বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় ১৯৭৫ এর দশকে ভোলা নদীর পাশ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে বেড়ীবাঁধ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে টেকশই ভাবে নির্মানের কাজ চলছে। এই বাঁধ নির্মানে শরণখোলা উপজেলাধীন ৩৫/১ পোল্ডারের ভেরীবাঁধের প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা সামাজিক বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে বনবিভাগ। অভিযোগ রয়েছে, ওইসব গাছের ৮০ শতাংশের মালিক পরিচর্যাকারী উপকারভোগীদের না জানিয়ে বনবিভাগের কিছু লোভী কর্মকর্তা নিলামে ক্ষমতাসীন দলের বিক্রীকরে দেয়। এরপর মূল ঠিকাদারের সাথে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় স্বার্থেনেষী কিছু নেতা কর্মীরা জোট বেঁধে উপজেলার প্রশাসনকে অবহিত না করে তাদেও নিলামকৃত গাছসহ এলাকাবাসির গাছও কেটে নেয়া শুরু করে। এমনকি বাঁধের উভয় পার্শের বিভিন্ন প্রজাতির গাছসহ তাল গাছ লুটপাটে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে নিলামকারীরা। এতে স্থানীয়দের অনেকে বাঁধা দিয়ে নিলামের কাগজপত্র দেখতে চাইলে নিলাম ক্রয়কারী দলের সদস্যরা তাদের উপর চড়াও হচ্ছে। এমনকি তারা তালগাছ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করে চলছে তালগাছ লুটপাটের মহাৎসবও।

বিষয়টি নিয়ে বাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর লুৎফর রহমান ওই এলাকার পুলিশ ফাড়ী, বনবিভাগে অভিযোগ করলে তাকে দেখে নেয়ার হুমকী দিয়েছে লুটকারী দলের সদস্য উত্তর রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ রুস্তম আলী হাওলাদার। এ ব্যাপারে, স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ জাকির হোসেন বলেন, তালগাছসহ বিভিন্ন বসতীর রেকর্ডীয় সম্পত্তির নানা ফলজ গাছ জোড় করে কেটে ফেলায় ক্ষতিগ্রস্থরা তার নিকট অভিযোগ করেছে। তবে নিলাম ক্রয়কারীদের নিকট বৈধ কাগজপাতি চাওয়া হলে তারা তা না দেখিয়ে ইতিমধ্যে লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ট্রলার যোগে সরুপকাঠী সহ দেশের বিভিন্ন মোকামে নিয়ে বিক্রি করে দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আবু রাজ্জাক বলেন, নিলামকারীদের পক্ষে গাছ পাচারকারী চক্রের হোতা মোঃ রুস্তম হাওলাদারের নেতৃত্বে একটি চক্র জোর পূর্বক বসতবাড়ীর বিভিন্ন গাছপালা কেটে তা পাচার অব্যাহত রেখেছেন।

বৈধ কাগজপাতি দেখতে চাইলে এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, যেখানে শ্রমিকরা তার নাম বলেছেন (ওই নেতা) সেখানে আবার কাগজপাতি দেখানোর দরকার কি? কারও কাছে কোন অভিযেগা করেও প্রতিকার মিলছে না। এছাড়া তাদের বসতবাড়ীর রেকর্ডীয় সম্পত্তির গাছ জোর করে কেটে নিতে চাইলে তিনি সম্প্রতি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি অভিযোগ করেন এবং ইউ.এন.ওর নির্দেশে গাছ কর্তন স্থগিত রাখেন নিলাম ক্রয়কারী দলের শ্রমিকরা।

নিলাম ক্রয়কারী দলের মুল ঠিকাদারে বক্তব্য পাওয়া না গেলেও তাদের পক্ষে ঠিকাদার মোঃ রুস্তম হাওলাদার বলেন, তিনি স্থানীয় এক নেতার নির্দেশে বাঁধের উভয় পার্শের গাছ শ্রমিকদের নিয়ে কর্তন করে যাচ্ছেন। নিলামের কাগজপত্রে কি নিয়ম রয়েছে তা তিনি জানেন না। প্রশাসন কিংবা সাধারন মানুষ কাগজপত্র দেখতে চাইলে তা একমাত্র মুল ঠিকাদার দেখাতে পারবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আলিফ রেজা বলেন, নিলাম ক্রয়কারীদের কেউ তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করেনি কিন্তু নিয়মের বাইরে এমনকি প্রধানমন্ত্রীর তাল গাছ রক্ষার নির্দেশ উপেক্ষা করে কোন ঠিকাদার গাছ কর্তন করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, সামাজিক বনায়নের পূর্বের কর্মকর্তার অপকর্মের কারনে সম্প্রতি তাকে সামাজিক বন বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বভার গ্রহন করতে হয়েছে। ওই ভেড়ীবাঁধের গাছ নিলাম নিয়ে নানা সমস্যার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। রেকর্ডীয় কারও সম্পত্তির গাছসহ নিয়মের বাইরে একটি গাছও কর্তন না হয় সেজন্য নিলাম ক্রয়কারীকে গাছ কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(একে/এএস/জুন ১৪, ২০১৭)