চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : গমের পর বোরো ধান ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় প্রায় ৩শ হেক্টর জমির বোরো ধান ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়েছে। কৃষকরা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। আর ধানের ফলনে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মাঠের পর মাঠের ধান গাছের থোড় শুকিয়ে যাচ্ছে। ছত্রাকজনিত রোগ ব্লাষ্টে ধান ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রকৃতির উপর কারও হাত নেয়। কৃষকরা বলছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উদাসিনতার কারণে বারবার এমনটি ঘটছে। জেলার আলমডাঙ্গায় বেশি ধানের জমিতে ব্লাষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে।

জেলার ৩৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। সদর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় ২শ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১০ হেক্টর জমির ধান ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

চলতি বোরো মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিলো ৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু ধান চাষ হয়েছে ৫হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে। লক্ষমাত্রার চাইতে বেশি রোপন হয়েছে ১৪০ হেক্টর জমি। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ২৫৫ মে.টন।

হঠাৎ করে ছত্রাক জাতীয় নেক ব্লাস্ট রোগের সংক্রামণে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার বেগমপুর ও নেহালপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর, দোস্ত, সুবদপুর, কৃষ্ণপুর. বোয়ালমারি, কোটালী. হিজলগাড়ী, নেহালপুর, যদুপুরসহ আলমডাঙ্গা উপজেলায়, দামুড়হুদা উপজেলায় ও জীবননগর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামের মাঠের জমিতে ধানের থোড় (শীষ) শুকিয়ে যাচ্ছে। দুর থেকে দেখে মনে হচ্ছে ধান পেকে গেছে। নিকটে গিয়ে ধানের শীষ হাতে নিয়ে দেখা গেছে ধান সব চিটা।

চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর, হিজলগাড়ি, দোস্ত, আসমানখালি, মদনা, বাঁকা গ্রামের কৃষকরা বলেন, বোরো মৌসুমে ধান চাষ করি পরিবারের বছরের খাদ্য মওজুদ করা এবং বেচা বিক্রী করে ঋণশোধ দেবার জন্য। আমাদের সব শেষ। ধানের জমিতে গিয়ে দেখি শীষের নিচের অংশে কালো হয়ে পচে গেছে। আর উপরের শীষ শুকিয়ে গেছে। সম্পূর্ণ শীষ চিটে হয়ে গেছে। ধান না হলে আমরা মাঠে মারা যাবো।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের অভিযোগ, কৃষকের ধান রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হলেও কৃষি বিভাগের কাউকে সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। তারা কোনো খোঁজখবরও নেয়নি। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার উপক্রম শত শত একর জমির ধান। আগাম প্রচার প্রচারনা এবং পরামর্শ থাকলে হয়ত এতটা ক্ষতি হত না আমাদের। ফলে বছরের বাকি দিনগুলো পরিবারের সদস্যদের খাদ্য উৎপাদন যেমন ঘাটিত হবে তেমনি চাষাবাদ করতে যে ঋণ হয়েছে তা পরিষোধ করাও কষ্টসাধ্য হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের মাশরুর উপজেলার বেগমপুর, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ানের বিভিন্ন গ্রামের বলআষ্ট আক্রান্ত ধান ক্ষেত ঘুরে দেখেন। কৃষকদের ব্লাষ্ট প্রতিরোধে করনীয় কী তা জানান। ঔষধ ব্যবহার করে ছত্রাক নিয়ন্ত্রণ রাখার পরামর্শ দেন।

কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকর করে দায়িত্বরত কৃষি অফিসাররা বলেন, চাষিদেরকে আগে ভাগেই ঔষধ দেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। যারা গ্রহণ করেছে তাদের খুব একটা ক্ষতি হয়নি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নির্মল কুমার দে জানান, বৈরি আবহাওয়ার কারণে ধান গাছে ছত্রাকজনিত ব্লাষ্ট রোগ দেখা দিচ্ছে। কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় ঔষধ ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্লাষ্ট প্রতিরোধে যা করণীয় তা করা হবে। লক্ষ মাত্রা কিছুটা ঘাটতি দেখা দেবে।

(টিটি/এসপি/এপ্রিল ১১, ২০১৭)