প্রবীর সিকদার


২০০৪-২০০৫ সালের কথা। আমি তখন ফরিদপুরে দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার। সেই সময়ে আমার লেখালেখি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ায় আমাকে শায়েস্তা করবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। একটি বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতা ফজলুল হক আমিনি ফরিদপুরে একাধিক জনসভা করে আমার ফাঁসি দাবি করেছেন। প্রস্তুতি চলে আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের। পুলিশের ওপর চাপ দেওয়া হয় আমাকে গ্রেফতারের। তখন ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ওসি ছিলেন সিএ হালিম। শত চাপের মুখেও তিনি আমাকে গ্রেফতার করেননি। উল্টো তিনি আমার জন্য সার্বক্ষণিক শক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন। সিএ হালিমের ওপর আমাকে গ্রেফতারের চাপ প্রবল হলে তিনি গ্রেফতার না করে আমাকে পরামর্শ দেন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে আসার। আমি রাজী হলে তিনি আমাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় ঢাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়,অনেকের ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নত করেনি ফরিদপুর পুলিশ।

আর আজ! লুটেরা ও কথিত রাজনৈতিক নেতারা কাউকে শায়েস্তা করার কথা বললে বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে যাকে তাকে হয়রানি করে ফরিদপুর পুলিশ।আমি নিজেও তো ওই নির্মম সত্যের মুখোমুখি হয়েছি। মামলা দায়েরের আগেই ফরিদপুর পুলিশ আমাকে আটক করে হাতকড়া পরিয়ে চোখ বেঁধে নির্যাতন করেছে। ভাবতেও কষ্ট হয়, যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আমার জন্য পুলিশি নির্যাতন প্রাপ্য ছিল, সেই নির্যাতন আমাকে সইতে হয় আমার পরম আকাঙ্ক্ষার আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে!

হাল আমলের কথিত কিন্তু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের খুশি করতে ফরিদপুর পুলিশ করেনি কী! এই সরকারের আমলে ফরিদপুরে অসংখ্য মানুষকে সাজানো ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি-নির্যাতন করা হয়েছে, হচ্ছে। এমন নির্মম হয়রানি থেকে রক্ষা পাননি পরীক্ষিত আওয়ামীলীগ নেতা মোকাররম মিয়া বাবু ও তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা সত্যজিৎ মুখার্জি। অনেকটাই রকেট গতিতে মোকাররম মিয়া বাবুর বিরুদ্ধে ১০টি ও সত্যজিত মুখার্জির বিরুদ্ধে ২৩ টি সাজানো ও মিথ্যা দিয়ে তাদেরকে চূড়ান্ত হয়রানি করা হয়, হচ্ছে। পাহাড় সমান মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে তাদেরকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটক থাকতে হয়। এই হয়রানির মামলা থেকে রেহাই পাননি বাবু ও সত্যজিতের পরিবারের সদস্যরা। সত্যজিতের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক মানস মুখার্জিকে অন্তত ৭টি মামলায় ফাঁসিয়ে একাধিক বার কারাগারে আটক রাখা হয়।

ফরিদপুর পুলিশের এই নির্মমতা আমাকে বিস্মিত করে। ভাবতে কষ্ট হয়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের ফরিদপুর পুলিশ আর সাম্প্রতিক সময়ের ফরিদপুর পুলিশ আসলে একই পুলিশ! তারপরও আশায় রইলাম, একদিন আমাদের পুলিশও ক্ষমতার দাপুটে কথিত নেতাদের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে গণ-মানুষের প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠবেন।

(পিএস/এএস/মে ২২, ২০১৭)