স্বাস্থ্য ডেস্ক : উদ্ভিদের বিবর্তনের ইতিহাস বড় প্রাচীন। ডাঙায় উদ্ভিদ জন্মে ৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে। কিন্তু হাঙর তারচাইতেও বেশি বয়স্ক। ক্রেটেশাস যুগের আগে দেখা দেয়নি ফুল, আর ঘাস গজানো শুরু করেছে মাত্র ৪০ বছর আগে।

এই লম্বা সময়ের মাঝে ধীরে ধীরে উদ্ভিদের মাঝে দেখা দিয়েছে অনন্য সব বৈশিষ্ট্য। ইউনিভার্সিটি অফ বার্মিংহামের একটি নতুন গবেষণায় দেখা যায়, উদ্ভিদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো তার “মস্তিষ্ক”। প্রাণীদের মস্তিষ্কের মতো সেটা আলাদা একটা অঙ্গ নয়, বরং একগুচ্ছ কোষ যারা নির্দেশনা দেওয়ার কাজটা করে।

উদ্ভিদের ভ্রূণে দেখা যায় এসব কোষ যারা ওই গাছের জীবনচক্রের ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, অঙ্কুরোদগম শুরু করে তারা। এই কাজটি খুব সময় মেনে হওয়া দরকার। কারণ বেশি আগে অঙ্কুরোদগম হলে শীতে মারা যাবে, বেশি দেরি হলে গরমে সেদ্ধ হয়ে যাবে নমনীয় অঙ্কুর।

প্রসিডিংস অফ দা ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস এ প্রকাশিত হয় এই গবেষণা। অ্যারাবিডপসিস নামের একটি উদ্ভিদে প্রথম এসব কোষের উপস্থিতি শনাক্ত করেন গবেষকেরা। এই “মস্তিষ্ক” দুই ধরণের কোষ দিয়ে গঠিত। একটি ধরণ কোষদেরকে সুপ্ত থাকতে নির্দেশ দেয় আর আরেকটি ধরণ অঙ্কুরোদগমের সূচনা করে।

হরমোনের সাহায্যে যোগাযোগ বজায় রাখে এসব কোষ, যা কিনা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষেরাও করে। তারা আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য নেয় এবং কখন অঙ্কুরোদগমের উপযোগী পরিবেশ আছে তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি উদ্ভিদের মাঝে পর্যবেক্ষণ করাটা খুবই শক্ত। এ কারণে গবেষকেরা গাণিতিক কাঠামো ব্যবহার করে দেখেন এই জৈবিক প্রক্রিয়াটি কীভাবেপরিচালিত হয়।


গবেষকেরা দেখেন হরমোন আদান-প্রদানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় অঙ্কুরোদগমের প্রক্রিয়াটি। এরপর তারা অ্যারাবিডপসিস উদ্ভিদের একটি বিশেষ ধরণ ব্যবহার করেন যাতে কোষগুলোর মাঝে হরমোনের চলাচল ভালো করে বোঝা যায়। সবশেষে তারা দেখেন, “মস্তিষ্কের” কোষগুলো এভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করছে।

কিন্তু এই “মস্তিষ্কে” দুই ধরণের কোষ কেন? এক ধরণের নয় কেন? গবেষকদের মতে, দুই ধরণের কোষ থেকে দুই ধরণের “মতামত” পাওয়া যায় এবং দুই ধরণের কোষের মতামত এক হলেই অঙ্কুরোদগম হয়। তাই বলা যায় হ্যাঁ, উদ্ভিদের মস্তিষ্ক নেই বটে, কিন্তু তাদের কাজ থেকে মনে হয় আছে।

(ওএস/এসপি/জুন ১৩, ২০১৭)