মাগুরা প্রতিনিধি : ‘অনেক কষ্টে ব্যাংক, এনজিও থেকে ঋণ ও আত্মীয় স্বজনের কাছ টাকা থেকে ধার নিয়ে দাঁড় করিয়েছিলেন মাছের খামার। স্বপ্ন ছিল মাছ বিক্রি করে দায় দেনা শোধ করবেন।বাকি লাভের টাকায় সংসারে আসবে স্বচ্ছলতা। কিন্তু পুকুরে শত্রুর প্রয়োগ করা বিষে মাছের সাথে মো. ছলেমান শেখের স্বপ্নেরও মৃত্যু হয়েছে।

মাগুরার উপজেলা সদরের সূর্যকুন্ডু গ্রামের মওড়ির বিলের মধ্যে দুর্বৃত্তরা একটি মজুদ পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে। এ ঘটনায় প্রায় ৫ লাখ টাকার মাছ মারা গেছে। আজ সোমবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। দুপুর থেকে মাছ মরে ভেসে উঠতে থাকে। এ ঘটনায় পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষী।

সরেজমিনে গিয়ে, ক্ষতিগ্রস্ত, পুলিশ ও এলাকাবাসীর সাথে কখা বলে জানা গেছে, উপজেলা সদর ইউনিয়নের সূর্যকুন্ডু গ্রামের কৃষক মো. ছলেমান শেখ (৪৫) মওড়ির বিলের প্রায় ২০০ একর জমি লিজ নিয়ে বর্ষাকালে প্লাবন ভূমিতে মাছের চাষ করতেন। শুস্ক মৌসুমে বিলেন মধ্যে সাতটি পুকুরে তিনি মাছ মজুদ করে রাখেন। বর্ষাকালে আবার এই মাছ বিলে ছেড়ে দিয়ে বড় করে বিক্রি করেন।

তিনি ওই গ্রামের মৃত ছায়েন উদ্দিনের ছেলে। স্ত্রী ফিরোজা বেগম ২ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে তার সংসার। তেমন জমিজমা নেই। মাছ চাষ করেই তিনি স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছিলেন।

এসব পুকুরে রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, মৃগেল, সিলভারকার্প, চিতল, আইড়, শৈল, ফলি বড় পুটি, কার্প, শিংসহ বিভিন্ন প্রজাতির এক বছরের পুরনো ১৫-২০ মণ মাছের মজুদ রয়েছে। এসব মাছের গড় ওজন ৫০০-৮০০ গ্রাম। মাছগুলো সামনের বর্ষায় বড় করে বিক্রি করার কথা ছিল। সোমবার ভোররাতে কে বা কারা একটি পকুরে বিষ প্রয়োগ করে। সকাল থেকে মাছ মরতে শুরু করে। দুপুরের মধ্যে সব মাছ মরে ভেসে উঠে।

সরেজমিনে দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, পুকুর জুড়ে নানা প্রজাতির মরা মাছের সারি। বাতাসে মাছের গন্ধ। পাড়ের গ্রামের লোকজনের ভিড়। পাড়ের কোনে মাথায় হাত দিয়ে বসে এক দৃষ্টিতে পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছেন মো, ছলেমান শেখ।

সাংবাদিক জানতে পেরে আহাজারি করতে শুরু করেন। বিলাপ করে বলতে থাকেন আমার সব শেষ । আমার কিডা এত বড় সর্বনাশ করল আমিতো কারো কোন ক্ষতি করি নাই।

মো. ছলেমান শেখ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘কৃষি ব্যাংক ও তিনিটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে তিনি টাকা ধার করে মাছের আবাদ করেছেন। এখন তিনি কিভাবে দেনা শোধ করবেন তা বুঝতে পারছেন না। পুকুরের পাশে এক ব্যক্তির জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে, তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তিনি ধারনা করছেন।’

সূর্যুকুন্ডু গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ও শাহাদত হোসাইন জানান, ‘এত বড় সর্বনাশ কে করল আল্লাহই জানেন। লোকটি পথে বসে গেল।’

তারা আরও বলেন, এই বিলের শতাধিক দরিদ্র ব্যক্তি মাছ চাষের সুফল ভোগী। সামনের বর্ষার পর মাছগুলো বিক্রি করলে সব টাকা উঠে আসত। শত্রুতাবশত কেউ এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করেন তিনি। এ পর্যন্ত তাদের হিসাব অনুযায়ী দুর্বৃত্তরা ৫ লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলেছে।

মহম্মপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তরীকুল ইসলাম বলেন,‘মাছ নিধনের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত করছি।’

(ডিসি/এএস/মে ০৮, ২০১৭)