মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়রা ডাইক ও বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টের কাছে কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রভাবশালীরা সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। ফলে জনসাধারণের মধ্যে আশংকা বিরাজ করছে যেকোন মুহুর্তে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়রা ডাইক ও বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টের ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বড় ধরনের অকাল বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। নদী থেকে বালু উঠানোয় তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, আবাদি জমি এবং বাড়িঘর ধসে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগীরা বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব অবৈধ বালু উত্তোলনকারী সংস্থা তালুকদার এন্টারপ্রাইজের বলগ্রেড, নৌকা আটক করে আর্থিক জরিমানা ও মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দিলে তারা আবারো অবৈধ বালু উত্তোলন শুরু করে।

নবীগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে খননযন্ত্রের সাহায্যে বালু তোলা হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ কারণে উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টসহ ঐ এলাকার পাহাড়পুর,পারকুল বনগাঁও ও ব্রাম্মনগ্রামের শেরপুর লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। আশংকার মধ্যে রয়েছে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট। বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টের অভিযোগে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট এলাকায় মৌলভীবাজার জেলা সদরের তালুকদার এন্টারপ্রাইজের এর ঠিকাদার বিবিয়ানা প্লান্ট পার্শ্ববর্তী কুশিযারা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন।

এ বালু একই এলাকার পার্শ্ববর্তী অর্থনৈতিক জোন শ্রীহট্রতে সরবরাহ করছে। নদীর পানিতে ছোট জাহাজে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে গভীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী পাড়ে ১০টি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। আশপাশের আবাদি জমি ও বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে তাদের পরিবেশ বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।

উপজেলার শেরপুর এলাকার অলিউর রহমান ও আশরাফ আলী বলেন, এভাবে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বর্সা মৌসুমেই তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী তীরবর্তী বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট বাড়িঘর ও আবাদি জমি হুমকির মুখে রয়েছে। এর আগে একই কারণে তাদের অনেক বাড়িঘর ও জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে তাদের অবশিষ্ট জমি ও বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট বিলীন হয়ে যাবে।

স্থানীয় মেম্বার দুলাল মিয়া দাবি করেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বালু ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

পাহাড়পুর গ্রামের রোজিনা বেগম বলেন, বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টের উত্তর পশ্চিম পাশে পাশে একটি কার্গো জাহাজ রয়েছে। সেটি থেকে পাইপের সাহায্যে বালু তোলা হচ্ছে। জাহাজের সঙ্গে একটি খননযন্ত্র (ড্রেজার) রয়েছে। ফলে আমাদের গ্রামের চরম ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

ওই জাহাজের লস্কর, সারেং ও শ্রমিকেরা বলেন, জাহাজটি মৌলভী বাজার জেলার আশরাফ হোসেনের তালুকদার এন্টারপ্রাইজের নামে বালু উত্তোলন করছে। জাহাজের কর্মচারীরা যন্ত্রের সাহায্যে নদী থেকে বালু জাহাজে তোলেন। পরে জাহাজ থেকে শ্রীহট্র (শেরপুর) অর্থনৈতিক জোনে সরবরাহ করা হয়। প্রতি দিন কয়েক লক্ষ ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। বালুখেকোরা নদী থেকে বালু উত্তোলন করার জন্য হুমকির মূখে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টসহ ১০টি গ্রাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারী কর্মকর্তা বলেন “ আমরা অসহায় কিছু রাঘব বোয়ালদের কাছে,তারা উপর মহলে ম্যানেজ করে আমাদের চাপে রেখে অবৈধ কওে যাচ্ছেন”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জীতেন্দ্র নাথ বলেন, কুশিয়ারা নদীতে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন নেই। যদি কেউ তুলে থাকেন, তা অবৈধ। তিনি বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত শুক্রবারও নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। নবীগঞ্জের সীমান্তবর্তী শেরপুর লঞ্চের যাত্রী আইনুদ্দিন বলেন, সরকার লঞ্চঘাটের পল্টুন দিয়েছে, কিন্তু ভাঙনে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন যাত্রীরা চরম ভোগান্তির নিয়ে লঞ্চে ওঠানামা করছেন। বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা বিভাগের পরিদর্শক নাসিম বলেন, ঘাটটি সংস্কারে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

বালু উত্তোলনকারী তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী আশরাফ হোসেন বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে বালু উত্তোলন করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি তার নৌকা ও বলগ্রেড আটকের কথা স্বীকার করেন। তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কাজ করছেন।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়নবোর্ডের প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বলেন বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা সাধারণত যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করেন। এ কারণে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়ে থাকতে পারে। আশপাশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে ভাঙন আরও বৃদ্ধি পাবে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার বলেন, নদী ও খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছেন। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিনসহ নৌকা আটক করে আর্থিক জরিমানা হয়েছে। আবারো যদি নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এমআরএম/এসপি/জুন ২৪, ২০১৭)