প্রবীর সিকদার


আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্মীয় উৎসব মানুষের মনের উদারতা বিকশিত করার পাশাপাশি সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় করে। শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওই মহৎ বাণী দেশের সকল মানুষকে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর মানুষকে খুবই উজ্জীবিত করেছে। আশা জাগানিয়া ওই বাণীর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই। ওই অবস্থানে থেকে এমন কথা তার মুখেই সম্ভব।

একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যার যা ছিল তাই নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি। ৩০ লাখ মানুষের রক্ত, কয়েক লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও কোটি কোটি মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের ভেতর দিয়ে জন্ম নিয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ এগিয়েও যাচ্ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে খুন করে একাত্তরের সেই বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানিয়েছিল খুনি মুস্তাক-জিয়া চক্র। সেই থেকে পাকিস্তানী ভাবধারায় দেশ চলেছে টানা ২১ বছর। এমনকি একাধিকবার সংবিধান কাটাছেড়া করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধই নয় শুধু, সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনে দেশকে একাত্তরের চেতনা থেকে সরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। এই দীর্ঘ সময় দেশে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন চূড়ান্ত অবহেলিত।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশ ফিরিয়ে আনতে দৃঢ়তার সাথে কাজ শুরু করেন।আবার ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান জয় বাংলা ও জয় বন্ধু। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথে অন্তরায় সকল কালাকানুন বাতিল করে শুরু হয় ঐতিহাসিক বিচার। ২০০৯ সালে আবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে একাত্তরের যুধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন। ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। মানুষের মনে আবার আশার সঞ্চার হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশকে আবার অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারায় পরিচালিত করে সুখী-সুন্দর-আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই।

দেশী-বিদেশি চক্রান্ত ও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু্র স্বপ্ন ও একাত্তরের চেতনা প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। কৌশলের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে ধর্মীয় মৌলবাদী একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে কিছু কিছু বিষয়ে সমঝোতা করে এগুতে হচ্ছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের অসাম্প্রদায়িক অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের বক্তব্যও স্পষ্ট, ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে সমঝোতা কিংবা আঁতাত করে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণ অসম্ভব।

হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণীটি আমি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ গঠনের সাহসী উচ্চারণ বলেই বিবেচনা করছি। সকল ধর্মের উৎসবকে ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের উৎসব হিসেবে দেখার এই যে মহৎ বার্তা শেখ হাসিনা মেলে ধরলেন, এটি নিছক বলা নয়; তিনি কাজেও সেটা প্রমাণ করবেন।

রাত পেরোলেই মহা আনন্দের ঈদ উৎসব। আমি আশা করবো, বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ বাণীতেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব তুলে ধরে বলবেন প্রাণময় সেই মহৎ বার্তা, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কেননা প্রধানমন্ত্রীর আসনে থেকে এমন সাহসী উচ্চারণ ও তার দৃঢ় বাস্তবায়ন কেবল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব।