শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাকশাহার গ্রামের সেলিম মাদবর কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি একদিন লোক মুখে জানতে পারেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে উচ্চ বেতনে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে।

শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে রুদ্রকর গ্রামের মোক্তার তালুকদার মানুষের জীবনবৃত্তান্ত জমা নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে জামানত হিসেবে চার হাজার করে টাকা নিচ্ছেন। সেলিম মাদবর চাকরি পাওয়ার আশায় মোক্তার তালুকদারের হাতে চার হাজার টাকা তুলে দেন গত এপ্রিল মাসে।

শুধু সেলিম মাদবরই নয় এভাবে শরীয়তপুরের চার শতাধিক মানুষ পদ্মা সেতু প্রকল্পে চাকুরি পাওয়ার আশায় টাকা জমা দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, শরীয়তপুরের সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে একটি প্রতারক চক্র পদ্মা সেতু প্রকল্পে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে শ্রমজীবী মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

ওই চক্রের সদস্যরা গ্রামের শ্রমজীবী মানুষের কাছে জানান, জুনে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের জন্য মাসিক ২৫ হাজার টাকা মজুরি দেয়া হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করবে। প্রকল্পটিতে নিয়োগ পেলে চার বছর কাজ করার সুযোগ থাকবে। ১ জুন থেকে চাকুরি শুরু হবে।

এ খবর জানার পর লোকজন ওই চক্রের দেয়া ফরমে জীবনবৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করে জমা দেন। ফরম জমা নেওয়ার সময় চার হাজার টাকা হতে আট হাজার টাকা প্রতি শ্রমিকের কাছ থেকে আদায় করা হয়। পুরো এপ্রিল মাসে ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় চারশ’ জন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা তুলেছেন।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাকশাহার গ্রামের সেলিম মাদবর, খবির ভুঁইয়া, আক্তার মুন্সী, আমতলী গ্রামের ইমরান ব্যাপারী, সোনামুখি গ্রামের নুরুল হক জানান, তারা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে মাসিক ২৫ হাজার টাকা বেতন পাওয়া যাবে এমন কথা শুনে চাকুরি পাওয়ার জন্য আদম ব্যবসায়ী মোক্তার তালুকদারের কাছে চার হাজার টাকা দিয়েছেন। জুনের ১ তারিখ থেকে চাকুরি দেওয়ার কথা ছিল। তবে ঠিক কবে থেকে তাদের চাকুরি দেওয়া হবে তা জানেন না।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে চাকুরি দেওয়ার কথা স্বীকার করে মোক্তার তালুকদার বলেন, `ঢাকায় আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি পদ্মা সেতু প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে। তখন তার অনুরোধে এলাকার কিছু যুবকের কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়েছিলাম। তাদের কাছ থেকে অফিস খরচ বাবদ কিছু টাকাও নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। যারা টাকা ফেরত নিয়েছেন তারা ভুল করেছেন। এখনো যারা টাকা নেননি তারা ১৫ দিনের মধ্যে ভাল ফল পাবেন।’

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে এভাবে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার কোন সিদ্ধান্ত আমাদের জানা নেই। একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মানুষকে সচেতন করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে মাইক দিয়ে প্রচার চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছি। প্রতারক চক্র ধরার জন্য গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে কাজ করছে।’

(ওএস/এস/জুন ২১, ২০১৪)