শরীয়তপুর প্রতিনিধি : সোমবার সকালে প্রলয়ংকরি ঘূর্নিঝড়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া  ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে ব্যাপক আঘাতহানে। লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া গ্রামর পর গ্রাম মানুষেরা মানবতের জীবন কাটাচ্ছে। সরকারি নামমাত্র ত্রান সহায়তা পৌছলেও এখনো এখনো মাথা গোজাঁর ঠাঁই মিলেনি শত শত পরিবারের। মরার উপর খড়ার ঘাঁই এর মত সোমবার মধ্যরাতে আবার প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ে নতুন করে বিধ্বস্ত হয়েছে একই এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা। সরকারের পাশাপাশি দুটি বেসরকারি সংস্থা সহায়তার হাত নিয়ে এগিয়ে এসেছে দূর্গত মানুষদের কাছে। সরকারি সাহায্যকে অপ্রতুল বলে দাবি করেছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
   

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শী ক্ষতিগ্রস্তদের মাধ্যমে জানাে গেছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে জেলার নড়িয়া উপজেলা পদ্মা নদীর চরাঞ্চল খ্যাত নওপাড়া ইউনিয়নের তাঁতিকান্দি, রাজারচর, চর আত্রা ইউনিয়নের খাঁসকান্দি কাচিঁকাটা ইউনিয়নের চরজিংকিং, বোরোকাটি, শীবসেন, মুন্সিকান্দি, উত্তর মাথাভাঙ্গা, কৃষ্ণপুর ও ডিএম খালি ইউনিয়নের চর পাইয়াতলি গ্রামসহ চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের উপর আঘাত হানে কাল বৈশাখী ঝড়। তবে বসচেয়ে বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চর আত্রা খাঁসকান্দি গ্রাম ও খাঁসকান্দি বাজার এলাকায়। কালবৈশাখীর ছোবলে নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের রাজাবাড়ির চর গ্রামের গার্মেন্টস কর্মী মাহমুদা খাতুনের ৮ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ আলী ডিএম খালি ইউনিয়নে চর পাইয়াতলি গ্রামের জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম নেছা (৫৫) নিহত হন। শিশু মোহাম্মদ আলী মক্তব পড়তে গিয়ে মসজিদ ভেঙ্গে মসজিদ ঘরের খুঁটির নিচে চাপা পরে এবং বেগম নেছার উপর আম গাছ ভেঙ্গে পরে তারা ঘটনাস্থলে নিহত হন।এছারাও অন্তত ৪০ ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে তিন জনকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। বাকি কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘূর্নিঝড়ের তান্ডবে ১৫ গ্রামে অন্তত ৩ শতাধিক ঘর বাড়ি বিদ্ধস্ত হয়েছে। গবাদি পশু ও হাসমুরগীর খামার ক্ষতিগ্রস্তত হয়ে শত শত পল্ট্রি মুরগী মারা গেছে।

এলাকায় খাবারের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ দূর্গতদের মাঝে সোমবার তিন বেলা রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। সোমবার দিনব্যাপী নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় এনজিও এসডিএস এবং নুসা মেডিক্যাল টিম গঠন করে আহতের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন।

ঢাকা মেকিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খাঁসকান্দি গ্রামের নুরু রাড়ি ও মিয়াজল ঢালীর চিকিৎসার জন্য শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এসডিএস) মঙ্গলবার সকালে নগদ ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।

এদিগে ২০ ঘন্টা পার না হতেই আবারও সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে আকস্মিক ঝড়ে চরআত্রাসহ নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ও ঘরিষার ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তি এলাকায় শতাধিক বাড়িঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। উপড়ে পড়ে গেছে শত শত গাছপালা। ঝড়ের তান্ডবে গাছ পড়ে যখন ঘর বাড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছিল তখন আতংকিত হয়ে ছুটাছুটি ও আশ্রয় নিতে গিয়ে আহত হয়েছে অন্তঃত ১৫ জন। আহতদের জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত উত্তর কেদারপুর গ্রামের রিপন মন্ডলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শুধু বাড়িঘর গাছ পালাই নয়, ভেঙ্গে গেছে অসংখ্য বিদ্যুতের খুটি। আর বিদ্যুতের খুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থানের বিদ্যুত বিছিন্ন রয়েছে রাত থেকেই। মুলফৎগঞ্জ হাসপাতালে বর্তমানে বিদ্যুত না থাকায় দেখা দিয়েছে পানির সংকট। দ্রুত বিদ্যুত না পেলে বিভিন্ন জরুরু ঔষধ নষ্ট হওয়ার আশংকা করছেন হাসপাতাল সংম্লিষ্টরা। এতে চিকিৎসা সেবা প্রদানে বিঘ্নিত হয়ে দুভোর্গে পড়েছে রোগী ও এলাকাবাসী। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য দরিদ্র সাধারণ মানুষ সরকারী সহায়তার আবেদন করেছেন।

প্রশাসন জানিয়েছেন, সোমবারের ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন চরআত্রা ও নওপাড়া ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত ১ শত ৫০টি পরিবারের প্রত্যেককে ২০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫০০ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এছারাও শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি এসডিএস ৪০টি পরিবারের মধ্যে ২ কেজি ডাল ও ১ লিটার ভোজ্য তেল এবং নড়িয়া উন্নয়ন মধ্যে ১৫ কেজি করে চাল, ২ কেজি করে ডাল, কেজি করে লবন, ১ লিটার করে ভোজ্য তেল সমিতি নুসা ৪৪টি পরিবারের ও ২টি করে সাবান ত্রান সহায়তা দিয়েছেন। এছারাও এসডিএস ক্ষতিগ্রস্তদের তাবু নির্মান করে থাকার জন্য ত্রিপলসহ অন্যান্য সহায়তার প্রদানের কথা জানিয়েছে সংস্থার পরিচালক কামরুল হাসান বাদল।

চরআত্রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিসেস সেলিনা রতন বলেন, আমার এলাকার মানুষের যে অবর্ননীয় ক্ষতি হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। দূর্গত মানুষের পাশে সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে আসতে আমি সরকার ও দেশের বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

চরআত্রা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘূর্নীঝড় আক্রান্ত এলাকাকে দূর্গত এলাকা ঘোষনার দাবি জানাচ্ছি। সরকার ২০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকার যে সাহায্য পাঠিয়েছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। শত শত পরিবার এখনো খোলা আকাশের নিচে শিশু ওবৃদ্ধদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। আমরা পার্টির পক্ষ থেকে দূর্গতদের দু‘বেলা রান্না করা খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। আশ্রয় হারা মানুষদের পূনর্বাসনের জন্য আমি জরুরী ভিত্তিতে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত সহায়তার আহবান জানাচ্ছি।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, সোমবার সকালে টর্নেডোর আঘাতে ক্ষদিগ্রস্তরা মধ্য রাতের প্রবল বর্ষণ আমরা বাতাসে নতুন করে সমস্যায় পরেছে। আমরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে কিছু প্রাথমিক সহায়তা প্রদান করেছি। মঙ্গলবার ১ শত ৫০ পরিবারকে ২০ কেজি চাল ও নগদ ৫০০ করে টাকা দেয়া হয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ঘূর্নিঝড় আক্রান্ত এলাকাকে দূর্গত এলাকা ঘোষনা করার পর্যায় পরেনি। তবে, আমরা আপাতত প্রত্যেক পরিবারকে কিছু নগদ টাকা ও চাল সহায়তা দিয়েছি। জরূরী ভিত্তিতে তাদের মাথা গোজার জন্য ১০০ বান্ডেল ঢেউ টিন দিয়ে একটি আশ্রয় শিবির করে দেয়া হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা অনুযায়ী গৃহ নির্মানের জন্য প্রত্যেককে দুই বান্ডেল টিন ও নগদ ৫ হাজার করে টাকা দেয়া হবে।

(কেএনআই/এএস/মে ১৭, ২০১৭)