এস.এম.মুনিরুজ্জামান : ইসলামের(শান্তি) স্বপক্ষে অবস্থানের জন্য 'অরাসাতুল আম্বিয়া' হিসাবে বাইজীদ বোস্তামী (রঃ) এর মুরিদ দরবেশ শেখ আওয়াল (রঃ) এর বংশধরের যোগ্য উত্তরসূরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম আবির্ভাব ১৯২০ সাল ১৭ই মার্চ। ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠায় শুভযাত্রা শুরু হয়; যার বাস্তব সৃষ্টি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালে কোলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভ করে নিজ বঙ্গাঞ্চলের নিরীহ বাঙালির সুখ-দুঃখের কথা ভাবতে থাকেন।

নিজ জীবন চরাচরে নিঃস্বার্থভাবে অন্যের উপকারে নির্বিঘ্নে নিবেদন করতেন নিজেকে। মৌদুদীবাদ গোষ্ঠীর প্রধান নায়ক ড. মওদুদ আবিস্কার করলেন ইসলাম বিদ্বেষী নীতি-প্রথমতঃ পাগলামী (Fanaticism), দ্বিতীয়তঃ উন্মাদনা (Fundamentalism)। হেড কোয়ার্টার হিসেবে নির্বাচন করলেন নিজ মাতৃভূমি (পশ্চিম পাকিস্তান)কে। গঠন করলেন ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে জীবন ধ্বংসকারী, শান্তি নষ্টকারী মৌদুদ বাহিনী।

মৌদুদ বাহিনীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলো-শান্তিময় ঐতিহ্যপূর্ণ ভারতীয় উপ-মহাদেশ। বিভক্ত হলো ভারত এবং পাকিস্তান। ভারতের পরিচিতি হলো-সিন্দু নদের নাম করণে, পরিবর্তিত রূপ হিন্দুস্তান নামে। আর পাকিস্তান পরিচিত হলো পাকি নদীর নাম করণে, পাকিস্তান নামে। মৌদুদগোষ্ঠী ধর্মকে বাণিজ্যিকি করণের প্রথম পদক্ষেপে বিজয় লাভ করল। কারণ ড. মৌদুদ জানতেন, ধর্মকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হলে সনাতন ধর্মের তীর্থ ভূমি ভারতকে পৃথক করা জরুরী। আভ্যন্তরীন পরিগ্রহ রূপ নিল; পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান বঙ্গাঞ্চল অর্থাৎ বাংলা ভাষা-ভাষী হওয়ায় পরিচিত হলো পূর্ব বাংলা অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান। সর্বমূলে পাকিস্তানী রাষ্ট্র।

পূর্ব বাংলার নিরীহ বাঙালীর উপর শুরু হলো উর্দ্দু ভাষার অনুসারী পাকিস্তানী মৌদুদীগোষ্ঠীর অত্যাচার এবং অনাচার। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালী জাতির মুক্তির অন্বেষায় যোগ দিলেন পূর্ব বাঙলায় গঠিত রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী মুসলিমলীগে। রাজনৈতিক গুরু হিসাবে বেছে নিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। প্রেরণা আদর্শ গুরু অনুকরণীয় হিসাবে শ্রদ্ধা করতেন মহাত্মা গান্ধীকে। শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মীয় গবেষণা কার্যক্রম চলমান, উদ্দেশ্য পাকিস্তানী মৌদুদগোষ্ঠীর হাত থেকে নিরীহ বাঙালী জাতিকে উদ্ধার এবং উপহার দেয়া ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে জাতির মুক্ত জীবন। আওয়ামী মুসলিম লীগকে অসাম্প্রদায়িক রূপ দিলেন সকলের উপযোগী করে 'আওয়ামীলীগ' নামে। ১৯৫৫ সালের ২৩ শে জুন রোজ গার্ডেন থেকে যাত্রা শুরু হলো আওয়ামীলীগ নামক অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠনের। সভাপতি হলেন মাওলানা ভাষানী, সাধারণ সম্পাদক হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আওয়ামীলীগের সাহসী ভূমিকায় স্থান নিলেন বাঙালী জাতির মুক্তি সংগ্রামের সকল কর্মকান্ডে দরবেশ শেখ আওয়ালের বংশধরের যোগ্য উত্তরসূরী শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৯ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী রেসকোর্স ময়দানে ৬ দফা ভিত্তিক ১১ দফা দাবীতে গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে মুক্তির পর শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর কাছে সম্মাননা পরিচিতি হিসেবে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি লাভ করেন । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালী জাতির স্বাধীন-মুক্ত জীবন উপহার দিতে কোরআনের আলোকে প্রস্তুত করেন গবেষণালব্দ মূল নীতি-মুক্ত জীবন ব্যবস্থা নীতি 'মুজিববাদ'। যে নীতি খুরধার অস্ত্রের ন্যায় বিনাশ করতে সক্ষম; ইসলাম বিদ্বেষী নীতি মৌদুদীবাদকে। বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে স্বপ্ন দেখালেন স্বাধীনতার। মুজিববাদকে ঘোষণা করলেন মহান স্বাধীনতার মূলনীতি হিসাবে। মূলনীতি সমূহ : প্রথমত- বাঙালী জাতীয়তাবাদ; দ্বিতীয়ত- অসাম্প্রদায়িকতা; তৃতীয়ত- সমাজভিত্তিক অর্থনীতি চালুকরণ এবং চতুর্থত- ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত মূলনীতিকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালী জাতিকে একত্রিত করে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন এবং বাঙালী জাতিকে রাজনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধু উত্তাল বাঙালীকে পথ নির্দেশনা দিতে থাকেন এবং ২৬ শে মার্চ’ ৭১ বাঙালী জাতির হাজার বছরের পাওয়া মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রামের পর পরাধীন বাঙালী পেল স্বাধীনতা; মুক্ত হলো পাকিস্তানী মৌদুদ গোষ্ঠীর অত্যাচার-অনাচার থেকে; বঙ্গবন্ধু উপহার দিলেন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ; আমরা পেলাম মুক্ত স্বাধীন মাতৃভূমি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মহা নায়ক, স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্থপতি, ভূষিত হলেন বাঙালী জাতির পিতা হিসাবে। নিরীহ বাঙালী ফিরে পেল জাতির পিতার পথ নির্দেশনায় জীবনের পথচলা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গঠন করলেন স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকার। শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালী জাতিকে রাজনৈতিক মুক্তির সার্বিক কার্যক্রম। কিন্তু পরাজিত পাকিস্তানী মৌদুদগোষ্ঠী মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের হার মেনে নিতে পারেনি। ষড়যন্ত্র চলতে থাকে আমেরিকান শাষকগোষ্ঠীর মদদে; মৌদুদীবাদ প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম স্বাধীন বাংলাদেশে চলমান রাখার নিমিত্তে; বাঙালী জাতিকে এতিম করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর গবেষণা মূলনীতি ডাকাতিসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পরিকল্পনা। কিছুতেই সফল হচ্ছিলনা মৌদুদ গোষ্ঠীর এহেন ঘৃণ্য পরিকল্পনা। হেরি কিচিঞ্জারের মদদে পাকিস্তানী মৌদুদ গোষ্ঠী স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতাসহ রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার লোভ দেখিয়ে হাত করল মোস্তÍাক গংকে, পাকি এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিল তৎকালীন সেনাবাহীনির মেজর জিয়াউর রহমানকে। গোপনে সেনাবাহীনির পেট্রোল টিমকে ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক জিম্মি করলো জিয়াউর রহমান। পরিকল্পনা মেকিং গেইম বাস্তবায়নের দিন ধার্য হলো ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট। সুপরিকল্পিতভাবে পাকি এজেন্টরা বাংলার ক্ষমতা হাতে পেয়েও মাতৃভূমির সাথে, নিরীহ জাতির পিতার সাথে, নিজ স্বত্বার সাথে বেইমানী পূর্বক অভিযান শুরু করলো বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ীতে। নৃশংসভাবে হত্যা করলো বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাইকে। ডাকাতি করে নিল বাঙালী জাতির মুক্ত জীবন ব্যবস্থা নীতি। চলমান বাঙালী জাতি; সদ্য লাভ করা স্বাধীন বাংলাদেশ ভূতের পায়ের মতো পেছনে ফিরে গেল। বাঙালী হলো এতিম; দেশ হলো অশান্ত; জাতির কাঁধে চেপে বসলো পাকিস্তানী মৌদুদীবাদের কালো থাবা। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসলেন-জাতীয় খুনী, আত্মস্বীকৃত বেইমান, পাকি এজেন্ট, মৌদুদীবাদের অনুসারী জিয়াউর রহমান।

'নিজ আত্মাকে করে বলিদান; মহা মানব স্বীকৃতি পেলেন-
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

লেখক : চেয়ারম্যান, আইন ও অধিকার বাস্তবায়ন ফোরাম

[(ভারতীয় উপমহাদেশ পরবর্তী দেশভাগ ১৯৪৭-১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট)
সূত্রঃ ভূমিকায় পাকিস্তান
উদ্দেশ্যঃ মৌদুদীবাদ প্রতিষ্ঠা পূর্বক দ্বীন-ধর্ম কোরআনকে বিক্রি পূর্বক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা।]