কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : গত বছরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তবে ঠেকানো যায়নি হামলা। মুসল্লি বেশে ঈদগাহে প্রবেশের চেষ্টার সময় পুলিশের তল্লাশির মুখে পড়ে দুই জঙ্গি। আর তখনই পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। গত বছর ঈদুল ফিতরের দিনে শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনা মাথায় রেখে এ বছর নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঈদের দিন বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে হবে। এরই মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিভিন্ন সড়ক দিয়ে শোলাকিয়া মাঠে প্রবেশ করতে হলে মুসল্লিদের পাঁচ থেকে ১০ বার নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশির মুখে পড়তে হবে।

এবার শোলাকিয়ায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশ, এপিবিএন, আনসার-ভিডিপি ছাড়াও এবারই ঈদুল ফিতরের জামাতে প্রথম বারের মতো পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে। এরই মধ্যে শোলাকিয়ায় পৌঁছেছেন বিজিবি সদস্যরা। গত সপ্তাহ থেকেই মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এবার জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছুই সঙ্গে নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না মুসল্লিরা। আর অন্য বারের মতো আাগে থেকেই মাঠের ভেতরে কিংবা মিম্বরে দূরের মুসল্লিদের অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দূরের মুসল্লিদের থাকার জন্য পাশ্ববর্তী আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এসব কিছুই করা হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তার সার্থে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, ঈদের জামাত নির্বিঘ্নে করতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি থাকছে বিজিবি ও সাদা পোশাকের নিরাপত্তা বাহিনী। মাঠের প্রতিটি প্রবেশ পথে থাকছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। মাঠের প্রবেশের সবগুলো পথে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশির পর মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। মাঠের চারপাশে কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার ছাড়াও এবার ঈদগাহের মাঝখানে একটি উঁচু ওয়াচ টাওয়ার থাকবে।

এদিকে ১৯০ তম ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে এখানে। ঈদ জামাত শুরু হবে সকাল ১০ টায়। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে সব প্রস্তুতি। দূরের মুসল্লিদের জন্য থাকছে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে মাঠের সংস্কার কাজ। মাঠে লাইন টানা, দেয়ালে চুনকাম, ওজুখানা মেরামতসহ সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

কয়েক দফা মাঠের সংস্কার কাজ ও সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দীন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান, পৌর ষবার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদসহ অন্যরা।

গত বছর শোলাকিয়ার অদূরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল জঙ্গিরা। তাই এবার প্রথম রোজা থেকেই বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে বাড়তি নজর দিচ্ছে পুলিশ। নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদের দিন পর্যন্ত নতুন ভাড়াটেদের কাছে বাড়ি ভাড়া দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকা ছাড়াও উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন চলছে পুলিশের ব্লক রেইড। এলাকাবাসীকে সচেতন করে মাইকিং করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রচার মাধ্যমে চলছে বিজ্ঞাপন। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করছে পুলিশ।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার শওকত জাহান বলেন, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাড়ির মালিকদের নিয়ে সভা করেছি। জুন মাসে নতুন কোনো ভাড়াটে উঠানো হবে না। আর বিভিন্ন বাড়ি ও মেসে অবস্থানরত ভাড়াটেদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ঈদের শেষ ১০ দিন শোলাকিয়া এলাকার প্রতিটি বাড়িতে তল্লাশি চলছে। এসব এলাকায় বসবাসকারী বাইরের ভাড়াটেদের স্থায়ি ঠিকানায় খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে শোলাকিয়া ঈদগাহে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক কথায় কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই এবার ঈদের নামাজ শেষ হবে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দীন বিশ্বাস জানান, ঈদের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া। তবে ঈদের দিন বৃষ্টি হলো সমস্যায় পড়বে মুসল্লিরা। মাঠে নামাজ আদায় করতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

তিনি আরও জানান, গত বছর ঈদের দিন শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। ঈদের দিন শোলাকিয়াসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কাজ করবে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি।

(ওএস/এসপি/জুন ২৩, ২০১৭)