অভিজিৎ রাহুল বেপারী, পিরোজপুর : পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে যখন শত শত একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকত, শুধু আমন চাষই ছিল কৃষকের একমাত্র ভরসা ঠিক সেসময় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের নিরন্তর পরিশ্রম ও পরামর্শে ভুট্টাচাষে এগিয়ে আসতে শুরু করেন প্রান্তিক কৃষকরা। বর্তমানে পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকরা ভুট্টার আবাদ করে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন।

জেলার সর্বদক্ষিণে সাগর উপকূলের জনপদ মঠবাড়িয়া উপজেলা। এখানকার জনসাধারণের প্রধান পেশা কৃষি। বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে এক ফসলি কৃষি হিসেবে আমন ধানই ছিল প্রধান। এছাড়া শীতকালীন ফসলেরও কিছু কিছু আবাদ হত। এ কারণে সারা বছরই হাজার হাজার হেক্টর পরিমাণ জমি পড়ে থাকত অনাবাদী হিসেবে।।

মঠবাড়িয়া উপজেলায় এ মৌসুমে সরকারের রাজস্ব অর্থায়নে বেশ কিছু ভুট্টার প্রদর্শনী করা হয়েছে। মাটি, পানি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এসব জমিতে কৃষকের ‘বারী হাই ব্রিড’ ভুট্টার আবাদ করতে অন্তত ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। ওই কৃষক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার পর্যন্ত উৎপাদিত ভুট্টার ফলন পেতে পারেন বলে জানালেন কৃষি অফিসার। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ৯ টন পর্যন্ত ভুট্টা উৎপাদিত হয়।

ভুট্টাচাষে বসে নেই কৃষাণীরাও। তারা স্বামীর সঙ্গে একত্রে ক্ষেত-খামারে কাজ করে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। ফলে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন নিজেরা, পরিবারে ফিরে আসছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। আর তাই অস্বচ্ছল এসব পরিবারের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচের যোগানও হচ্ছে এ চাষ থেকে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, অত্র এলাকায় এই প্রথমবারের মতো ভুট্টার ৮টি প্রদর্শনী এবং পরীক্ষামূলকভাবে ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার উৎপাদন দেখে কৃষকরা যথেষ্ট আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। ফলে আগামী বছর তারা ভুট্টার ক্ষেত আরও সম্প্রসারিত করবেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করবেন।

সারা দেশের ন্যায় পিরোজপুর জেলাতেও সরকারের রাজস্ব অর্থায়নে ভুট্টার আবাদ বাড়াতে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিভিন্ন কৃষি প্রনোদনা ও উপকরণাদি বিতরণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মঠবাড়িয়া উপজেলায় ১২০ জন কৃষককে দেয়া হয়েছে ভূট্টা আবাদের জন্য বিনামূল্যে ২০ কেজি সার ও ২ কেজি করে বীজ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবুল হোসেন তালুকদার বলেন, জেলার কৃষকদের মধ্যে অত্যন্ত লাভজনক ভুট্টা ফসলের আবাদ দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারলে জমি যেমন আর অনাবাদি পড়ে থাকবে না, ঠিক তেমনি কৃষকদের ভাগ্যেরও পরিবর্তন সাধিত হবে।

(এআরবি/এএস/মে ১৭, ২০১৭)