কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা সরকার বিরোধী প্রপাগন্ডায় মেতে উঠেছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে এই সংস্থার সদস্যরা। পাশাপাশি সংগঠনের শক্তির বৃদ্ধির জন্য নানা অপ কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে জামায়াতের এই ছাত্রী সংস্থাটি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে নিজেদের দিকে টানছেন। ইসলামের পথে দাওয়াত নামে চলছে এই কার্যক্রম। তিন ধাপে চলছে এই সংস্থার দাওয়াতী কার্যক্রম।

প্রথম ধাপে দাওয়াত এরপর সংগঠন ও প্রশিক্ষন দেওয়া। সর্বশেষ ধাপে সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিগত কিছু কার্যক্রম পরিচালনা। দাওয়াতী কার্যক্রমে রয়েছে ছাত্রীদের ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিকভাবে ইসলামী জ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা, সাপ্তাহিক ও মাসিক সাধারন সভা, তাফসির ক্লাস, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম। শিক্ষা বৈঠক, নৈশ ইবাদত ও শিক্ষা শিবিরের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ।

সর্বশেষ ধাপে ছাত্রীদের সমস্যা সমাধানে ছাত্রী কল্যাণ ফান্ড, লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা, নোট ও প্রশ্নপত্র বিলি এবং ফ্রি কোচিং ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে লিফলেটে। সংগঠনের কর্মীদের আর্থিক সাহায্য, শুভাকাঙ্খী সুধীদের আর্থিক সহযোগীতা , বিদেশী এনজিও’র অনুদান ও সংস্থার প্রকাশিত পুস্তিকার বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে এসব কার্যক্রমের আয়ের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের সব সরকারী-বেসরকারী বালিকা বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় চলছে এদের কার্যক্রম। পাশাপাশি বাসায় বাসায় গিয়েও এরা চালাচ্ছে সরকার বিরোধী প্রপাগন্ডা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার আমেনা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর এক ছাত্রী জানিয়েছেন, গত কয়েকমাস ধরে কয়েকজন বড় আপু ইসলামী বই, লিফলেট ও চকলেট বিতরণ করছেন। তারা বলছেন, ইসলামে নারীদের যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে উপযুক্ত অধিকার। আর এ অধিকার আদায়ে ছাত্রী সংস্থার বিকল্প নেই।

কক্সবাজার জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর একই মন্তব্য করেন। শহরের সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রী জানিয়েছেন, গত মাস ছয়েক যাবৎ বিদ্যালয় ছুটির সময় কয়েকজন বড় আপু তাদের স্কুলের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর তাদের সাথে পরিচিত হয়। তারপর ছাত্রী সংস্থায় যোগ দিতে বলে ওই নারীরা। এ সময় ওই বিদ্যালযের ছাত্রীদের বাগে আনতে আর্থিক প্রলোভনও দেখানো হয বলে দাবী করেছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

কক্সবাজার সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুর নাহার জানিয়েছেন, মাস ছয়েক আগে কয়েকজন বোরকা পরিহিত নারী স্কুল ছুটির পর ছাত্রীদের নিয়ে বসার চেষ্টা করেছিল। এ সময় তাদেরকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

শুধু বিদ্যালয়ে নয় ছাত্রীদের বাগে আনতে ওরা বাড়িতেও ছুটছেন। প্রলোভনের ফাদ পাতছেন বাবা- মার জন্যও। শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া এক ছাত্রীর মা নাসরিন জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে ২ জন বোরকা পরিহিত নারী বাসায় এসে তার মেয়েকে ছাত্রী সংস্থার জন্য কাজ করতে বলেন। বিনিময়ে তাকে প্রতিদিন ৩ শত টাকা বেতন দেওয়া হবে বলেও জানিযেছেন ওই নারীরা।

এদিকে গত কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিফলেট বিতরন করছে ওই সংস্থার কর্মীরা। লিফলেটে উল্লেখ রয়েছে আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে আরো বলা হয়েছে যখন মানব রচিত মতাদর্শ জীবনের সর্বত্রই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, প্রগতির নামে উশৃঙ্খলতা যখন নারী সমাজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও উন্নতির পথকে করেছে রদ্ধ, তখন আর বসে থাকা নয়, প্রতিটি আত্মসচেতন বিবেকবান ছাত্রীদেরই প্রয়োজন ইসলামী জীবন আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা।

আর এ এগিয়ে আসায় সহযোগী হবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। ছাত্রীদের যেকোন গঠনমূলক দাবি আদায়েও এ সংগঠন কাজ করবে বলে লিফলেটে উল্লেখ করা হয়।

লিফলেট বিতরনের পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগীয় সম্পাদিকা আয়েশা সিদ্দীকা স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা বিতরণ করা হচ্ছে। আর নির্দেশনাটি শুধুমাত্র যারা তাদের দাওয়াত গ্রহন করেছে তাদেরকেই দেওয়া হচ্ছে। নির্দেশনায় সাংগঠিনক কার্যক্রমকে জোরদার করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোরআনের দাওয়াতের মাধ্যমে ৫ জন বন্ধু সার্কেল তৈরী করে যেকোন কিছুর বিনিময়ে ২ জনকে প্রাথমিক সদস্যা ও ১ জনকে কর্মী বানানোর কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, অতি দ্রুত রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার যাত্রা শুরু হয়। এটি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন।

(টিটি/এসএস/এপ্রিল ১০, ২০১৪)