শামীম হাসান মিলন, চাটমোহর (পাবনা) : চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্যা ভিক্ষার পথ বেছে নিয়ে জীবন কাটানো গফুরোন্নেছাকে পুনর্বাসন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম শেহেলী লায়লা নিজ উদ্যোগে হত দরিদ্র সহায় সম্বলহীন অচল প্রায় এ মানুষটি দুই হাতে দুটি লাঠিতে ভর করে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা এই নারীকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

গফুরোন্নেছাকে বিধ্বস্ত কাঁচা ঘরটি সংস্কার করে আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য মালামালের বিবরণীসহ রেজিস্টারসহ ৩০ প্রকার নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করে পুর্ণাঙ্গ দোকান ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। এছাড়া তার বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে ফ্যান, লাইট দেওয়াসহ নলকূপ স্থাপন ও শৌচাগার তৈরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবেগ আপ্লুত গফুরোন্নেছার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। আবারও স্বপ্ন দেখছে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম শেহেলী লায়লা গফুরোন্নেছার নব নির্মিত ঘর ও দোকান উদ্বোধন করেন। এ সময় পার্শ্বডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ মোঃ আজাহার আলীসহ স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ইউএনও’র এমন অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন চাটমোহরের মানুষ।

চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের পার্শ্বডাঙ্গা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্যা গফুরোন্নেছা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ১৯৮৭ সালে পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে লড়াই করে সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

কিন্তু তার স্বামী মারা যাবার পর তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। বাবার রেখে যাওয়া ৩ শতাংশ জমির উপর বসবাস শুরু করেন তিনি। কিন্তু ২ বছর আগে স্ট্রোক করে রাজশাগী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায় সম্বল সব শেষ হয়ে যায় তার। এরপর বাড়ি ঘিরে আসেন। কিন্তু প্রতিদিন তাঁর চিকিৎসার জন্য যে অর্থের দরকার সেটা জোগাতে পারেনন। বাধ্য হয়ে নামেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। সাবেক এক মহিলা মেম্বর হয়ে যায় ভিক্ষুক।

বিধবা ভাতার যে অর্থ পেতেন তা দিয়ে এবং ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন গফুরোন্নেছা। সাবেক এই ইউপি সদস্যার ভিক্ষাবৃত্তি ও অসহায়ত্বের কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেহেলী লায়লা। তিনি তাঁকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। একই সাথে পাবনা জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদপ্তরও তার সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।

পাবনা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মমিন জানান, গফুরোন্নেছার সহায়তায় আর্থিক সাহায্য দেবার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। পাবনা জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো তাকে নগদ অর্থ প্রদান করেন।

(এসএইচএম/এসপি/জুন ১৬, ২০১৭)