আহম্মদ ফিরোজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরে কুমার নদ থেকে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। গত ২৮ মে থেকে শহরের পশ্চিম আলীপুর ও ওয়্যারলেসপাড়া এলাকায় দু’টি ড্রেজিং মেশিন দিয়ে এ বালু কাটা হচ্ছে। এর ফলে নদপাড়ে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে পাড় ভেঙে পড়ার আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

শহরের পশ্চিম আলীপুর এলাকার টিয়া মোল্লার বাড়ির সামনে কুমার নদ থেকে বালু তুলছেন যুবলীগ নেতা খন্দকার সামসুল সালেকিন ওরফে টগর। নিজ মালিকানাধীন একটি ড্রেজিংমেশিন দিয়ে তিনি একটি পুকুর ভরাট করছেন। অন্যদিকে শহরের ওয়্যারলেসপাড়া এলাকায় সুকুমার সাহার ডালের মিলের সামনে থেকে বালু তুলছেন ওয়্যারলেসপাড়ার ব্যবসায়ী কামরুজ মোল্লা। তিনি ভাড়ায় চালিত একটি ড্রেজিংমেশিন দিয়ে নির্মাণাধীন একটি ভবনে বালু নিচ্ছেন।

গত ৩০ মে বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়্যারলেসপাড়া এলাকায় সুকুমার সাহার মিলের কাছে কুমার নদ থেকে ২৫ অশ্বশক্তির বালু কাটা ও ১৬ অশ্বশক্তির পানির মেশিন দিয়ে নদ থেকে বালু কাটা হচ্ছে। এ বালু চার ইঞ্চি ব্যাস-বিশিষ্ট একটি পাইপে করে আনুমানিক ৫০০ ফুট দূরে কামরুজ মোল্লার নির্মাণাধীন একটি ভবনে নেওয়া হচ্ছে।

‘কামরুজ ভায়ের নির্দেশে এ বালু কাটা হচ্ছে। এক মাস আগে ১৫ দিন বালু কেটেছি। আবার গত রোববার থেকে ধরে কাটা শুরু করেছি।’ এ তথ্য জানিয়ে ড্রেজিংমেশিনের চালক ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের শোভারামপুর গ্রামের মানোয়ার মোল্লা জানান, সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৮০০ ফুট বালু কাটা হচ্ছে। এ কাজ শেষ হতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।

পশ্চিম আলীপুর এলাকার টিয়া মোল্লার বাড়ির কাছে ৩০ অশ্বক্ষমতাসম্পন্ন বালুর ও ১২ অশ্বক্ষমতাসম্পন্ন পানির মেশিন দিয়ে বালু কাটার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন চালকসহ চারজন। এ বালু ৫ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে আনুমানিক ৪০০ ফুট দূরে সামসুল সালেকিনের পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। মেশিনচালক ফরিদপুর সদরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা চান মিয়া বলেন, ‘দুই দিন ধরে আমরা বালু কাটছি। এ মেশিনের মালিক টগর ভাই। আমরা প্রতিদিন চারজন শ্রমিক দুই হাজার টাকার চুক্তিতে এ কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, এ পুকুর ভরতে আরও ১৮ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে।

শহরের মাঝ দিয়ে প্রবহমান কুমার নদে দুটি ড্রেজিংমেশিন দিয়ে বালু কাটায় ওই মহল্লার অধিবাসীদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের শঙ্কা এর ফলে নদের তীর ধসে পড়ে তাদের বাড়িঘর ও নদের পাড়ের সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পশ্চিম আলীপুর এলাকার বাসিন্দা মজিবর ব্যাপারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে জায়গা থেকে বালু কাটা হচ্ছে, তার পাশে নদের পাড়ে আমার বাড়ি। এর ফলে নদের পাড় ধসে আমার বাড়ি ও নদের পাড়ের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

এ ব্যাপারে সামসুল সালেকিন গতকাল বুধবার বলেন, ‘আমি বাণিজ্যিকভাবে এ কাজ করছি না। আমার নিজের একটি জায়গা ভরাট করছি। ড্রেজিংমেশিনটি নদের মাঝামাঝিতে বসানো হয়েছে, এতে নদের পাড় ভেঙে পড়া বা কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

তবে কামরুজ মোল্লার দাবি, তিনি নিজের জায়গা থেকেই মাটি কাটছেন। কামরুজ মোল্লা বলেন, ‘নদের মধ্যে আমার জমি আছে, ওই জমি থেকেই মাটি কাটা হচ্ছে। নদের পাড়ে আমি একটি ভবন করছি। ওই ভবনে বালু নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, নদ থেকে বালু কাটায় পাড়ের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, পাউবো নদ থেকে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু কাটার অনুমতি কাউকে দেয়নি বা দেওয়ার কোনো বিধানও নেই। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

(এফএ/এএস/জুন ০১, ২০১৭)