ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : বেশ কিছুদিন ধরে ঠাকুরগাঁও শহরের বিভিন্ন সড়কে ব্যানার, ফেস্টুনে কিছু লেখা নিয়ে এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। কিছু মানুষ ওই ব্যক্তিকে দেখে উপহাস করে এড়িয়ে যাচ্ছে আবার অনেকেই কাছে গিয়ে সেই সব ফেস্টুনের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ছে।

শনিবার বিকেলেও ঠাকুরগাঁওয়ের চৌরাস্তায় ওই ব্যক্তিকে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের।

কাছে গিয়েফেস্টুনের লেখা দেখা গেল “আসুন দেশকে এগিয়ে নিতে কিছু অবদান রাখি। গড়ে তুলি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ওই ব্যক্তি সামাজিক আন্দোলনে রাজপথে নেমেছেন।

জিজ্ঞেস করে জানা গেলো, তার নাম আমিনুল ইসলাম তিতাস। বাসা ঠাকুরগাঁও শহরের আর্ট গ্যালারী এলাকায়। তিনি গাজীপুর সরকারী মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শৈশব কেটেছে ঠাকুরগাঁও শহরেই। ১৯৯০ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হোন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজে গণিত বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তার স্ত্রী’ও কলেজের শিক্ষক। স্ত্রীর উচ্চ শিক্ষার সূযোগে গিয়েছিলেন জাপানে। সেই সুবাদে আমিনুল ইসলামের জাপানে যাওয়ার সুযোগ হয়। জাপানকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখে তিনি তার মাতৃভূমির অপরিচ্ছন্নতা দূর করার অঙ্গীকার করেন মনে মনে।

কলেজ শিক্ষক তিতাস তার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য একাই সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টির জন্য নিজের তৈরি আন্দোলন উপকরণ নিয়ে নেমেছেন রাস্তায়। আর তাকে দেখতে রাস্তার দুই পাশে ভীড় করেছেন উৎসুক জনতা। কেউ হাসছেন। আবার কেউ বা আন্দোলনকে সমর্থন করে মৌন সম্মতিও দিচ্ছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নেমেছেন। ফলে প্রশংসা আর নিন্দায় চলছে ওই শিক্ষকের সামাজিক পরিচ্ছন্ন চাই বাংলাদেশ আন্দোলন।

ঠাকুরগাঁও শহরের সমাজকর্মী মাসুদ আহমেদ সূবর্ণ জানান, নিঃসন্দেহে এটি একটি ব্যাতিক্রমধর্মী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমরা সকলে যদি শিক্ষক তিতাসের এই পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ি শ্লোগানকে সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে বেশিদিন আর সময় লাগবে না।

শহরের আশ্রমপাড়া এলাকার নাহিদ রহমান আকাশ জানান, ঠাকুরগাঁও শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে ওই নীতিবান শিক্ষকের সামাজিক আন্দোনের প্রতিকৃতি। তাকে দেখে আমাদের সকলের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা ইচ্ছে করলে নিজ নিজ উদ্যোগে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে উদ্যোগী হলে সুন্দর দেশ ও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। কলেজ শিক্ষক তিতাসকে স্যালুট জানাই এই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য।

আন্দোলনকারী কলেজ শিক্ষক আমিনুল ইসলাম তিতাস জানান, ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা একটি খারাপ অভ্যাস। কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী দ্বারা শহর পরিস্কার করা সম্ভব হয়ে উঠে না। আসুন, আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলি।

তিনি আরো জানান, সকলের সহযোগীতা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় ডুয়েট হবে বাংলাদেশের প্রথম পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস। শুধু ডুয়েট নয় এভাবেই বাংলাদেশ হোক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ। আর আমি ঠাকুরগাঁওয়ের সন্তান তাই এই জেলা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছি। আসুন, নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই সচেতন হই। গড়ে তুলি স্বাস্থ্যকর ও মানুষের বসবাস উপযোগি সুন্দর পৃথিবী ।

(এআআর/এএস/জুন ২৪, ২০১৭)