আবু নাসের হুসাইন : ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারী প্রতিষ্ঠিত হয় তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। প্রয়াত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের স্বপ্ন, স্মৃতি ধরে রাখার পাশাপাশি দেশীয় সাংস্কৃতির মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন শাখায় সাংস্কৃতির কার্যক্রমকে গতিশীল রাখার পরিকল্পনা নিয়ে তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র-সংগঠনটির জন্ম হয়।

নাট্য প্রযোজনা ছাড়াও নাটক ও চলচ্চিত্র বিষয়ক ওয়ার্কশপ বা কর্মশালা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সৃজনশীল লেখকদের রচনা থেকে পাঠ্যচক্র সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, সৃজনশীল অনুষ্ঠান উপস্থাপন মূখ্য উদ্দেশ্য। নাটক, চলচ্চিত্র, চিত্রকলা, সংগীত, নৃত্য, সাংস্কৃতির বিভিন্ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

শিশু কিশোরদের মেধা বিকাশে তারেক মাসুদের শেঁকড় সন্ধানী কার্যক্রম হচ্ছে মূল বিষয়। তারেক মাসুদ মর্মান্তিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১৩ সালে মৃত্যু বরণ করেণ। মৃত্যুর এক বছর পর তারেক মাসুদের ছোট ভাই হাবিবুর রহমান মাসুদের নেতৃত্বে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠালগ্নে মাসুদ বাবু সভাপতি হিসেবে সংগঠনের মুল দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তারেক মাসুদ সাংস্কুতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাবিবুর রহমান মাসুদ বাবু উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে জানান, তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বর্তমান কমিটির সভাপতি বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী কামারুজ্জামান কাফী। গত চার মাস আমাদের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পুরাতন অনেক সদস্যই নিস্কৃয় হয়ে যায়। সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের পদটি এখনো বহাল আছে তবে প্রয়োজনে এই কমিটির নতুন কিছু সদস্যদের নিয়ে আমরা তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নতুন ভাবে প্রাণ দেবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

এ পরিস্থিতিতো পুরাতন সদস্যদের মুল্যায়ন করে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। নতুন সদস্যদের আমি তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্মানীয় সদস্য হিসেবে অন্তভুক্তির আহ্বান জানাচ্ছি। তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রর বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরো জানান, শিশু কিশোরদের মেধা বিকাশে একটি সাংস্কৃতিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। থিয়েটার ফিল্ম এ্যান্ড মিডিয়া স্কুলের কার্যক্রম আমরা যত তাড়াতাড়ি পারি শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করছি। তবে বিশাল এই কর্মযোগ্যের জন্য প্রয়োজন অর্থ সরকারী বে-সরকারী এবং ব্যাক্তিগত উদ্যোগে এ অর্থ যোগানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। সবার সহযোগীতা পেলে আমরা এ অর্থ সংগ্রহ করে তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রর এই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।

পাশাপশি নতুন সদস্য/সদস্যা আহ্বানের ভেতর দিয়ে একটি প্রয়োজনা ভিত্তিক নাট্যকর্মশালা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষনের মাধ্যমে একটি মঞ্চ নাটক নির্মিাণ করে উদ্বোধনী শো-বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমেীর জাতীয় নাট্যশালা এবং দেশে ও দেশের বাইরে নিয়োমিত মঞ্চস্থ করা পরিকল্পনা আমদের রেয়েছে। আমাদের কার্যক্রম ঢাকা থেকে শুরু হলেও ধীরে ধীরে দেশব্যাপী জেলা উপজেলাগুলোতে শাখা সংগঠন হিসেবে পরিচালিত হবে বলে আশা রাখছি। শেকড় সন্ধানী তারেক মাসুদের স্বপছোঁয়ার প্রচেষ্টা এবং লোকজ সাংস্কৃতির সংরক্ষন ও উন্নয়ন হবে আমাদের কাজের মূল লক্ষ্য।

এ ছাড়াও দেশজ সাংস্কৃতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতির সাথে মেলবন্ধন রাখার প্রচেষ্টায় তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দর প্রথম নাট্যপ্রযোজনা সুইজি ব্রায়ানাটের ‘দি গেইম’ অবলম্বনে নাটক ‘আশ্চর্য সুন্দর এই বেচেঁ থাকা’। নাট্য প্রযোজনাটি রূপান্তর, নাট্যরূপ এবং নিদের্শনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যত্ত বিভাগের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্র ওনাট্য গবেষক ড.রুবায়াৎ আহমেদ। একটি রূপান্তর নাটক হলেও দেশীয় নাট্যরীতিতে নাটকটি নির্মিত হয়েছিলো। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহড়া কক্ষে আমরা দীর্ঘ তিন মাস ধরে নাটকটি মহড়ার কাজ করেছি।

১১ এপ্রিল ২০১৪ আশ্চর্য সুন্দর এই বেঁচে থাকা’ নাটকটির শুভ উদ্বোধনী মঞ্চায়ন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। নাটকটি উদ্বেধনী এবং তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রর আত্মপ্রকাশ ঘোষনা করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার সভাপতি নাছিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রযোজিত নাটকটি ২০১৪ সালের বাংলাদেশ তথা ঢাকার সেরা নাটকের খ্যাতি অর্জনের স্বীকৃতি পায়। ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত এ নাটকের মোট ১৩ টি শো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী জাতীয় নাট্যশালা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। এই ধারাবাহিকতায় তারেক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ২য় প্রযোজনা কার্যক্রম হাতে নেই।

ড.সেলিম আলদীনের নাটক বিশু কুমািরের পুতুল নাচ। নাটকটি নির্দেশনা দেন সেলিম স্যারের ঘনিষ্ট ছাত্র অনিক ইসলাম । নাটকটি আমরা নিয়মিত মঞ্চায়ন করতে পারিনি। নানাবিধ বাস্তবতার কারনে আমাদে কার্যক্রম গতিশীলতা হারায় এবং স্থগতি হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা পারিপার্শক অবস্থান এবং অর্জিত সুখ্যাতি নিয়ে আমরা আবার সংগঠনটিকে নিয়ে ঘুরে দ্বারাতে চাই। এ জন্য প্রয়োজন সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ঐক্য এবং নির্ভরশীল ভালবাসা এবং কার্যক্রমের সঙ্গে থাকলে তারেক মাসুদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে।

(এএনএইচ/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০১৭)