চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর বড়াল নদীর তীরে বোঁথড় গ্রামে আজ বৃহস্পতিবার থেকে ৩দিনব্যাপী শুরু হয়েছে বিখ্যাত “চড়ক পূজা ও মেলা”। এই মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামটি হয়ে উঠে তীর্থ ক্ষেত্রের কেন্দ্র বিন্দুতে। সিন্ধু সভ্যতা থেকেই বোঁথড়ের এই চড়ক পূজা চলে আসছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে এই চড়ক মেলা চলে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। একটি চড়ক গাছকে কেন্দ্র করে চৈত্রের শেষ সপ্তাহে এই মেলা বসে । ২২ চৈত্র থেকে শুরু হয়, এখন চলে তিনদিন ব্যাপী। আর আগে চলতো পুরো বৈশাখ মাসব্যাপী। শনিবার শেষ হবে এই মেলা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেলা ও পূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে মহাদেব মন্দির পরিচালনা কমিটির আয়োজনে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও স্থানীয় সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে আইন শৃঙ্খলা সভা করা হয়।

এমন এক সময় ছিল, যখন মেলার দেড়-দুমাস আগেই বড়াল নদীর পাড়ের চাটমোহর উপজেলার বোঁথর গ্রামটিতে পড়ে যেত সাজ সাজ রব । বহু দুর-দুরান্ত থেকে দোকানীরা এসে তাদের পসরা সাজিয়ে বসতো। যাত্রা, সার্কাস, নাগরদোলা, যাদু প্রদর্শন, ঘোড়াদোলা ও পুতুল নাচে এক উৎসব আমেজে ভরে উঠতো গোটা চাটমোহর অঞ্চল। মেলার সেই জৌলুস আজ আর নেই, জাঁকজমকও আর নেই। তবুও আছে চড়ক গাছ, পাঠ ঠাকুর, বিগ্রহ মন্দির। তাই বছর শেষের এ মাসটিতে এখনো মেলা বসে, টিম টিম করে হলেও চলে তিনদিন ব্যাপি। অভাব দারিদ্রতা পশ্চাৎপদ বিল পাড়ের গ্রামীন মানুষের এক ঘেঁয়ে নিরানন্দ জীবনে সাময়িক ভাবে হলেও আনে কিছুটা বৈচিত্রের স্বাদ।

লোকশ্রুতি আছে, শক রাজাদের আমলে হাজার বছর আগে এটি শুরু হয়। সে মতে শুদ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মুক্তির বার্তা নিয়ে আবির্ভাব হয় মহাদেবের। সে সময়টিতে বর্ণ হিন্দু দ্বারা নিগৃহীত হতো নি¤œ বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়। এই পূজা বা মেলা উপলক্ষে সিংহল, বার্মা ও ভারত থেকে ৪৭ সালের আগে হাজারও ভক্তবৃন্দ আসতো বোঁথর গ্রামে। ব্রক্ষ্মণ্যবাদের বিলোপ ঘটলে বর্ণ হিন্দুরাও এতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে, রূপান্তুরিত হয় সর্বজনীন মেলায়। মূলত মেলা (পূজার) প্রচলন হয় বান রাজার আমল থেকে।

দোলবেদীতলা মহাদেবের আসনে তোলা হয় ২৮ চৈত্র, ৭ বৈশাখ নামানো হয়। এ সময় ১৩ জন বৃদ্ধাকে ৬ দিন উপোস করতে হয়। ১২৫২ বঙ্গাব্দে এক ভুমিকম্পে বিধ্বস্ত হয় বোঁথড় শিবমন্দির। সম্প্রতি মন্দিরটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে মন্দির থেকে মূল্যবান কষ্টি পাথরের শিবমূর্তি চুরি হলে ১৯৯০ সালে সিমেন্টের মূর্তি স্থাপন করা হয়।

এখনো বোঁথড় মেলার ঐতিহ্যবাহী আনুষ্ঠানিকতা ঠিকঠাকই আছে। শুধু কমেছে মেলার জৌলুস। এই মেলাকে কেন্দ্র করে একদা সর্ব ধর্মের সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে যে সম্প্রীতি লক্ষনীয় ছিল, এখন তা আর নেই। বাঙ্গালী লোকসংস্কৃতির এই বৃহৎ উৎসবটি এখন মহাকালের সাক্ষী হয়ে কোনোমতে টিকে আছে মাত্র। এই পূজা অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য মহাদেব মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিংকর সাহা সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।


(এসএইচএম/এসপি/এপ্রিল ১৩, ২০১৭)