সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, নদী খনন ছাড়া হাওর বাঁচানোর কোনো বিকল্প নেই।

সোমবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনে জেলা প্রশাসন আয়োজিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ আর কিশোরগঞ্জ এক ও অভিন্ন হাওরের জনপদ। এখানে কান্না শুরু হলে কিশোরগঞ্জ গিয়ে শেষ হয়। কারণ উজান থেকে হানা দেয়া পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জ গড়িয়ে কিশোরগঞ্জ যায়। এতে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। এখন হাওর ও বোরো ফসল বাঁচাতে সরকারি উদ্যোগে নদী খনন করতেই হবে। নদী খনন ছাড়া হাওরকে বাঁচানোর কোনো বিকল্প নেই।

রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে সুনামগঞ্জ এসেছিলাম। দেশ স্বাধীন করেই ঘরে ফিরেছি। সেই স্মৃতিময় স্থানে বারবার আসার চেষ্ঠা করেও তা সম্ভব হয়নি। এবার কারো দাওয়াতে নয়, নিজের তাগিদে দুর্যোগকালীন সময়ে আসলাম। কারণ ৭৪ বছরের জীবনে চৈত্রমাসে অকাল বন্যা দেখিনি। ইনশাআল্লাহ সকলের সক্রিয় সহযোগিতা নিয়ে এই মহাদুর্যোগেরও মোকাবেলা করবো।

ফসলহানির সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে স্থানীয় সুধীজনদের দেয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, সুনামগঞ্জের জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন দুর্নীতির বিপক্ষে সেখানে হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি কীভাবে হয় আমি তা ভেবে পাচ্ছি না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুর্নীতিবিরোধী না হয়ে বাস্তবে কথায় ও কাজে আপনারাই যে দুর্নীতিবিরোধী তা প্রমাণ করতে হবে।

হাওরের মানুষদের সহায়তা, হাওরের পয়েন্টে পয়েন্টে ইকোনমিক জোন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, আমরা হাওরের বাসিন্দা বলেই বিভিন্ন বিষয় থেকে বঞ্চিত হতে পারি না। আগামী ২মে সংসদ অধিবেশন বসলে হাওর এলাকার সব সংসদ সদস্যকে সমস্বরে সমস্যার কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

সভায় স্বভাবসুলভ রসিকতা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের সব ক্ষমতা মহিলাদের হাতে। প্রধানমন্ত্রী মহিলা, স্পিকার মহিলা, বিরোধীদলীয় নেত্রীও মহিলা। শুধু আমরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি পুরুষ।

জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন-অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, মহিবুর রহমান মানিক এমপি, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপি, অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম শাহানা রব্বানী এমপি, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি, রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এমপি, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোছা. নাজমানারা খানুম, বিভাগীয় ডিআইজি কামরুল আহসান, অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র আইয়ুব বখত জগলুল, জেলা পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান, মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ, মতিউর রহমান, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী আল-হেলাল প্রমুখ।

এর আগে দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জের মিঠামইন এলাকা থেকে লোফ্লাইং ফ্লাইটে রাষ্ট্রপতি অকালে তলিয়ে যাওয়া হাওর পরিদর্শন করে নেত্রকোনো যান। সেখান থেকে তিনি আবারও লোফ্লাইং করে সুনামগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলের তলিয়ে যাওয়া হাওর দেখে দুপুর আড়াইটায় সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইন হেলিপ্যাডে অবস্থান করেন। সেখান থেকে সরাসরি সার্কিট হাউসে চলে আসেন রাষ্ট্রপতি। বিকেল ৫টায় সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য যাদুঘর পরিদর্শন শেষে শিল্পকলা একাডেমি ভবনে সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মঙ্গলবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে আবার হাওর পরিদর্শন শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ১৮, ২০১৭)