অয়নের রং পেন্সিল

শিল্পকলা একাডেমিতে কিসের যেন জটলা দেখা যাচ্ছে। অয়ন রোজ সকালে এই পথ দিয়ে নতুন গলির দিকে যায়, প্রতিদিন একনজর এদিকে তাকিয়ে নিজ গন্তব্যে পা বাড়ায়, তবে আজ কেন জানি কাছে যেতে ইচ্ছে করছে।

অয়ন বিস্ময়ভরা চোখে চেয়ে আছে- ওর বয়সী কয়েকজন শিশু কি যেন আঁকছে, সুন্দর জামা কাপড় পরে এসেছে, কারো হাতে, কারো গালে আল্পনা, মন ভরে গেল অয়নের। কেউ জাতীয় পতাকা আঁকছে, কেউ ফুল, পাখি কেউবা গ্রামের মনোরম দৃশ্য আঁকছে। অয়ন মনে মনে ভাবছে- ইস, ও যদি এভাবে আঁকতে পারতো।

অয়ন পড়ালেখায় খুব মনোযোগী ছিল, ওর বাবা মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় শ্রেণীর গন্ডি পার হতে পারেনি । সেই থেকে জীবন যুদ্ধে নেমে পড়তে হয়, এই নিয়ে অয়নের দুঃখ নেই, তবে এসব প্রতিযোগীতা দেখলে ও খুব মন খারাপ করে।

কি সুন্দর করে আঁকছে ওরা, একেক জনের কয়েক ডজন রং পেন্সিল, স্কেল আরো কত কি! ওর চেয়ে ছোট এক বাচ্চাকে দেখে চমকে উঠলো, আরে! ও ভাল করে কথা বলতেই শিখেনি, অথচ কত মনোযোগ দিয়ে জাতীয় পতাকা আঁকছে, কি মায়াবি দৃশ্য, অয়নের খুব ইচ্ছে করছে জাতীয় পতাকা আঁকতে। লাল সবুজে মনের কথা বলতে।

দাঁড়িয়ে থাকলে পেট চলবেনা, ঘন্টা দুয়েক পর একাডেমি প্রাঙ্গন থেকে নতুন গলির দিকে পা বাড়ালো ।দ্রুত মুল সড়ক পেরিয়ে বড় ফার্মেসীর সামনে দাঁড়ালো, কুড়ানো কাগজের অধিকাংশই এই ফার্মেসীর সামনে থেকে সংগ্রহ করে। কাজ শেষে আনমনে হাটছে অয়ন, ভাবনায় কেবলই জাতীয় পতাকা। ইস, আমারতো এত টাকা নেই, কিভাবে রং পেন্সিল কিনবো! সমাধান নিজেই বের করলো, জাতীয় পতাকা আঁকতে হলেতো বেশী রং পেন্সিলের দরকার হয়না, একটা সবুজ আর একটা লাল রং পেন্সিল হলেই হবে, কেন যে এই কথা এতক্ষণ মাথায় এলোনা!

ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিলেই ঘুম পরী ছুঁয়ে যায়, অথচ আজ ঘুম আসছে না, এপাশ ওপাশ ফিরে ভাবছে কখন সকাল হবে।

অন্যদিনের চেয়ে ঘন্টাখানেক আগে বেরিয়ে পড়লো অয়ন।
যে করেই হোক কাগজ আর রংপেন্সিল কিনে বিকালে বাসায় ফিরবে, অন্য কোন ভাবনা ধারেকাছেও নেই । একটানা হর্ণ বেজে চলছে, অয়নের খেয়ালই নেই সেদিকে । চালক নেমে এসে সজোরে চড় বসিয়ে দিলো, ফকিরের বাচ্চা বয়রা নাকি!
ফকিরের বাচ্চা কথাটা ওর গায়ে লাগলো, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, নিজকে সামলে নিলো আবার, আরও বড় বিপদ হতে পারতো।

সন্ধায় বাসায় ফিরে এলো অয়ন, মা জড়িয়ে ধরে বললো- আজ এত দেরী কেন? বিপদ হয়নিতো বাজান , অয়ন মুচকি হেসে বললো- না মা, দেখ কি নিয়ে এসেছি।
তাড়াহুড়া করে ভাত খেয়ে বাশেঁর একটা স্কেল বানিয়ে রং পেন্সিল আর কাগজ নিয়ে বসলো।

প্রায় এক ঘন্টা চেষ্টায় অয়ন জাতীয় পতাকা এঁকে ফেললো, ওর চোখে মুখে কি যে আনন্দ, একবার পতাকায় হাত বুলাচ্ছে আবার বুকে জড়িয়ে ধরছে, মায়ের কাছে ছুটে গিয়ে বললো- দেখো মা, কি এঁকেছি…। মা বললো- হ, আমাগো জাতীয় পতাকা, আমগো প্রাণ।