শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের বোরকা, পাঞ্জাবি, টুপি, দাড়ি নিষিদ্ধ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিল্পব বিকাশ পাল চৌধুরীর অপসারণ দাবিতে রবিবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা ও যড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ।

শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলা সদরের আঙ্গারিয়াস্থ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বিল্পব বিকাশ পাল চৌধুরী প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে বোরখা, টুপিসহ ধর্মীয় পোষাক পরে স্কুল কলেজে আসা শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করে আসছে। এমন কি যে সকল শিক্ষক ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে তারাও অধ্যক্ষকের কাছে তারাও নানান বৈষ্যমের শিকার হতে হয়। এই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরই প্রতিক্রিয়ায় রবিবার সকালে শরীয়তপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জন করে অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হোসাইন খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হান্নান ও পালং মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ খলিলুর রহমান সহ পুলিশের একটি দল উভয়ের সাথে সমঝোতা আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

শরীয়তপুর সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাবিকা সুলতানা পাকিজা, জুয়েল রানা, নবম শ্রেণীর তামান্না ও দশম শ্রেণীর মোঃ আরিফসহ শিক্ষার্থীরা বলেন, যে সকল শিক্ষার্থীরা রোরকা, পাঞ্জাবী ও দাড়ি টুপি পড়ে স্কুল ও কলেজে আসে তাদের সাথে অধ্যক্ষ বিল্পব বিকাশ পাল চৌধুরী খারাপ আচরণ করে। অধ্যক্ষ স্যার আমাদের উদ্দেশে বলেন কোন ছাত্রী বোরকা পড়ে আসলে তার বোরকা ছিড়ে ফেলা হবে। পাঞ্জাবী ও টুপি পড়ে আসলে তাকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হবে। তিনি এ্যাসেম্বলিতে শুধু গীতা পাঠ করান কিন্তু কোরআন তেলওয়াত করানো হয়না। তাই আমরা এই অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করি।

শরীয়তপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মো. ওয়াহিদুজ্জামান কোতোয়াল বলেন, কলেজে ক্লাস শুরুর পূর্বে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত আমি নিজে করি এবং গীতা পাঠও করা হয়। কিন্তু কোরআন তেলওয়াত বাদ দিয়ে শুধু গীতা পাঠ করানো হয়, এ অভিযোগটি অসত্য।

শরীয়তপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বিল্পব বিকাশ পাল চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করে আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। তাদের অভিযোগের বিষয়ে আন্দোলনের পূর্বে আমাকে জানানো হয়নি। তাদের আন্দোলন অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে শিক্ষার্থীদের ইন্ধন জুগিয়েছে বলে আমি ধারনা করছি।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, শরীয়তপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সংবাদ পেয়ে আমি ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের অভিযোগ পুরটা সঠিক বলে মনে হয়নি। তার পরেও কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা বা কর্মীয় চর্চায় বাধা প্রদান করা যাবেনা মর্মে সতর্ক করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।

(কেএনআই/এএস/মার্চ ১৯, ২০১৭)