নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের নাগ ফজলী আম স্বাদে গুণে অনন্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ অঞ্চলের কৃষকরা কম বেশি প্রত্যেকের বাড়িতে ২-৩টি করে নাগ ফজলী আম গাছ লাগিয়েছে। এক কথায় প্রায় প্রতিটি কৃষকের বাড়ি বাড়ি এই জাতের আম এখন চাষ হচ্ছে। আমের দাম থাকায় আমচাষীরাও বেশ খুশি।

একটি নাগফজলী আমের ওজন ৩ শ’ থেকে ৪শ’ গ্রাম পর্যন্ত। পাতলা চামড়া এবং সরু বিচি (আঁটি) যা অন্যান্য আমের চেয়ে আলাদা। মিষ্টতার দিক দিয়ে ন্যাংড়া ও আম্রপালি আমের সমতুল্য। এ আমে কোন আঁশ না থাকায় খেতে খুবই সুস্বাদু। আম পাকার পরও শক্ত থাকায় সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব। নাগফজলী আম বাংলাদেশে শুধুমাত্র নওগাঁ জেলার ধামইরহাট ও বদলগাছি উপজেলায় বেশি করে চাষ হচ্ছে। তবে বর্তমানে পার্শ্ববতী পত্নীতলা উপজেলায় এ আমের বিস্তার লাভ ঘটেছে। অনেকে মনে করেন এ আমের নিচের দিকে নাকের মত বা সাপের ফোঁনার মত চ্যাপ্টা হওয়ায় এর নামকরণ হয়েছে নাগফজলী।.


আম চাষীদের কাছ থেকে জানা যায়, নাগফজলী আম ১৯৬৭ সালে আফতাব হোসেন ভান্ডারীর মাধ্যমে ধামইরহাট উপজেলায় বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে বন বিভাগের এমএলএসএস পদে কর্মরত আফতাব হোসেন ভান্ডারী জানান, তার দাদার বাড়ি একই জেলার বদলগাছি উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামে। ভান্ডারপুর গ্রামের তৎকালীন জমিদার খুকুমনি লাহিড়ীর কাছ থেকে তার দাদা এ আমের জাত সংগ্রহ করেন। জমিদার খুকুমনি লাহিড়ী ভারতের কলকতা থেকে এ আমের জাত সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে আফতাব হোসেন ভান্ডারী জোড় কলমের মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ৪৫ বছর পূর্বে ধামইরহাট উপজেলায় এ আমের বিস্তার ঘটায়। বর্তমানে উপজেলার মনিপুর, রামরামপুর, আঙ্গরত, চকময়রাম, হরিতকীডাঙ্গা, হাটনগর, পিড়লডাঙ্গা, শিবরামপুর, মইশড়, জয়জয়পুর এলাকায় ছোট বড় প্রায় শতাধিক নাগফজলী আমের বাগান রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার সর্বত্র কম-বেশি এ আমের চাষ হচ্ছে। জোড় কলমের মাধ্যমে এ আমের চারা রোপন করার ১-২ বছরের মধ্যে গাছে মুকুল আসে। গাছের বয়স ৩-৪ বছর হলে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৪-৫ মণ আম পাওয়া যায়। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে কৃষক পর্যায়ে এ আম প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা দরে কেনা বেচা চলছে। উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের আমচাষী আব্দুল কাদের জানান, আগে এ আমের চাহিদা না থাকলেও এখন আম পাকার আগেই বিভিন্নস্থান থেকে লোকজন আম কেনার জন্য অগ্রিম বায়না দিচ্ছেন। হাটনগর গ্রামের আমচাষী আবু সাঈদ বলেন, রোগবালাই কম থাকায় এ আম চাষ করা সহজ ও লাভজনক। যারা একবার এ আমের স্বাদ গ্রহণ করেছে পরবর্তীতে আবারও সংগ্রহের জন্য কৃষকদের নিকট ধরনা দিচ্ছেন। এ জেলার বাইরে এ আমের তেমন কোন পরিচিতি না থাকায় দেশবাসী এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারছে না। তবে বর্তমানে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অধিবাসীরা যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করছেন তাদের মাধ্যমে এ আমের স্বাদ গুন অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা গ্রহণ করছেন। বর্তমানে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এ আমের চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধামইরহাটে আমের আড়তগুলো থেকে ব্যাপক পরিমাণে এ আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
(বিএম/এএস/জুন ১৯, ২০১৪)