টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ইউপি নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করায় তিন পরিবারকে সামাজিক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া ওই তিন পরিবারের সদস্যদের মসজিদে যাওয়াও নিষেধ করা হয়েছে। তিন পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নানা প্রকার হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের গেড়ামারা গ্রামে। এ বিষয়ে মির্জাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকার সচেতন মহলে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ১৬ এপ্রিল ছিল মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নসহ ৬টি ইউপিতে নির্বাচন। নির্বাচনে বহুরিয়া ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাইদ সাদু আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গেড়ামারা গ্রামের রেজাউল করীম বাবুল আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গেড়ামারা গ্রামের আব্দুল বারেক, তার ছেলে আব্দুল মালেক ও সানোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। নির্বাচনের একদিন আগের রাতে বাবুলের সমর্থকেরা নৌকা মার্কার কর্মীদের উপর হামলা চালায় এবং তাদের পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এ ঘটনায় আব্দুল মালেক ও শাহিনুর রহমান নামে দুই সমর্থক গুরুতর আহত হয়। এঘটনায় মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এর জের ধরে রেজাউল করিম বাবুল ওই তিন পরিবারের উপর চড়াও হয় এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওই তিন পরিবারকে সামাজিক ভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। এতেই তিনি ক্ষান্ত না হয়ে ওই তিন পরিবারের সদস্যদের মসজিদে নামাজ পড়া নিষেধ করেন। এছাড়া মসজিদের ইমামকে ওই তিন পরিবারের শিশুদের মক্তবে না পড়ানোর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। গেড়ামারা বাজারে অবস্থিত ওই তিন পরিবারের এক সদস্য সরোয়ারের দোকান থেকে কোন প্রকার কেনাকাটা না করার জন্য গ্রামবাসীকে চাপ সৃষ্টি করে ৫শ টাকা জরিমানার বিধান জারি করা হয়েছে। তাছাড়া বাবুলের সন্ত্রাসীরা ওই তিন পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নানা প্রকার হুমকি প্রদান করে আসছে বলে জিডিতে উল্লেখ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গেড়ামারা গ্রামের ভুক্তভোগী এক পরিবারের অভিভাবক বৃদ্ধ আব্দুল বারেক বাবুলের পোষা সন্ত্রাসী একই গ্রামের মহুর উদ্দিনের ছেলে মো. মোস্তফা, আলম শিকদারের ছেলে লিটন ও মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মির্জাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ডায়েরী নম্বর ২০। বেলা আড়াইটার দিকে ভোক্তভোগী তিন পরিবারের সদস্য আব্দুল বারেক, আব্দুল মালেকের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার ও গেড়ামারা বাজারের ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা সরোয়ার হোসেন মির্জাপুর প্রেসক্লাবে এসে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে তাদের করুন অবস্থার কথা বর্ণনা করেন। এসময় তারা বলেন, স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গে কাজ করে আজ আমাদের এই করুন অবস্থা। আমরা কি স্বাধীনভাবে এলাকায় বসবাস করতেও পারবো না। বাবুলের পোষা সন্ত্রাসীদের ভয়ে আজকে আমরা পালিয়ে মির্জাপুরে এসেছি। তাছাড়া স্কুল পড়ুয়া শিশুদের নিয়ে প্রতিদিন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। তাছাড়া হামলার আশঙ্কায় সন্ধার আগেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। নির্বাচননের দেড় মাস পরও সন্ত্রাসীরা ওই তিন পরিবারকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছে বলে তারা অভিযোগ করেন। এতে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

গেড়ামারা গ্রামের মসজিদের ইমাম মাওলানা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, গ্রামের ১৫/২০জন সদস্য তার কাছে এসে জানান, ওই তিন পরিবারকে সমাজে বন্ধ রাখা হয়েছে। তাদের মসজিদে নামাজ পড়া এবং তাদের পরিবারের শিশু বাচ্চাদের মক্তব্যে পড়ানো যাবে না। কিন্তু আমি ইমাম হিসেবে ওই তিন পরিবারের সদস্যদের নিষেধ করতে পারিনি। এজন্য সমাজের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। রেজাউল করিম বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ডায়েরী করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

(এমএনআই/এএস/জুন ০১, ২০১৭)