আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সুইস ব্যাংকে যেসব ভারতীয় অর্থ জমিয়েছেন, তাদের তালিকা নয়াদিল্লিকে দেবে সুইজারল্যান্ডের সরকার। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয়দের রাখা মোট অর্থের পরিমাণ ১৪ হাজার কোটি রুপি। সোমবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে যেসব ভারতীয় নাগরিকের অবৈধ সম্পদ রয়েছ, তার একটি তালিকা প্রস্তুত করছে সুইস কর্তৃপক্ষ।

কালো টাকা তদন্তে ভারতের নতুন সরকার বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছে। ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, সুইজারল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। দেশটির সরবরাহ করা তালিকা ও তথ্য কালো টাকাধারী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা এবং বিদেশ থাকা কোটি কোটি ডলার দেশে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। সুইস সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, তালিকায় সুইস ব্যাংকগুলোতে ব্যক্তিগত আমানতকারী হিসেবে যাদের নাম রয়েছে, তাদের এবং সংস্থা বা ট্রাস্টের নামে থাকা অ্যাকাউন্টগুলোর ব্যাপারে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

অ্যাকাউন্টে নাম থাকা এসব ব্যক্তি বা সংস্থার আড়ালে প্রকৃতপক্ষে কারা রয়েছেন এবং কারা লাভবান হচ্ছেন তা খুঁজে বের করাই এই নজরদারির উদ্দেশ্য। তবে ব্যক্তিগত আমানতকারী হিসেবে সুইস ব্যাংকগুলোতে যাদের নামে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এমনকি সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ট্রাস্টের নামও প্রকাশ্যে আনতে চান না তিনি। মুখ খোলেননি গোপন অ্যাকাউণ্টগুলোতে তাদের লুকিয়ে রাখা টাকার পরিমাণ নিয়েও। তালিকাটি ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে কি না তা জানতে চাওয়া হলে ওই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এই নিয়ে ভারতের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করবে সরকার। সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের লুকোনো কালো টাকা নিয়ে ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে সুইস সরকার যথেষ্ট আগ্রহী বলেও তিনি জানান।

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সারা দুনিয়া থেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় মোট গচ্ছিত অর্থ কমলেও ভারত ও বাংলাদেশ থেকে তা বেড়েছে। ভারতীয়রা সুইস ব্যাংকে সরাসরি জমা রেখেছেন ১.৯৫ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। বাকি ৭৭.৩ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ তারা রেখেছেন ‘সম্পদ ব্যবস্থাপকের’ (ওয়েলথ ম্যানেজার) মাধ্যমে। সুইজারল্যান্ডের মোট ২৮৩টি ব্যাংকে এসব কালো টাকা গচ্ছিত রয়েছে। ২০১৩ সালে ভারতীয়দের জমা অর্থের বৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) আমানতকারীদের জমা অর্থসংক্রান্ত যে তালিকা প্রকাশ করে, তাতে ভারতীয়দের লুকানো টাকার পরিমাণ হিসেবে এ তথ্য দেয়া হয়।

ক্ষমতায় এসেই কালো টাকা উদ্ধারের জন্য সাবেক বিচারপতি এমবি শাহর নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে মোদি সরকার। নরেন্দ্র মোদির আগের জমানাতেও বিদেশের ব্যাংকে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধারে সক্রিয় হয়েছিল ইউপিএ সরকার। বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালীন লালকৃষ্ণ আদভানি কালো টাকা নিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছিলেন। তার অন্যতম সদস্য ছিলেন অজিত দোভাল। তিনি বর্তমানে মোদি সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের গচ্ছিত কালো টাকার পরিমাণ আরও অনেক বেশি। যদিও এ ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

(ওএস/এইচআর/জুন ২৪, ২০১৪)