ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদী উপজেলার মহাসড়ক, সড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, গ্রামীণ সড়ক ও শহরের অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায়  দেড় থেকে দুই হাজার অনুমোদনহীন ইজিবাইক। রিচার্জেবল ব্যাটারী চালিত ওই সব যান চালকরা একদিকে যেমন অদক্ষ, তেমনি ট্রাফিক আইন সম্পর্কেও তাদের কোনো ধারণাই নেই।

এই অবস্থায় প্রায়ই ইজিবাইক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গত দুই মাসে ঈশ্বরদীতে প্রায় ২৫ টি ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, কোন নিয়মনীতি না থাকায় ইজিবাইক গুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করে শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করছে। শহরের চলাচলের জন্য পৌরসভার লাইসেন্স বা অনুমোদনের প্রয়োজন হলেও তাও মানছে না অধিকাংশ চালকরা। ইজিবাইকগুলো শহরের রাস্তায় এলোপাতাড়ি চলাচলের ফলে যানজটের সৃষ্টি হলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় অসহায়। কেন অসহায়, এ বিষয়ে তারা কোন কথা বা বলতে রাজী হননি।

সরেজমিন দেখা যায়, ঈশ্বরদী বাজারের প্রধান ফটকের অদূরে সারিবদ্ধভাবে রাস্তার উপরে অটোবাইক থামিয়ে চালক ইচ্ছা মতো যাত্রী উঠানো-নামানো করে। ফলে রাত-দিন সবসময় প্রধান সড়কে তীব্র যানজট লেগেই আছে। এছাড়া শহরের চাঁদ আলী মোড়, ঠাকুরবাড়ির সামনে, রেলগেট এলাকা, পাকশীর রূপপুর মোড়, দাশুড়িয়া গোলচত্বরসহ যত্রতত্র রাস্তার উপর ইজিবাইক দাঁড় করিয়ে রাখায় যানজটের তীব্রতা ক্রমশ: বাড়ছে।

ঈশ্বরদী পৌরসভা সূত্রে জানা যায়,২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঈশ্বরদী পৌরসভা থেকে ৫৭৫টি অটোবাইক লাইসেন্স গ্রহন করেছে। সঠিক হিসেব জানা না থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের দাবী দেড় থেকে দুই হাজার অটোবাইক ঈশ্বরদীতে রয়েছে। পৌরসভার লাইসেন্স শাখার প্রধান জালাল উদ্দিন জানান, অটোবাইকের লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নের জন্য ইতিমধ্যে শহরে মাইকিং করা হয়েছে। অটোবাইকের লাইসেন্স ফি ৮১৫ টাকা ও নবায়ন ফি ৪৭০ টাকা। লাইসেন্স গ্রহণ বা নবায়ন যথাসময়ের মধ্যে না করলে অনুমোদনহীন বাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলা হলেও সেটা পৌর কর্তৃপক্ষ করবে না এব্যাপারে জনমনে সন্দেহ রয়েছে।

ঈশ্বরদী অটোবাইক চালক সমিতির সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান জানান, অটোবাইক এখন রিক্সার বিকল্প হিসেবে চলাচল করে। এটি সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাহন। পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের মোড়ে মোড়ে রিক্সা দাঁড়ানোর জন্য যেভাবে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন, সেইভাবে অটোবাইকের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দিলেই রাস্তায় কোন অটোবাইককে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। এতে যানজটের কবলে পরতে হবে না শহরবাসীকে।

ঈশ্বরদী অটোবাইক মালিক সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী জানান, অটোবাইকের জন্য পৃথক কোন স্ট্যান্ড না থাকায় বাধ্য হয়ে চালকরা রাস্তায় যাত্রী উঠা-নামানোর কাজটি করে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে স্ট্যান্ডের জন্য দাবি জানিয়েছি। শহরে স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা হলেই অটোবাইকের জন্য আর যানজটের সৃষ্টি হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্বরদী শহর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জানান, অবৈধ অটোবাইক, অটোরিক্সা ও ব্যাটারিচালিত রিক্সার সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় তা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর। শহর থেকে অবৈধ যানবাহন সরানোর দায়িত্ব পৌরসভার।

ঈশ্বরদী পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাঈদ হাসান শিমুল জানান, ইতিপূর্বে শহরের অবৈধভাবে চলাচলকারী অটোবাইকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় অটোবাইক আটক ও চালককে জরিমানা করা হয়। অটোবাইকের কারণে শহরে তীব্র যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অটোবাইকের জন্য আলাদা একটি স্ট্যান্ড নির্মাণের দাবি চালকরা দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছে। বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে।

(এসকেকে/এএস/মার্চ ৩১, ২০১৭)