লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : “গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়ায় সময়ের শিহরণ, গ্রীষ্মের খরতাপে রক্তিম জাগরণ”। গ্রীষ্ম এসেছে এ কী শুধু গরম আর খরতাপ দিয়েই উপলব্ধি করার বিষয়? একদমই না। গাছে গাছে রক্তিম জাগরণে কৃষ্ণচূড়া ফুলও যে গ্রীষ্মের সৌন্দর্য বার্তার উপমা।

বৈশাখের দুপুরে চারদিক যখম খা খা করছে, তখন বটের ছায়ায় কবির সুরে সুর মিলালে ক্ষতি কি, “কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে- তুমি আসবে বলে, রঙধনুটা মেঘ ছুয়েছে আকাশ নীলে- তুমি আসবে বলে”-
নগর জীবনের কর্মব্যস্ততায় হয়তো শিরদাঁড়া উচু করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়াকে পাশ কাটিয়ে গেছেন অনেকে। কিন্তু এক পলক দৃষ্টিতে যারা দেখেছেন রক্ত রাঙা একঝাক কৃষ্ণচূড়া ফুটে উঠতে; তারা কেবলই হয়েছেন পুলকিত। পুলক ছড়িয়েছে, ছড়াবে মনে প্রাণে। নতুন বছরে নতুন করে রাঙিয়ে যেতে কৃষ্ণচূড়ার সাজে মন সাজালে ক্ষতি কি? এতো কৃষ্ণচূড়ার ফুলে মুগ্ধ দৃষ্টি দেওয়ার দিন। মেঘলা আকাশ কিংবা মেঘমুক্ত। গাছের মগডালে জেগে ওঠা কৃষ্ণচূড়ার জুড়ি নেই বটে। সেই সঙ্গে যদি হালকা বাতাসের দোল খাওয়া দৃষ্টি চোখের কোণে আটকায় তাহলে উপভোগে বাদ যায়নি কিছু। আর যদি দেখা না হয়ে থাকে, সময়ের ব্যস্ততায় কিংবা চোখ এড়ানোর ফলে তবে সুযোগ তো রয়েছেই। সৌভাগ্যক্রমে নড়াইলের লোহাগড়ায় বিভিন্ন এলাকায় এ ফুলটির গাছ এখনও টিকে রয়েছে।

আমাদের দেশে মূলত দুই ধরনের কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটতে দেখা যায়। একটি আগুনের মত উজ্জল লাল, অন্যটি লাল ও সামান্য হলুদ। তবে লাল কৃষ্ণচুড়ার প্রাচুর্যই বেশি চোখে পড়ে। লাল হলদেটে রঙের কৃষ্ণচুড়া বর্তমানে বেশ বিরল। কৃষ্ণচূড়া গ্রীষ্মের অতি পরিচিত একটি ফুল। বাঙালীর কবিতা, সাহিত্য, গান ও বিভিন্ন উপমায় এ ফুলের কথা নানা ভঙ্গিমায় উঠে এসেছে। শোভাবর্ধন কারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রাম-বাংলার পাশাপাশি এখনও তার নড়বড়ে অস্তিত্ব নিয়ে কোনক্রমে টিকে আছে লোহাগড়া ছোট্ট শহরের পথে প্রান্তরে।

জানা গেছে, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাষ্কায়। ভীনদেশি এ ফুলের বৃক্ষগুলো আমাদের দেশে এসে নতুন নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ধারণা করা হয় রাধাঁ ও কৃষ্ণের নাম মিলিয়ে এ বৃক্ষের নাম হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মে যখন এই ফুল ফোটে, এর রূপে মুগ্ধ হয়ে ব্যস্ত পথচারীও থমকে তাকাতে বাধ্য হন। এ ফুলের সৌরভে শালিক, ফিঙ্গে, ঘুঘু সহ দেশি প্রজাতির নানা পাখি আজ মাতোয়ারা। প্রকৃতি প্রেমিক ও কবি সরদার গোলাম মোস্তফা বলেন,‘কৃষ্ণ চুড়া ফুল প্রকৃতির সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে। পথে প্রান্তরে দাড়িয়ে থাকা এই গাছগুলো শুধু শোভা বর্ধন করে না, মানব মনকেও আলোড়িত করে’।

(আরএম/এএস/এপ্রিল ২৭, ২০১৭)