ফাহিম ইফতেহাদ : ফেলুদা ও তাঁর লোমহর্ষক গোয়েন্দাগিরির কথা আমরা কে না জানি। আমাদের শৈশব আর কৈশোরের বেশ উল্লেখযোগ্য কিছু মুহূর্তে মিশে আছে যিনি তিনি আমাদের সবার প্রিয় ফেলুদা। পরীক্ষার পড়া বাদ দিয়ে,কখনো টিফিন টাইমে,আর কখনো ছুটির দিনে সারাদিন রাত আমাদের কল্পনা জগতে ঘিরে থাকতো ফেলুদা, তোপসে আর লালমোহন বাবুর সেই অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনী। আজ শহুরে জীবনের নানা ব্যস্ততায়, কিংবা ইন্টারনেটের তীব্র ব্যবহারে আমারা হয়তো ফেলুদাকে মনে করার সময় একদমই পাইনা। কিন্তু হাজারো ব্যস্ততার মাঝে আমরা আজো ফেলুদাকে ভুলিনি।

চলুন আজ সব ব্যস্ততা ঝেড়ে ফেলে, কিছু সময়ের জন্য ঘুরে আসি ফেলুদা ওর তাঁর আস পাশের জগত থেকে।

বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা কাহিনীর এক কালজয়ী চরিত্র ফেলুদা। আর এই প্রিয় চরিত্রের স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়। ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি কিংবা প্রফেসর শঙ্কুর বৈজ্ঞানিক কাহিনীর মাধ্যমে সত্যজিৎ রায় জয় করেছেন সকল বয়সী পাঠকের হৃদয়।

কিংবদন্তী এই সত্যজিৎ রায় লেখক হিসেবে যেমনি জয় করেছেন আমাদের হৃদয় ঠিক তেমনি চলচ্চিত্র পরিচালনা করে কেঁড়ে নিয়েছেন বিশ্বের লাখো মানুষের মন। আজ সত্যজিৎ নেই, কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন তাঁর কিংবদন্তি শিল্পের মাধ্যমে।

কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্র স্রষ্টা ২ মে ১৯২১ সালে কলকাতার গড়পাড় রোডে জন্মগ্রহণ করেন।

সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)


তিনি ছিলেন বিখ্যাত ছড়াকার সুকুমার রায়ের এক মাত্র সন্তান। আর তাঁর দাদা ছিলেন ওই সময়কার বিখ্যাত সাহিত্যিক উপেদ্রকিশোর রায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি শিল্প সাহিত্যের অনুপ্রেরণা পান তাঁর পরিবার থেকেই।

কর্মজীবনের শুরুটা তিনি করেন বিজ্ঞাপন সংস্থার কাজের মাধ্যমে। প্রচ্ছদ ও চিত্রাঙ্কনের জন্য তিনি বেশ কিছু পুরস্কারও লাভ করেন। এরপর শুরু করেন লেখালিখি। এবং বেশ অল্প সময়ে তাঁর লেখা গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। অনুদিত হয় বেশ কিছু ভাষায়। এর জন্য তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারও লাভ করেন। এর পর তিনি মননিবেশ করেন চিত্রনাট্যে।

১৯৫৫ সালে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায়ের প্রথম চলচ্চিত্র " পথের পাঁচালী" । যা কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পায় শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান।

পথের পাঁচালী (১৯৫৫)

এরপর ধীরে ধীরে তিনি নির্মাণ করেন হীরক রাজার দেশে, গুপী গাইন বাঘা বাইন, আগন্তুক, সোনার কেল্লা, অশনি সংকেত, নায়ক, শাখা-প্রশাখা, অপুর সংসার সহ কালজয়ী কিছু চলচ্চিত্র। তাঁর এই কালজয়ী চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৯১ সালে তিনি " লাইফ টাইম অ্যাচিভম্যান্ট অস্কার" পুরষ্কার লাভ করেন।
বহুমুখী প্রতিভার এই কিংবদন্তী ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান।

(এফআই/এসপি/মে ১৬, ২০১৭)