জকিগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি : ঘরে বিদ্যুৎ নেই। অভাব অনটনের বড় সংসার। ৫ ভাই বোনের সবাই লেখাপড়া করছে। বাবা টেইলার্সের কাজ করেন। । এমন এক পরিবারের ছেলে হয়েও মেধা আর ইচ্ছাশক্তির জোরে সব বাধা জয় করেছে সুদ্বীপ রায়।

এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জিপিএ-৫ পেয়েছে সুদ্বীপ। সে জকিগঞ্জ পৌর এলাকার জকিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষায় অংশ নেয়। সুদ্বীপদের বাড়ি খলাছড়া ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামে। ভবিষ্যতে সে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ নিয়ে সে রয়েছে দুশ্চিন্তায়। সে জানে না কীভাবে তার চিকিৎসক হবার স্বপ্ন পূরণ হবে।

সুধাংসু রায় ও দিপালী রাণী রায় দম্পতির একমাত্র ছেলে সুদ্বীপ। তার চার বোনের সবাই মেধাবী । বাবা সুধাংসু রায় জকিগঞ্জ বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজের বারান্দায় বিনা ভাড়ায় চেয়ার টেবিল নিয়ে টেইলার্সের কাজ করেন। লুঙ্গি মশারী সেলাই করেন । সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য পৈতৃক সূত্রে পাওয়া কিছু জায়গা জমি বিক্রি করেছেন।

অদম্য মেধাবী সন্তানদের বাবা সুধাংসু রায় চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, সুদ্বীপ জেএসসিতেও জিপিএ-৫ পাইছে। তার চাইর (চার)বইনের(বোনের) তিন বইনও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাইছে। তারা এখন অনার্সে পড়ে। স্যার তারা আমার সুদ্বীপরে বিনা টাকায় পরাইছইন। তাইন তানর রেইন আমি কোনু দিন শোধ করতে পরতাম নায়।

সুদ্বীপের মা দিপালী রাণী রায় বলেন, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। ইচ্ছা থাকলেও পড়তে পারেননি। এখন ছেলে মেয়েকে পড়াতে চান। এত কষ্ট সত্ত্বেও ছেলে ভালো ফল করায় খুব খুশি। এই সাফল্যে খুশি হলেও ছেলের উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে দিপালী রাণী রায়ের। তিনি বলেন, ‘আমার অভাবের সংসার। এখন পড়ার খরচ আরও বাড়বে। আমি কীভাবে ছেলের আশা পূরণ করব।’

সুদ্বীপ জানায়, তার বড় দুই বোন এখন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা সংসার ও লেখাপড়া দুটোই চালিয়ে যাচ্ছে। মা, বাবা, বোনদের উৎসাহ ও শিক্ষকদের সহযোগিতা তাকে ভালো ফলাফল করতে উদ্বুদ্ধ করেছে । একদিকে সংসারের খরচ, অন্যদিকে পড়াশোনার খরচ বাবা মেটাতে পারতেন না। পরিবারে আর্থিক অনটন রয়েছে ঠিকই, তবে সে কখনোই স্বপ্ন থেকে পিছপা হয়নি। প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে সব বিষয়ে পুরো বই পড়েছি। তাই সাফল্য এসেছে।

প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা পড়ালেখা করত সুদ্বীপ। বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও সে সামনের সারিতে থাকত। বিতর্ক ও উপস্থিত বক্তৃতা তার প্রিয় বিষয়। স্কুলের বিতর্ক দলের সে ছিল অন্যতম সদস্য। হাফিজ মজুমদার ট্রাস্টের বৃত্তিসহ স্থানীয় সব বৃত্তিও পেয়েছে সুদ্বীপ।

সুদ্বীপ জানায়, তাকে পড়ালেখার বিষয়ে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল ওয়াহিদ, কৃপাময় রায়, তৈয়বুর রহমান, পার্থ চন্দ।

শিক্ষক তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘ ইচ্ছাশক্তি তাকে বহু দূর নিয়ে যাবে। সব প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে অদম্য মেধাবী সুদ্বীপের স্বপ্ন পূরণ হবে, আমরা সে প্রতীক্ষায় আছি’।

(এমএএ/এসপি/মে ০৬, ২০১৭)