নিউজ ডেস্ক : রাস্তার ধারে বড় তামার হাঁড়ি আর তার মুখে ময়দার প্রলেপ লাগানো দেখলেই মনটা ছোঁক ছোঁক করে। আর নাকে একবার সেই লাখ টাকার গন্ধটি গেলে তো কথাই নেই। হাজার ডায়েটিং, কোলেস্টেরল, ফ্যাটি লিভার সব গোল্লায় গিয়ে মাথায় শুধু উঁকি মারে চারটে অক্ষর। বিরিয়ানি।

না না করেও ঠিক পৌঁছে যান ভুরভুরে গন্ধ ওঠা রেস্তোরাঁটির কোনো না কোনো টেবিলে। এ বার সাদা ধবধবে প্লেটে লম্বা লম্বা হলুদ-সাদা চাল, নরম তুলতুলে আলু আর মাখোমাখো গোশতের জন্য কষ্টকর অপেক্ষা। আর পাতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিমেষে চালান হয়ে যাওয়া পেটের মধ্যে। এমন ভাবেই বিরিয়ানির জাদুতে মজে আট থেকে আশি।

কিন্তু কোথা থেকে এলো এমন মন ভালো করে দেয়া খাবারটি? কী ভাবেই বা বিরিয়ানির নাম বিরিয়ানি হলো? তার খোঁজ রাখেন না অনেকেই।

উপমহাদেশের লোকদের মধ্যে বিরিয়ানিপ্রেমীর সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। কিন্তু আদতে এখানকার খাবারই নয় এই বিরিয়ানি। পারস্য থেকে আমদানি হয়েছিল জিভে পানি আনা লোভনীয় খাবারটির। পার্সিয়ান শব্দ ‘বিরিয়ান’ কথার অর্থ হলো ‘রান্নার আগে ভাজা চাল’। সেখান থেকেই বিরিয়ানি কথাটির জন্ম।

অনেকে বলেন, তৈমুর লঙ্গের হাত ধরে ১৩৯৮ সাল নাগাদ ভারতবর্ষে এসেছিল বিরিয়ানি। মাটির পাত্রে চাল, মশলা আর মাংস মিশিয়ে একসঙ্গে রান্না করা হতো। তখন প্রধানত সৈন্যদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হতো বিরিয়ানির এই আদি ‘ভার্সন’। অন্য একটি মতে লঙ্গের বহু আগে ২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আরবের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে বিরিয়ানি আসে ভারতবর্ষে। তামিল সাহিত্যে ‘ওন সরু’ নামে এক ধরনের খাবারের উল্লেখ পাওয়া যায়। ভাত, ঘি, হলুদ, ধনে, মরিচ, তেজপাতা, গোশত দিয়ে তৈরি হতো এই খাবার। যার সঙ্গে আধুনিক বিরিয়ানির অনেকটাই মিল পাওয়া যায়।

তবে বিরিয়ানি জনপ্রিয়তা পায় মোগল সম্রাটদের হাত ধরে। মমতাজ মহলের রোজকার খাদ্য তালিকায় বিরিয়ানির উল্লেখ পাওয়া যায়। বিরিয়ানি খেতে খুবই ভালোবাসতেন শাহজাহানের এই সুন্দরী বেগম। কথিত, একবার নাকি মোগল সেনা ছাউনি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মমতাজ। সেখানেই বিরিয়ানি রান্না হতে দেখেন তিনি। রাঁধুনিকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, সৈন্যদের ‘ব্যালান্স ডায়েট’ দেয়ার জন্য ভাত ও গোশত মাখানো এই খাবার দেয়া হয়। নতুন এই খাবারটি চেখে দেখে এর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন মমতাজ। সেই সূত্রপাত।

শুধু মোগল রাজপরিবারই নয়, লখনউ-এর নিজাম প্যালাসেও বিরিয়ানির জনপ্রিয়তা ছিল মারাত্মক। নিজাম পরিবার থেকেই রকমারি বিরিয়ানির আত্মপ্রকাশ ঘটে। তবে যত বাহারি রকমেরই হোক না কেন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় ‘দম পুখত’ বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানি তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণত সমস্ত উপাদান এক সঙ্গে দিয়ে দমে বসানো হয়। অল্প আঁচে, ঢাকা দিয়ে ধীরে ধীরে তৈরি হয় এই বিরিয়ানি।

প্রধানত মশলার ভেদাভেদের উপরই নির্ভর করে বিরিয়ানির স্বাদ। মশলা পরিবর্তন করেই তৈরি করা যায় হরেক রকমের বিরিয়ানি। এদের নামও আলাদা। উত্তর ভারতে আগে লম্বা দানার ব্রাউন রাইস ব্যবহার করা হতো বিরিয়ানির প্রধান উপাদান হিসেবে। এখন অবশ্য বেশির ভাগ জায়গাতেই বাসমতি চাল ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ ভারতে আবার স্থানীয় বিভিন্ন ধরনের চাল দিয়ে তৈরি হয় বিরিয়ানি। যেমন, জিরা সাম্বা, কাইমা, জিরাকাশালা, কালা ভাত ব্যবহার করা হয়।

তবে ভারতবর্ষে সাধারণত বিরিয়ানি তৈরি হয় দু’টি পদ্ধতিতে। কুটচি আর পুক্কি। কুটচির ক্ষেত্রে কাঁচা চাল ও গোশত হাঁড়ির মধ্যে স্তরে স্তরে সাজিয়ে একইসঙ্গে সিদ্ধ করা হয়। অন্যদিকে পুক্কিতে আগে থেকেই চাল ও গোশত সিদ্ধ করে নেয়া হয়। পরে হাঁড়ির মধ্যে স্তরে স্তরে সাজিয়ে দমে বসানো হয়। ভারতবর্ষে প্রায় ১৫ রকমের বিরিয়ানি পাওয়া যায়।

(ওএস/অ/জুন ২৬, ২০১৭)