প্রবীর সিকদার


আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেই অনেকে ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের উদাহরণ টেনে সংখ্যালঘু নির্যাতনের পক্ষে পরোক্ষে সাফাই গেয়ে যান। আমি মেনে নিচ্ছি, ভারতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশের সুযোগসন্ধানী ধান্ধাবাজেরা সেটি ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করেন। কিন্তু ভারতে প্রতিটি সংখ্যালঘু নির্যাতনের পর কি হয়, সেটি আর ওই ধান্ধাবাজেরা জানার চেষ্টা করেন না কিংবা জেনেও তা প্রচার করেন না। সেটি প্রচার করলে যে তাদের ধান্ধাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সম্প্রদায়গত নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও সেসব নিয়ে কোনো ব্যথা নেই আমাদের দেশে। কিন্তু ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেই অনেকের মাথা গরম হয়ে যায়, সংখ্যালঘুর মন্দির-বাড়ি ভেঙেই ক্ষান্ত হয় না তারা, পারলে যেন দিল্লির মসনদ দখল করে নেয়! আজব এক বিকৃত মানসিকতা! এই বিকৃতির বিরুদ্ধে সরকার, রাষ্ট্র নীরবই শুধু নয়, পারলে বিকৃত ওই মানুষগুলোকে উসকে দেয়!ভোটের কদরে বিপন্ন হয় মানবতা!

কি হয় ভারতে, কিংবা কি হয় না ভারতে? পৃথিবীর সেরা গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটা মাত্র সেখানকার সামাজিক শক্তি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। এমনকি সংখ্যা গুরু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট জনেরা নির্যাতিত সংখ্যালঘু পরিবার কিংবা গোষ্ঠীর পক্ষে দাঁড়িয়ে 'পদ্মশ্রী' কিংবা রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ নানা পদক প্রত্যাখ্যান করে সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। আর আমরা? আমাদের দেশে তো সেটা ভাবনারও অতীত! অবশ্য কেউ কেউ মুখ রক্ষার প্রতিবাদ করেন। দ্রুতই সেই প্রতিবাদ আরেক ঘটনার তলে চাপা পড়ে হারিয়ে যায়।

ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার পর আইন রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও চোখে পড়বার মতো। ফলে সেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সকল ঘটনার বিচার হয়। প্রতিটি সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করা গেলে আমাদের দেশেও সংখ্যালঘু নির্যাতন হবে না। আমার এই দৃঢ়তার কারণ, আমাদের দেশে নির্যাতনের ঘটনাগুলো সম্প্রদায়গত সমস্যা নয়; এটি দুর্দান্ত লাভজনক একটি নোংরা ও অন্যায্য ব্যবসা। এই ব্যবসা বন্ধ করা গেলেই দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন আর ঘটবে না। আর এই নোংরা ও অন্যায্য ব্যবসা বন্ধের পথ একটাই, সেটি হল, প্রতিটি সংখ্যালঘু নির্যাতন ঘটনার বিচার নিশ্চিত করা। শুধু সেটা করা গেলেই নির্যাতনকারীরা উপযুক্ত শিক্ষা পেয়ে নতুন করে নির্যাতনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। এমন প্রতিক্রিয়ার কারণে সমাজের সকলের কাছে একটি জরুরি বার্তা পৌঁছে যাবে; সেটি হল, এই দেশে আর এমন অপকর্ম করে রেহাই পাওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও সামাজিক শক্তি দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে সাহসী হয়ে উঠবেন। আর এমন বহমান প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ধারায় ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ না পেয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীরাও নির্যাতন তথা নোংরা ও অন্যায্য ব্যবসা পরিত্যাগ করে ফিরে আসতে বাধ্য হবেন সুস্থ চিন্তা ও সুস্থ কর্মের ধারায়।