শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের গোসাইরহাট বিনা অপরাধে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এক  শিশু শিক্ষার্থীকে অমানবিকভাবে পিটিয়েছে প্রধান শিক্ষক। শিশুটিকে তার সহপাঠিরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার নলমুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষকের নির্যাতনের শিকার রাকিব হোসেন ওই স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র এবং পাঁচকাঠি গ্রামের দরিদ্র চা বিক্রেতা মোজাহার সরদারের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার নলমুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ রতন তার বিদ্যালয়ের রাকিব হোসেন নামে ৬ষ্ঠ শ্রেনির এক শিক্ষার্থীকে কোন অপরাধ ছারাই অমানবিকভাবে পিটিয়ে আহত করায় শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্কুল ইউনিফর্মের একাংশ পরিধান করে স্কুলে না আসার অপরাধে শিশুটির উপর এই নির্দয় আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে। এলাকার অভিভাবকরা জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ রতন সব সময় শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন করে থাকেন। কয়েকমাস আগে নাজমূল হাওলাদার নামে একজন দশম শ্রেণীর ছাত্রকে মারপিট করার কারণে সে আর বিদ্যালয়ে এসে ক্লাস করতে পারেনি। কোন রকমে কোচিং ক্লাসে অংশ নিয়ে সে অসুস্থ্য অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাকিব বলেন আমি সকালে কোচিং করতে স্কুলে আসি। তখন আমার স্কুল ড্রেসের উপরের অংশ শার্ট পরে আসি এবং প্যান্ট ভেজা থাকায় একটি জিন্সের প্যান্ট পরে আসি। স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষকের সামনে পড়তেই তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, স্কুল ড্রেসের সাথে প্যান্ট পরিসনি কেন। আমার ড্রেস প্যান্টটি ভেজা থাকার কথা বলে স্যারের কাছে আমি ক্ষমা চাই। এরপর স্যার আমাকে চড় থাপ্পর মারতে থাকে। তখন আমি স্যারের পা ধরে মাফ চাওয়ার পরেও স্যার আমাকে লাথি মারতে থাকে এবং লাঠি এনে পেটাতে থাকে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী রতন বলেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিফর্ম নির্ধারণ করেছে। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র রাকিব মাঝে মধ্যেই ইউনিফর্ম ছাড়া ক্লাশে আসে। আজকেও ইউনিফর্ম ছাড়া ক্লাশে আসে। তাই আমি তাকে ক্লাশ থেকে বের করে দেই। তাকে কোন মারপিট করা হয়নি।

নির্যাতিত রাকিবের বাবা মোজাহার সরদার বলেন, আমি সামান্য একজন চা বিক্রেতা। আমার ৪ চারটি ছেলে মেয়েকে স্কুলে পড়াই। আমার ছোট ছেলে রাকিবকে আমি একটার বেশী ড্রেস কিনে দিতে পারিনি। স্কুল ড্রেসের সাথে থাকা প্যান্ট ময়লা হওয়ায় বুধবার বিকেলে ধুয়ে দেয়ায় তা ভেজা থাকায় রাকিব সেটি পরে স্কুলে যেতে পারেনি। এই অপরাধে হেড মাষ্টার আমার ছেলেটিকে ফুটবলের মত লাথি মেরে আহত করেছে। আমি এর ন্যায় বিচার চাই।

গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়াহ্ ইয়া খান বলেন, আমি সকালে নলমুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিশু শিক্ষার্থীকে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক পেটানোর খবর জেনে তাকে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভতির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তারপরেও আগামী রবিবার বসে উভয় পক্ষের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

(কেএনআই/এএস/এপ্রিল ১৩, ২০১৭)