বাকৃবি প্রতিনিধি : তন্ময় কুমার ঘোষ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। একজন তরুণ প্রতিভাবান। নিয়ম-নীতির পড়ালেখার গণ্ডির বাইরেও রয়েছে তার পথচলা।

বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় রয়েছে তার অংশগ্রহণ ও সাফল্যর ইতিহাস। সম্প্রতি তিনি সিনজেনটা-ইউএসএআইডি কানেকশন প্রোগ্রাম-২০১৭-তে বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত তিনজন ছাত্রের মাঝে একজন। অনুষ্ঠানটি আগামী ২৫ জুন ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত হবে।

সাফল্যের যাত্রা শুরু হয়েছিল ফিউচার এগ্রি এন্টারপ্রেনার প্রতিযোগিতা-২০১৫-তে। সারাদেশের মাঝে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করেছিল এসিআই এগ্রিবিসনেস, ক্যাটালিস্ট ও কনসিগলিয়েরি প্রাইভেট লিমিটেড। মাছের বর্জ্য থেকে তেল, বায়োডিজেল ও সার হিসেবে মাছের অ্যামাইনো এসিড নিয়ে আইডিয়া দিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি।

অতঃপর ২০১৬ সালে তিনি বেটার স্টোরিস লিমিটেডের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ইনোভেশন ফান্ড পেয়ে ‘ইকোফুয়েল‘ নামক প্রকল্প শুরু করেন। এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরি করে পরিবেশ দূষণ রোধ করা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা।

তন্ময় বলেন, গ্রিন হাউস ইফেক্ট আর জলবায়ু পরিবর্তন সমগ্র পৃথিবীর অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়। গ্রিন হাউস ইফেক্ট আর জলবায়ু পরিবর্তন সঠিকভাবে মোকাবেলা না করতে পারলে ২০৫০ সালের দিকে বাংলাদেশের ২৫% জমি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি ২০৫০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ প্রায় শেষের দিকে থাকবে। এক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই পরিবেশবান্ধব বিকল্প জ্বালানির দিকে নজর দেয়া উচিৎ।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট আমদানি করে। সেক্ষত্রে আমরা দেশের অভ্যন্তরে বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন করতে পারলে হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও রোধ করতে সক্ষম হবো।

তন্ময় জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে তিনি জাত্রোফা ও করচের তেল থেকে বায়োডিজেল প্রস্তুত করতে পেরেছেন। শৈবাল থকে জ্বালানি উৎপাদনের জন্যও তিনি চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বায়োডিজেল এবং বায়োইথানল অনেক বড় পরিসরে উৎপাদন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আর গবেষণা প্রয়োজন।

২০১৬ সালে তন্ময় বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার আয়োজিত আন্তর্জাতিক ইয়ুথ লিডারশিপ সামিট ২০১৬-তে অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি পান। পরে বাংলাদেশের সেরা মেধাবীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ পুরষ্কার ২০১৬ এর একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পান।

ফলস্বরূপ তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগের (ডিএফআইডি) অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের সহযোগিতায় ‘একুয়ালাইন‘ নামক প্রকল্প সঞ্চালনা করছেন। তার প্রকল্প ‘একুয়ালাইন‘ এর মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে মৎস্যজাত বর্জ্য হতে মূল্যবান প্রডাক্ট তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করা এবং লাভের অংশ মাছ বিক্রেতার মাঝে বণ্টন করে তাদের মাসিক আয় বৃদ্ধি করা। এর ফলে মৎস্যজাত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চিরস্থায়ী সমাধান হবে এবং তার প্রভাব বাংলাদেশের জিডিপিতেও পড়বে। কেননা দেশে মাছের খাবার তৈরি করার ৫০-৫৫% উপাদান এখনো আমদানি করা হয়। তিনি মৎস্যজাত বর্জ্য থেকে উন্নতমানের মাছের খাবার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

তন্ময় আশা প্রকাশ করে বলেন, এই বছরের শেষের দিকেই তিনি তার প্রোডাক্ট বাজারজাত করতে সক্ষম হবেন।

সম্প্রতি তন্ময় কুমার ঘোষ সিনজেনটা-ইউএসএআইডি কানেকশন প্রোগ্রাম ২০১৭ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। এই কানেকশন প্রোগ্রামটি আগামী ২৫ জুন ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশ থেকে তিনজন নির্বাচিত ছাত্রের মাঝে তিনি একজন। পাশাপাশি তিনি ইউএসএআইডি’র ‘ফিড ফর দা ফিউচার এশিয়া’ নামক একটি প্রকল্পে ইন্টার্নশিপের অফার পেয়েছেন। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক সংগঠন পদচিহ্নে রয়েছে তার পদচারণা। ভালো নাচতেও পারেন তিনি।

তন্ময় জানান, তার এই অর্জনগুলোর পেছনে ড. মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের তার প্রিয় শিক্ষক বিষাণ লাল দাস চৌধুরী ও মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন অনেক অবদান রয়েছে।

জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করা জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। আমি মনেপ্রাণে সমাজ, দেশ ও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে এবং ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করতে চাই।

(ওএস/এসপি/জুন ০৯, ২০১৭)