আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।

শনিবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রেসিডেন্ট পদে রুহানিকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিল এই মন্ত্রণালয়।

বিবিসি অনলাইনের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে প্রায় ৪ কোটি ভোট গৃহীত হয়েছে। গৃহীত ভোটের ৫৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ ভোট পেয়েছেন রুহানি।

শিয়াপ্রধান ইরানের মধ্যপন্থি রাজনীতিক রুহানি বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম হ্রাস নিয়ে চুক্তিকে সমর্থন করেন। এ নিয়ে দেশটিতে বিরোধিতা থাকলেও তার জনপ্রিয়তা বিরোধিতার চেয়ে বেশি হওয়ায় প্রথম দফার নির্বাচনেই প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হলেন তিনি।

তবে এ নির্বাচনে রুহানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইব্রাহিম রাইসি ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। চরম রক্ষণশীল এই ধর্মীয় নেতা অভিযোগ করেছেন, রুহানির সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে অপপ্রচার চালিয়েছে, যা নির্বাচনী আইনে নিষিদ্ধ।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন রুহানিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল রেজা রাহমানি ফাজলি জানিয়েছেন, রুহানির প্রতিদ্বন্দ্বী রাইসি ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার ভোট পেয়েছেন, যা নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

শুক্রবার ভোটের সময় হঠাৎ করে ৫ ঘণ্টা বাড়ানো হয়, যা মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। তবে অপ্রত্যাশিত হলেও এবারের নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যক ভোট গৃহীত হয়েছে, যা প্রায় ৭০ শতাংশ।

নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনগণের অনুরোধ ও ভোটারদের উৎসাহের কারণে ভোটের সময় বাড়ানো হয়েছে।

২০১৩ সালের তুলনায় এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গৃহীত ভোটের পরিমাণ অনেক বেশি। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে শিয়া কট্টরপন্থিরা রাইসির পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালায় এবং ভোটের ময়দানে তাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

কট্টরপন্থিদের ব্যাপক প্রচেষ্টার বহিঃপ্রকাশ দেখে রুহানির সমর্থকরাও আদাজল খেয়ে মাঠে নামে। দেশকে আধুনিকায়নের দিকে ধাবিত করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রুহানি, তাতে সাড়া দিয়ে তার সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে আসে। যে কারণে গৃহীত ভোট প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। রাজধানী তেহরানে এবার ভোট পড়েছে প্রায় ৫০ লাখ, ২০১৩ সালের চেয়ে যা প্রায় দ্বিগুণ।

কট্টরপন্থিদের বিরুদ্ধে মডারেট শিয়াদের জোর বিরোধিতার অনেক কারণ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কট্টরপন্থিরা সাধারণ নাগরিকদের ওপর জুলুম করেছে, তাদের জেল খাটিয়েছে, চাকরি থেকে ছাটাই করেছে, ফাঁসি দিয়েছে, জোর করে নির্বাসনে পাঠিয়েছে এবং নারীদের বিরুদ্ধে চরম বৈষম্য জিইয়ে রেখেছে।

কট্টরপন্থিদের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছেন হাসান রুহানি। তিনি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের শেকড় উপড়ে ফেলার ওয়াদা করেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের কথা বলেছেন এবং দেশের অর্থনীতিকে আবার পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক বছরে রুহানির প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে ইরানিরা। বিশেষ করে গত কয়েক সপ্তাহে ব্যক্তি ও সমাজের অধিক স্বাধীনতা দান, রেভ্যুলিউশনারি গার্ডসহ (বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী) ক্ষমতাশীল সব স্তরের জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি রুহানির জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে।

৬৮ বছর বয়সি রুহানি পরমাণু চুক্তিকে সফলতার সঙ্গে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জোর ওয়াদা করেছেন। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ চুক্তির বিরোধিতা করেছেন, কিন্তু সম্প্রতি চুক্তি আবার নবায়ন হয়েছে।

(ওএস/এএস/মে ২০, ২০১৭)