প্রবীর সিকদার


টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার আলহাজ রমজান আলী উচ্চ বিদ্যালয়। ওই উচ্চ বিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন ওই বিদ্যালয়েরই সহকারি শিক্ষক গৌরাঙ্গ দত্ত। তিনি বিদ্যালয়কে ভালবেসে এবং ওই বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব যেন কোনো ভাবেই কিংবা কারো দ্বারাই হুমকির মধ্যে না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে ওই নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক বিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, একই অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপপরিচালক, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক-শিক্ষা, নাগরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নাগরপুরের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর। স্থানীয় ও প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ে ওই শিক্ষকের দায়ের করা অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলেই স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন আমার উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের স্থানীয় প্রতিনিধিকে।

একজন শিক্ষক তার প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ করতেই পারেন। আর সেই সব ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেবেন যথাযথ কতৃপক্ষ। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষক গৌরাঙ্গ দত্তের অভিযোগ তদন্তে টাঙ্গাইলের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছেন। সেই তদন্ত কমিটি যতো দ্রুত সম্ভব তদন্ত করে করে রিপোর্ট পেশ করবেন সেটাই বিধি। ওই তদন্ত যথাযথ না হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল তদন্তে নামতে পারেন। তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও বিধান রয়েছে।

শিক্ষক গৌরাঙ্গ দত্ত দুর্নীতি ও অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেছেন গত ১ এপ্রিল ২০১৭। তারপর থেকেই আলহাজ রমজান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনোদ চন্দ্র সরকার ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক ওই শিক্ষককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি প্রধানশিক্ষক ও সভাপতি কোনও নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে গত ১৭ এপ্রিল ৩০১৭ থেকে ওই শিক্ষককে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দিচ্ছেন গায়ের জোরেই। অভিযোগকারী শিক্ষককে জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘোরানোরও হুমকি দিয়েছেন তারা। ওই শিক্ষক গৌরাঙ্গ দত্ত ও তার পরিবারের উপর মানসিক নির্যাতন চালাতে তারা সম্ভাব্য সবকিছুই করছেন। এ ব্যাপারে ওই অভিযোগকারী শিক্ষক গৌরাঙ্গ দত্ত খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন, বিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটা যে সত্য তা সঠিক তদন্ত হলেই প্রমাণিত হবে। আর যদি অভিযোগ ভিত্তিহীন হয়, সেক্ষেত্রে অভিযোগ কারীর বিরুদ্ধে যথাযথ কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতেই পারেন। কিন্তু কোনো রকমের তদন্ত ছাড়াই গায়ের জোরে প্রধানশিক্ষক ও সভাপতি হাজিরা খাতায় তাকে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত রাখতে পারেন না। মজার বিষয় হল, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং কিংবা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শিক্ষক গৌরাঙ্গ দত্তকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও তিনি নিয়মিত বিদ্যালরে হাজির হচ্ছেন এবং শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করছেন। শিক্ষক গৌরাঙ্গ দত্ত হাজিরা খাতায় তাকে স্বাক্ষর করতে না দেওয়ার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

এই হল টাঙ্গাইলের আলহাজ রমজান আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও ওই বিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে শিক্ষক গৌরাঙ্গ দত্তের অভিযোগ নিয়ে চলমান ঘটনাবলীর মোটামুটি সারসংক্ষেপ। আমি বিশ্বাস করি, দেশে আইনের শাসন বিদ্যমান। অভিযোগ কিংবা পাল্টা অভিযোগ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর রয়েছে। শিক্ষক গৌরাঙ্গ দত্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও করেছেন যথাযথ দপ্তরেই। অভিযোগ করে তিনি তো অন্যায় কিছু করেননি। অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ওই অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু গায়ের জোরে একজন শিক্ষককে হয়রানি করবার কোনো অধিকার প্রধানশিক্ষক ও সভাপতির নেই।