ডেস্ক রিপোর্ট : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার রায় হবে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায়ের এ দিন ধার্য করেন।

৪২ বছর আগে সংঘটিত কোনো অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি তৎকালীন ছাত্র নেতা নিজামীর এই রায় হচ্ছে, যিনি একাত্তরের কুখ্যাত গুপ্তঘাতক বাহিনী আলবদরের প্রধান ছিলেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের মতো ১৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে একটি বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যেখানে ওইসব ঘটনায় তাকে উস্কানিদাতা ও পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিজামীকে এসব ঘটনার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

তবে, মাওলানা নিজামীর পক্ষ থেকে বরাবরই ওইসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নিজামীর আইনজীবীরা মনে করেন, আসামির বিরুদ্ধে আনা একটি অভিযোগও রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড গণহত্যা হবে এ নিয়ে আসামিপক্ষের দ্বিমত নেই। কিন্তু ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজামীর সংশ্লিষ্টতা দেখাতে হবে। কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ আনতে পারেনি।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে নিজামীর বিরুদ্ধে মামলাটির বিচার। ২০১২ সালের ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। একই দিনে ট্রাইব্যুনাল-২-এ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলার বিচার শুরু হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর ওই মামলার আপিল নিষ্পত্তি ও রায় কার্যকর হয়ে গেছে।

মামলাটির দীর্ঘসূত্রতার কয়েকটি কারণও রয়েছে। এ মামলায় ১৭ মাস ধরে ৩০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। নিজামী ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলারও আসামি হওয়ায় গত বছর ওই মামলার জন্য তাঁকে সপ্তাহে দুই দিন চট্টগ্রামে নেওয়া হতো। ওই মামলায়ও তাঁর দণ্ড হয়েছে। ১৩ নভেম্বর প্রথম দফায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটির রায় অপেক্ষমাণ রাখা হলেও ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন চলে। রায় ঘোষণার আগেই ৩১ ডিসেম্বর অবসর নেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর। ২৩ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ১০ মার্চ থেকে দ্বিতীয় দফায় সমাপনী যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়, শেষ হয় ২৪ মার্চ। নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন প্রভৃতিসহ ১৬ অভিযোগ রয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর আগে, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার রায় দিয়েছেন। তিনটি মামলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

(ওএস/এইচআর/জুন ২৪, ২০১৪)