ারামপুর, দোয়ানী, চারানী, কাপাসকান্দি নামে ৮ টি গ্রামে বাস করে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। শিক্ষার হার যেমন তেমন ৮ টি গ্রামে রয়েছে প্রায় শতাধিক ইতালি প্রবাসি বাঞ্ছারামপুরের মানুষ। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতি মাসে প্রায় ৪ কোটি টাকার রেমিটেন্স বাংলাদেশ পাঠাচ্ছে। এই গ্রামের জীবনমান যাতায়াত ব্যবস্থা, মৌলিক চাহিদা গুলো মেটান বেশ উন্নত মানে। মানিকপুরে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই ইউনিয়নে বেকারদের সংখ্যা প্রায় নেই বল্লেই চলে।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার স্থানীয় তফসিলী ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা, কৃষি এবং বেসরকারি ইসলামী,ইউ,সি,বি, ব্রাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া সহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার আইএমই পদ্ধতিতে পাঠানো কি পরিমাণ বৈদেশিক রেমিটেন্স নিয়ে কথা বললে উল্লেখিত ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার ৯ টি উপজেলার ১১৭ টি গ্রাম। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক রেমিটেন্স আসে। যা প্রায় টাকার অঙ্কে ৪ কোটির কাছাকাছি। বছরে ৪৮ কোটি টাকার রেমিটেন্স।

এ প্রসঙ্গে মানিকপুরের ইতালি গ্রামের স্থানীয় অধিবাসী, জেএফসি ফ্যানের বাংলাদেশের একমাত্র পরিবেশক ও বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এই ইতালি গ্রামে জন্ম নিয়ে গর্বিত। এটা কতোটা আনন্দের তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তিনি বলেন, সেই ১৯৮০ সালের পর থেকে প্রথমে আলহাজ্ব করিম (ইতালি করিম), বাকিউল ইসলাম বাক্কি, নজরুল, আলম, শাহ জাহান, ছগির, মজিবুর প্রমুখ ইতালি যেয়ে রক্তের টানে একে একে আত্বীয় স্বজন ইতালি নেওয়া শুরু করেন। পর্যায় ক্রমে ৯০ ও ২ সালে দেখা যায়, প্রায় ১ শত ২০ জনের উপরে মানুষ ইতালি প্রবাসি হয়ে গেছেন’।

মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান বায়ু জানান, ‘আমার এলাকায় শান্তিপ্রিয় ছোট ছোট ৮ টি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে মানিকপুর তথা ইতালি গ্রাম। মানুষ এই গ্রামের প্রায় ঘরে ঘরে ইতালি প্রবাসি থাকায় জনগণ এই ইউনিয়টিকে ভালবেসে নাম দিয়েছে ইতালি গ্রাম’।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহি যানান, ‘আমার ভাল লাগে যখন ঢাকা থেকে প্রায়ই এই গায়ে বেড়াতে এসে দেখি স্থানীয় জনগনের মধ্যে কোন অভাব অভিযোগ নেই। হয়তো খোজ নিলে জানা যাবে, বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ হাজার গ্রামের মধ্যে আমার মানিকপুর ইউনিয়নের ইতালি গ্রাম নামে খ্যাত এই ৮টি গ্রামের জনগণ বিদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা পাঠাচ্ছে। বিদেশে শরীরের রক্ত পানি করে নিয়মিত সেই টাকা দেশে পাঠাচ্ছে। এতে দেশ-জাতি উপকৃত হচ্ছে। এরা হলেন সোনার বাংলার সোনালী মানুষ।আজ এদের মতো প্রবাসীদের আয় দিয়েই পদ্মা, মেঘনা বা ফ্লাইওভার গড়ে তুলছেন সরকার।

ইতালি গ্রামে আলহাজ্ব আবদুল করিমকে সবাই চেনেন ইতালী করিম নামে। তিনি আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির পরিসর হোয়াটস্আ্যপ-এর মাধ্যমে বুধবার রাতে বলেন, ‘যদি পারতাম এলাকার সব্বাইকে ইতালি এনে এদেশে কাজ করে সে টাকা বাংলাদেশে পাঠাতাম। বেকার থাকতে কাউকে দিতাম না।সবাই যদি উন্নত জীবনমান ও মানুষের ৮ টি মৌলিক চাহিদা সুচারুরূপে পালন করতে পারে তবে কার না ভাল লাগে! আমার মাধ্যমে এই যাবত এই পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন ইতালি গ্রাম খ্যাত মানিকপুর ও পার্শ্ববর্তী ভবনাথপুর ও বাঞ্ছারামপুরের ভাই ব্রাদার ইতালি এসে বিভিন্ন শহরে ভালভাবে কাজ করছেন।

(এফকে/এএস/মার্চ ১৬, ২০১৭)