বান্দরবান প্রতিনিধি : চিম্বুক বাগান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ম্রো নৃগোষ্ঠীর চাংক্রান উৎসব আনন্দে মেতে উঠেছে তরুন-তরুনীসহ আবাল বৃদ্ধ বণিতা। ম্রো সম্প্রদায়ের বর্ষবরনের এই আনন্দ ভাগাভাগী করে নেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। ম্রো সম্প্রদায়ের আদি সংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী গো-হত্যা নৃত্যে ছিল প্রধান আর্কষন। প্লুং বাঁশির সুরে ও ঢোলের তালে নারী-পুরষেরা সুরে ছন্দে মেতে ওঠেন।

চাংক্রান উৎসবে ম্রো নারীরা পুঁতিমালা তৈরি, কাপড় বুনোন ও লাঠি দিয়ে বিভিন্ন কায়দায় শক্তি প্রদর্শন এবং ঐতিহ্যবাহী গো হত্যা নৃত্য প্রতিযোগিতা অনুষ্টিত হয়। এ উৎসব দেখতে ও অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ম্রো সম্প্রদায় শত শত নারী-পুরুষ সকাল থেকে ভীড় জমায় চিম্বুক বাগান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।

অনুষ্ঠানে বীর বাহাদুর বলেন, সাংগ্রাই, বিষু, বিজু, চাংক্রান, বৈসু যে যেই নামেই ডাকুক না কেন মুলত বর্ষ বিদায় এবং বর্ষবরণকে ঘিরেই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। পাহাড়ী সম্প্রদায়ের এই উৎসব কোন একক উৎসব নয়, বর্তমানে এটি সার্বজনীন একটি প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। শান্তি চুক্তির আগে পাহাড়ে বসবাসরত জনগোষ্ঠি স্বাধিন ভাবে তাদের নিজস্ব আচার অনুষ্টান করতে পারে নি। কিন্তু চুক্তির পর ধর্মীয় হোক বা সামাজিক অনুষ্ঠান হোক এটি সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। বর্তমানে প্রতিটি জাতিস্বত্তা নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে স্বাধীন ভাবে উৎসব পালন করতে পারছে। যার কারণে সমগ্র বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এই জেলার পরিচিত সম্প্রীতির বান্দরবান হিসেবে। তিনি সকল ধর্ম,বর্ণের এবং জাতি গোষ্ঠিকে সাংগ্রাই ও চাংক্রান উৎসবের শুভেচ্ছা জানান। উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্নিবান চাকমা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক মংনুচিং মারমা,পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সিইয়ং ম্রো, অতিরিক্ত সিভিল সার্জন ডাঃ অং সুই প্রু, টংকাবর্তী ইউপি চেয়ারম্যান প্লুকান ম্রোসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ৫দিন ব্যাপী মাহা সাংগ্রাই পোয়ে অনুষ্ঠানের সুচনা হয় বর্ণাঢ্য র‌্যালী’র মধ্যে দিয়ে। বৃহস্পবিার সকালে মার্মা, চাকমা, ত্রিপুরা, খিয়াং, খুমী, ম্রো, বম, চাক, তংচংগ্যা,পাংখো ও লুসাইসহ ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠির নারী-পুরুষ বর্ণাঢ্য র‌্যালীতে অংশ নেয়। স্থানীয় রাজার মাঠ থেকে র‌্যালী শুরু করে জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়।পরে চিত্রাংক প্রতিযোগিতাসহ পাহাড়ী গুণিজন সম্মাননাও প্রদান করেন। পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি নেতৃত্বে র‌্যালীতে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক,পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়,পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষীপদ দাশসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও পাহাড়ী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহন করেন।

(এএফবি/এএস/এপ্রিল ১৩, ২০১৭)