স্টাফ রিপোর্টার : টানা চার দিন জলাবদ্ধ বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। রাস্তা-ঘাটের পাশাপাশি বাড়ি-ঘরেও উঠেছে পানি। নগরবাসীর ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। এর মাঝে কাউকে কাউকে দেখা গেছে জাল নিয়ে রাজপথে।

সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর মোহাম্মাদপুর এলাকায় সখের বশে মাছ ধরতে দেখা যায় কয়েকজনকে। মাছও পাওয়া যাচ্ছিল তখন। আশেপাশের বহুতল ভবনের বাসিন্দারা মাছ ধরা দেখতে ভিড় করে বারান্দা আর জানালায়।

সৌখিন জেলেরা জানান, বাসায়ও কোমর পানি। গত চার দিন পানিবন্দি। কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। রান্না-বান্না, নাওয়া-খাওয়া প্রায় বন্ধ বললেই চলে। এর মাঝে ঘর ও রাস্তায় মাছ দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনি।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রাসেল জানান, ছোটবেলায় গ্রামে মাছ ধরার কথা মনে পড়ায় বন্ধুদের সাথে জাল নিয়ে রাস্তায় নামলাম। কিছু মাছও পাওয়া গেছে। শুধু রাস্তা নয়; ঘরের পানিতেও মাছ দৌঁড়া-দৌঁড়ি করছে। মেয়েরাও চেষ্টা করছে সেই সব মাছ ধরতে।

এই আনন্দের মাঝেও ভোগান্তির জন্য নগর কর্তৃপক্ষের প্রসঙ্গ তুলতেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন সৌখিন জেলে রাসেল, আরফাত ও শাওনসহ আরও কয়েকজন।

আরফাত বলেন, নতুন মেয়র পেয়েছি সাড়ে তিন বছর। কই, কাজের কাজ তো কিছু দেখছি না। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় রাস্তা-ঘাটে। আর ভারী বর্ষণ হলেতো কথায় নেই। প্রতিটি ভবনের নিচের তলা প্রায় তলিয়ে যায়। রাস্তায় রিকশা ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি থাকে না। নিত্য পণ্যের দাম বাড়ে লাগামছাড়া। এর মধ্যে বেশির ভাগ সময়ে থাকে না বিদ্যুৎ। তীব্র সংকট হয় খাবার ও রান্নার পানির।

জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে গতকাল রোববার কথা হয় বহদ্দারহাট বাজারের ব্যবসায়ী মাহবুবের সঙ্গে।

তিনি বলেন, মঞ্জুর আলম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত চাক্তাই খাল ও আশেপাশের অন্যান্য খাল সংস্কারের তেমন কোনো কাজ করেনি। খাল খনন ও এর সংস্কার কাজ না করার ফলে নগরীতে প্রতি বছর জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় নগরীতে। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়ক।

গত পাঁচ দিনের টানা বর্ষণে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটে। গত শনিবার পাহাড় ধসে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পাহাড়ে ও পাহাড়ের ধারে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২০০ মিলিমিটার।

এর আগে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার, শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২৭৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার এবং শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩২৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।