বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষা না করে স্বেচ্ছাশ্রমে মৌলভীবাজারের বড়লেখা-ডিমাইবাজার সড়কে টিলা ধসের মাটি সরিয়ে ফেলছেন এলাকাবাসী। গত বুধবার রাত থেকে মাটি সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এই রাস্তার উপর মাটি থাকায় উপজেলা সদর (বড়লেখা) ইউনিয়নের ডিমাই এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ অনেকটাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জুন রাতে অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা-ডিমাইবাজার সড়কের বন বিভাগের অফিসের সামনে প্রায় ৫০০ ফুট এলাকায় টিলার মাটি ধসে পড়ে। এতে এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাল বন্ধ হয়ে যায়। পায়ে চলারও অবস্থা থাকেনি। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী অনেকটাই গ্রামের মধ্যে আটকা পড়েন। এই সড়ক দিয়েই ডিমাই এলাকার মানুষ উপজেলা সদরে আসা যাওয়া করেন। ডিমাই এলাকায় সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তিনটি ওয়ার্ড রয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এই অবস্থায় সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সিরাজ উদ্দিন এলাকার জনসাধারণকে সাথে নিয়ে রাস্তার উপর থেকে মাটি অপসারণের কাজ শুরু করেন।

এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আলো জ্বালিয়ে গত বুধবার রাতে বড়লেখা-ডিমাইবাজার সড়কের উপর পড়ে থাকা মাটি সরানোর কাজ শুরু করা হয়। প্রথম রাতেই প্রায় ২০০ লোক এবং পরের দিন বৃহস্পতিবার রাতে আরও দেড়শ লোক কোদাল নিয়ে কাজে অংশ নেন। রোজার কারণে রাতের বেলাতেই কাজ হয়েছে।

দুদিনের কাজে পায়ের চলার পথ তৈর হয়েছে। কিন্তু যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। এদিকে দ্রুত কাজ শেষ করতে নগদ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতে অনেকে। আব্দুল¬াহ নামে একজন ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও ২০ হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নগদ টাক পাওয়ায় শনিবার এস্কাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) ভাড়া এনে মাটি সরানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। এই এস্কাভেটর দিয়ে কাজ করালেও সড়ক পুরোপুরি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। মানুষ করলে লাগবে এক মাস।

রাস্তা পরিস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের জরুরি তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে এখনো দেওয়া হয়নি। বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সোয়েব আহমদ রাস্তা পরিস্কার করার জন্য নগদ ৬ হাজার টাকা দিয়েছেন।

সদর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সিরাজ উদ্দিন শনিবার বলেন, ‘ডিমাই এলাকাতে তিনটা ওয়ার্ডে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বাস। মাটি ধসে পাড়ায় রাস্তা দিয়ে পায়ে চলারই উপায় ছিল না। স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি সরানোর কারণে এখন পায়ে হাঁটার একটা ব্যবস্থা হয়েছে। এলাকার বিত্তশালীরা টাকা দিচ্ছেন। এ জন্য এস্কাভেটর দিয়ে কাজ শুরু করেছি। আজকেও (গতকাল শনিবার) কাজ চলছে। এত মাটি। তা সরাতে অন্ত দেড়-দুই লাখ টাকা লাগবে। প্রশাসন থেকে কিছু প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।’

বড়লেখা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সমীর বিশ্বাস শনিবার বলেন, ‘উনারাই স্থানীয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। কাজ চলমান আছে। স্থানীয়ভাবে কিছু ফান্ড করছেন। ডোনাররাও টাকা দিচ্ছেন। প্রশাসনেও আবেদন করা হয়েছে। তবে প্রশাসন থেকে এখনো দেওয়া হয়নি। শ্রীঘ্রই দেয়া হবে।’

(এলএস/এএস/জুন ২৪, ২০১৭)