ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আভ্যন্তরীণ কোন্দল, হামলা-মামলার ঘটনায় ঈশ্বরদীর আওয়ামী লীগ এখন বিপর্যস্ত। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শহরের পোষ্ট অফিস মোড় একসময় জমজমাট থাকলেও এখন আর নেতা-কর্মীদের দেখা যায় না। ষ্টেশন রোডের আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও নেতা-কর্মীদের আনাগোনা কমে গেছে। ভাংচুর ও সন্ত্রাসী মামলায় উপজেলা যুবলীগের সভাপতিসহ ১৩ জন কারাগারে রয়েছেন। একই মামলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মীর বাড়িতে প্রায় প্রতিদিনই হানা দিচ্ছে পুলিশ। দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা সত্বেও  ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের  বিরোধীদলের মতো গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই থেকে চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নিজ দলের নেতা-কর্মীরাই বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস আইনে পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু সমর্থিত প্রায় ১৭৫ জনকে। আসামীদের ১৩ জন বর্তমানে জেল-হাজতে, অনেকেই পলাতক ও জামিনে রয়েছেন। এই পাঁচ মামলার বাদী ও আসামী সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থক।

২০১৬ সালের ১৪ ও ১৭ জুলাই দুই গ্র“পের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরের স্টেশন রোড ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে শুরু হয় আ’লীগের দ্ব›দ্ব। যা এখনও চলমান। ২০১৬ সালের সংঘর্ষের ঘটনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরদীতে দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল হয়। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগি সংগঠনের একটি পক্ষের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নেতাদের জেল-হাজতে যেতে হয়। বিভিন্ন উৎসগুলো হাতবদল হলে আরেক পক্ষ নতুন ক্ষমতার স্বাদ নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত নেতা-কর্মীদের উপর হামলা-মামলা শুরু করে। এসব ঘটনায় যুবলীগ কর্মী আলম নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক নেতা-কর্মী। বাড়ি ছাড়া হয় শত শত নেতা-কর্মী।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৪ই জুলাই আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় সাহাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আকাল সরদার বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে ৩০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শহরের স্টেশন রোডের জঙ্গি বিরোধী মিছিলে হামলা অভিযোগ এনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান মিন্টু ২৫ই জুলাই ৪৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।

চলতি বছরের ১৮ই মে রাতে জুবায়ের বিশ্বাসের পিতা আতিয়ার রহমান বিশ্বাস, ২০শে মে উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক আরিফ বিশ্বাসের পিতা আজমল বিশ্বাস ও ফুড জংসনের স্বত্বাধিকারী ও আওয়ামী লীগ সমর্থক শরিফুল ইসলাম রুয়েন বাদি হয়ে পৃথক পৃথকভাবে মামলা তিনটি করেন। প্রতিটি মামলায় ৩৪ জনকে আসামী করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে যুবলীগ সভাপতি শিরহান শরীফ তমালসহ তার সমর্থিত নেতা-কর্মীদের।

তিন মামলার দুইটিতে প্রধান আসামী করা হয়, ভূমিমন্ত্রীর পুত্র উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শিরহান শরীফ তমালকে। ১৮ই মে রাতে তমালসহ ১১ জনকে ভাংচুরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এরপর উপজেলা যুবলীগের অন্যতম নেতা তুষার নওয়াজীশ ও ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রাফিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভূমি মন্ত্রীর বাড়ি হতে পুত্র শিরহান শরীফ তমাল গ্রেফতারের ঘটনাটি সারাদেশের আলোড়ন সৃষ্টি করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা শক্তিশালী হয় তারাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে। আমরা এবং সাধারণ মানুষের মতো তাদের কাছে জিম্মি’।

ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইছাহক আলী মালিথা বলেন, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আভ্যন্তরীণ সংকটে ভুগছে ঈশ্বরদীর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আমি নিজেও মামলার আসামী। দলের নেতা-কর্মীরা কেউ স্বস্তিতে নেই। সবাই অস্বস্তিতে ভুগছে। চারদিকে শুধু মামলা, হামলা, ভাংচুর, মারধর, গ্রেফতারের খবর শোনা যায়। এসব হতে উত্তরণের একমাত্র উপায় ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ মহোদয় নিজে উদ্যোগ নিয়ে যদি সমাধান করেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নায়েব আলী বিশ্বাস বলেন, দলে কোন্দল নেই কিন্তু দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নেতা-কর্মীদের মনে শান্তি নেই। তবে তিনি স্বীকার করেন আওয়ামী লীগে কোন্দল না থাকলেও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের আভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়েই অস্বস্তিতে থাকতে হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের।

(এসকেকে/এসপি/জুন ০২, ২০১৭)