বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন


বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্তৃক সেই প্রতিষ্ঠানের নারী শিক্ষার্থীর প্রতি সহিংসহার সংবাদগুলো গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছে। যা শিক্ষক সমাজের জন্য অত্যন্ত কলঙ্কজনক এবং বর্জনীয়। ভাবতে অবাক লাগে– শিক্ষক নামক ‘গুরুজন’ দ্বারা এই জঘন্য কাজটি কী করে সম্ভব?

প্রায় প্রতিদিনই এই ন্যাক্কারজনক বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিবেকসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে চলেছেন। তাদের এই আন্দোলন অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ। তারুণ্যের সবুজ-নির্মল এই আন্দোলন চিন্তাকে আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা বারবার স্যালুট জানাই, সম্মান জানাই।

কিন্তু বারবার প্রশ্ন জাগে- নৈতিকমূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকলে পরে সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীর প্রতি পিতাতুল্য শিক্ষকের কুদৃষ্টি বিষাক্ত হয়ে তার শাখা-প্রশাখা ছড়ায়!

ইদানিং কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথাকথিত সেই শিক্ষকদের মানসিক বিকলতা দেখা দিয়েছে। তার অর্থ দাঁড়ায়– ভেতরে ভেতরে তারা এতটাই পাশবিক হয়ে তৈরি হয়ে আছেন যে তাদের এই ঘৃণিত দিকটিকে তারা কিছুতেই অনুধাবন করতে পারছেন না।

চিহ্নিত শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত বা চাকুরিচ্যুতকরণই শেষ কথা নয়। শিক্ষকদের এই মানসিকবৈকল্য দূরীকরণে কিছু পদক্ষেপ নেয়া অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে। সেই পদক্ষেপগুলোর অন্যতম উদ্যোগ হতে পারে- সেই শিক্ষকদের কাউন্সিলিং বা আত্মসংশোধনীর এর মাধ্যমে জীবনের এই অন্ধকার দিক থেকে আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসা। সর্বক্ষণিক কড়া নজরদারির ভেতর তাদের সর্বশেষ একটি সংশোধনী সুযোগ দেয়া।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কালজয়ী ‘রক্তকরবী’ নাটকে যেভাবে নিষ্ঠুর, হিংস্র রাজাকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছিলেন।

ইন্টারনেট বা তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্য পণ্যগুলো আজ কুপথে যেতে আমাদের বারবার উৎসাহিত করছে। কোনো কোনো টিনএজ কিশোর থেকে শুরু করে পৌঢ় সব বয়সী পুরুষদের বিপদগামী করার জন্য ব্যাপক ইঙ্গিত প্রদর্শন করে চলেছে।

আপন বিবেক, বুদ্ধি, জ্ঞান, বিচক্ষনতা প্রভৃতি দ্বারাই মানুষ কিন্তু সেই সব অশুভ ইঙ্গিত বা কুপথের উৎসাহকে সমূলে ধ্বংস করতে পারেন। নিজেকে নিয়ে আসতে পারেন একজন সৃষ্টিশীল মানবিক মানুষ হিসেবে। যার দ্বারা সমাজের অশুভ, নিন্দনীয় কর্মগুলো কখনোই সম্ভব হবে না। যিনি হবেন একজন আদর্শবান শিক্ষক, আদর্শবান প্রেমিক, আদর্শবান পিতা, আদর্শবান স্বামী প্রভৃতি।

নারীর শ্লীলতাহরণ কখনোই শিক্ষকদের কাম্য হতে পারে না। আর শিক্ষার মতো মহৎ পেশায় থেকে এই কাজটি যারা করেন তারা আসলে শিক্ষক নন, মহৎ পেশার অধিকারী নন; তারা আসলে একজন নরপশু।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক পবিত্র। যা পিতৃতূল্য মর্যাদায় সসম্মানে অধিষ্ঠিত। ইন্টারটেনের বিপদগামী আলোকচিত্র বা চলচ্চিত্র কেন সেই পিতৃতূল্য শব্দটিকে গায়ে কালিমা লেপন করবে?

রবীন্দ্রনাথের এ লাইনগুলো আমাদের লোভ, লালসা, আত্মদম্ভ প্রভৃতি অশুভ শব্দাবলি মোচনের অনুপ্রেরণা হতে পারে– “বসিয়া আছ কেন আপন-মনে,/ স্বার্থনিমগন কী কারণে?/ চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি,/ ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি/ প্রেম ভরিয়া লহো শূন্য জীবনে।”

লেখক : সাংবাদিক, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, সিলেট ডিভিশন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।