মুসা ইব্রাহীম


এভারেস্টে জয় আর বাংলা চ্যানেল পাড়ি নিয়ে ফের ধুন্দুমার পরিস্থিতি শুরু হয়েছে দেখলাম। যারা গালাগালি করছি, তাদের প্রোফাইলটা ঘুরে আসার চেষ্টা করেছি এই কয়েকদিনে। সবাই হাসিখুশি, উচ্ছ্বল। বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। কেউ শিক্ষার্থী, কেউ চাকরিজীবী, কেউ ব্যবসায় আছেন। সবাই একই ব্যাপার নিয়ে উদ্বিগ্ন: মুসা ইব্রাহীমকে নিয়ে সবাই ছি ছি করছে। কিন্তু সে কেনো কথা বলে না? কেনো কথাবার্তার প্রতিবাদ করে না বা অভিযোগ খণ্ডায় না? এ প্রসঙ্গে কবি আবু হাসান শাহরিয়ারের একটা কথা মনে পড়ে গেল, ‘নষ্ট চোখে নীল আকাশে ওড়া পাখিটাকেও ময়লা মনে হয়।’

সুতরাং ফেসবুকে সবার মন্তব্য দেখে যেটা বুঝলাম, বক্তব্যগুলো এমন: আমি এভারেস্টে যাইনি, বাংলা চ্যানেলও পাড়ি দেইনি। কিংবা দিলেও পুরো পথ নৌকায় পাড়ি দিয়ে পাড়ের কাছাকাছি এসে ক্যামেরা দেখে সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে পানিতে পড়ে কিছুটা সাঁতরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছি, যাক বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পাড়ি দিয়েছি(!)। বিষয়গুলো নিয়ে সবাই মন্তব্য করছেন। কেউ দুয়ো দিচ্ছেন। কেউ আবার বাপ-মা তুলে গালি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছেন। আমার চুপ করে থাকাটাকে যদি দুর্বলতা হিসাবে গণ্য করেন, এটা একান্তই আপনাদের বিবেচনা। তবে, মানুষ কতোখানি নিচে নামতে পারে, সেটা বলার মধ্যে আমি কোনো কৃতিত্ব খুঁজে পাই না। ফেসবুকে সবাই জাজমেন্টাল। গুড, ভেরি গুড। তাহলে আসুন, দেখে নেয়া যাক, কেন আমি চুপ করে থাকি? সবার দাবিতে কিছু কথা প্রকাশের গুরুত্ব বিবেচনা করছি।

১.
আপনাদের ঔৎসুক মনের জবাব দিতে গিয়ে অনেক কথাই মনে পড়ে যায়। তখন বিএমটিসির যুগ। আমি ছিলাম সেই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, আর ইনাম আল হক সভাপতি। আমার কাঁধ তখনো তেমন চওড়া নয়, কিন্তু দায়িত্ব বিশাল। সেই সঙ্গে পর্বতারোহণে আমাদের ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ যুগ চলছে। সবমিলিয়ে নতুনত্বের উদ্দীপনা ছিল, সবার উচ্ছ্বাস ছিল। কিন্তু এসব মিলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। একবার ইনাম আল হক গেলেন নেপালের আইল্যান্ড পিক বেস ক্যাম্প ট্রেকিংয়ে, ২০০৫-০৬ সালের দিকে। ফিরে এসে তিনি লিখলেন, আইল্যান্ড পিক জয় করেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তো বলছেন আইল্যান্ড পিকের বেস ক্যাম্প পর্যন্ত গিয়েছেন। কিন্তু পিক জয়ের কথা লিখলেন কেনো? তার বক্তব্য ছিলো, বিএমটিসি নতুন। তার কিছু সাফল্য প্রয়োজন। তাই একে আইল্যান্ড পিক জয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। কিন্তু আমি দৃঢ় অবস্থান নিলাম এবং বললাম যে, আপনি যেহেতু পর্বত জয় করেননি, আপনার আদৌ তার প্রস্তুতি ছিল না, কাজেই আপনি এটা লিখতে পারেন না। সে যাত্রায় বিএমটিসির মুখপত্র ‘শিখর পেরিয়ে’তে তার আইল্যান্ড পিকের বেস ক্যাম্প অবদি ট্রেকিংয়ের গল্প ছাপা হয়েছিল।

সেবার ইনাম আল হকের নতুন এক চেহারার সঙ্গে পরিচিত হলাম। অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করার তার এই প্রবণতা সম্পর্কে আমাকে বহু মানুষই সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু ভেবেছিলাম, হয়তো নিছকই ভুল করে তারা সতর্ক করেছিলেন। পরে সজল খালেদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ইনাম আল হক যেভাবে কর্মসিদ্ধি করেছেন এবং যেভাবে সজল খালেদ বিএমটিসির পৃষ্ঠপোষকতা না পেয়ে নিজে কষ্ট করে এভারেস্টে গেছে, সবমিলিয়ে সজলের জন্য খুব খারাপ লেগেছে। বিশেষ করে সজলের সন্তানের এমন পিতৃবিয়োগ একেবারেই মেনে নিতে পারিনি। সজল প্রথমবার ২০১১ সালে যখন এভারেস্ট অভিযানে গিয়েছিলেন, সেবার এমএ মুহিতও গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা দুই জন একই ক্লাবের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও যাওয়ার আগে আলাদা করে প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন। ব্যাপারটা শুধুমাত্র আর্থিক কারণে কি? অনেকেই বলেন, এটাও ইনাম আল হকের অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করার একটা ঘটনাক্রম। সেবার ব্যর্থ হয়ে ফিরলে ২০১৩ সালে সজল ফের এভারেস্ট যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এবার তাকে নিদারুণ অর্থকষ্টে পড়তে হয়। যতোদূর শুনেছি, তিনি তার নবনির্মিত ছবি একটা চ্যানেলে জমা দিয়ে এবং আরও কিছু অর্থ সংগ্রহ করে তিনি এভারেস্ট অভিযানে গিয়েছিলেন। মূলত আর্থিক সংকটের কারণে ২০১৩ সালে সজল এভারেস্ট জয় করে ফেরার সময় করুণ পরিণতির শিকার হয়েছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, যে সজলকে ২০১৩ সালে ইনাম আল হক তথা তার ক্লাব বিএমটিসি কোনো আর্থিক সহায়তা করেনি; কোনো ধরনের সহায়তা করেনি; এভারেস্টে যাওয়ার আগে ইনাম আল হকরা তাকে নিয়ে কোনো প্রেস কনফারেন্স করেনি। অথচ সজলের মৃত্যুর পর তার নামেই অর্থ সংগ্রহ করে এই ক্লাবের সদস্যরা নেপালে পর্বতারোহণে গেছেন, সজলের নামে একটা স্মৃতিস্তম্ভ নেপালে স্থাপন করার নাম করে। এটাই মনে হয় বাংলা প্রবাদের সাক্ষাত উদাহরণ: সাপও মরলো, লাঠিও ভাংলো না। সজলকে মূল অভিযানে, এভারেস্টে সহায়তা করলেন না, অথচ তার নামে টাকা নিয়ে পর্বতারোহণ ঠিকই করলেন।

২০০৬ সালে বিএমটিসির পক্ষ থেকে ভারতের সিকিমের ফ্রে পিক অভিযানে গেলাম আমি আর সজল খালেদ (মোহাম্মদ খালেদ হোসেন)। ভারতের দার্জিলিংয়ে অবস্থিত হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট (এইচএমআই) এ অভিযানের আয়োজন করেছিল। সে সময়ে এইচএমআইয়ের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন মেজর কেএস ধামি। তিনি আমাকে বিশেষ স্নেহের চোখে দেখতেন। তারই সঙ্গে যোগাযোগের প্রেক্ষিতে তিনি যখন এ অভিযানের প্রস্তাব দিলেন, তখন তা লুফে নিয়েছি। এ অভিযানের কিছু আগেই সজল খালেদ জার্মানি থেকে ফিরে বিএমটিসিতে যোগ দিয়েছিলেন। যোগ দিয়েই একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললেন। মীর শামছুল আলম বাবুকে বিএমটিসি থেকে বের করে দিলেন। যদিও এ সময় ইনাম আল হক ফ্রে পর্বতের সঙ্গী হিসাবে হয় বাবু, নয়তো সজলকে বেছে নেয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সজলকেই এই পর্বতাভিযানের সঙ্গী নির্বাচন করেছিলাম। দার্জিলিংয়ে গিয়ে শুনি যে, আয়োজনের সুবিধার্থে এইচএমআই এই অভিযান এক বিশেষ অ্যাডভান্স কোর্সের অংশ হিসাবে উপস্থাপন করছে। সঙ্গে থাকবে ভারতের সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের একটা গ্রুপ। এইচএমআইয়ের প্রশিক্ষক ‘নিডুপ ভুটিয়া’র নেতৃত্বে কমান্ডো দলের সব সদস্য এবং আমরা - সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ জন এই অত্যন্ত টেকনিক্যাল ক্লাইম্বিংপূর্ণ পর্বত জয় করেছিলাম। এতোজন এক সঙ্গে ফ্রে পর্বত জয় একটা রেকর্ড বলে জানিয়েছিলেন নিডুপ ভুটিয়া। তবে সামিটের দিনে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছিল। অভিযানের সঙ্গী এইচএমআইয়ের তৎকালীন প্রশিক্ষক বাঙালি সঞ্জয় ভৌমিক শুরু থেকেই সামিটের দিকে যাত্রা বাদ দিয়ে নিচের দিকে নামার ব্যাপারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। কিন্তু অপর প্রশিক্ষক ঝুনা ঠাকুর বারবারই বলছিলেন, এতোদূর যেহেতু এসেছি, বাকিটুকুও আমরা আরোহণ করে চূড়া জয় করতে পারব। তার উৎসাহেই মূলত এদিন ফ্রে পর্বত জয় সম্ভব হয়েছিল। প্রায় ১৯ হাজার ফুট উঁচু ফ্রে পর্বত অভিযানের পুরো বর্ণনা সবই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘পাহাড় চূড়ার হাতছানি: কেওক্রাডং থেকে এভারেস্ট’ শীর্ষক বইয়ে লিপিবদ্ধ আছে।

পরে অবশ্য মীর শামছুল আলম বাবু সঞ্জয় ভৌমিকের কথা রেকর্ড করেছেন, যার বরাত দিয়ে একাত্তর টিভি রিপোর্ট করেছে যে আমি নাকি ফ্রে পর্বত জয় করিনি। তাহলে বলতে হয় যে, বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এইচএমআইয়ের সে সময়ে ভীমরতি হয়েছিল দেখে আমাদের এমন ভুলভাল সনদ দিয়েছিল। আর যদি তাই হয়, তাহলে কেউ কেনো এইচএমআইয়ে গিয়ে চ্যালেঞ্জ করলো না? কেনো শুধু সঞ্জয় ভৌমিকের কথা রেকর্ড করতে হলো? কেনো অভিযানের টিম লিডার নিডুপ ভুটিয়ার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তাবোধ করলো না? কেনোই বা এইচএমআইকে সংশয় জানিয়ে এই সনদ বাতিলের জন্য কেউ লিখলো না? সেটা কি এই এইচএমআই এমএ মুহিত, নিশাত, বাবুসহ অনেকেরই পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বলে? না কি কারো বুকের পাটা হয়ে উঠলো না? আপনাদের সাহস থাকে তো গিয়ে এইচএমআইকে চ্যালেঞ্জ করুন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি: যদি এইচএমআই বলে যে, সেই বিশেষ অ্যাডভান্সড কোর্সের অংশ হিসাবে সেবার প্রশিক্ষণার্থীরা ফ্রে পর্বত জয় করেনি, তাহলে এই সনদ ত্যাগ করবো।

ইনাম আল হকদের নীচু মনমানসিকতায় অসহায় বোধ করি। তারা হয়তো নেপালের পর্বত জয় করেছেন, কিন্তু মনের পর্বত এখনো জয় করতে পারেননি। পারেননি দেখেই নিজেদের চুলু ওয়েস্ট অভিযানে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে দোষ চাপাচ্ছেন অন্যের ঘাড়ে। ২০০৭ সালে সেই অভিযানে দলনেতা সাব্যস্ত করে দিয়েছিলেন ইনাম আল হক, সজল খালেদকে। একটা পর্বত অভিযানকে কিভাবে লেজেগোবড়ে করতে হয়, তা এই অভিযানে না গেলে বুঝতে পারতাম না। অভিযান আয়োজক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সঙ্গে কতোভাবে দুর্ব্যবহার করা যায়, কতোভাবে পোর্টারদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা যায়, সবই করে দেখিয়েছেন অভিযানের দলনেতা সজল খালেদ। সবশেষে যখন এমএ মুহিতকে সঙ্গে নিয়ে চূড়ায় না গিয়েই হাইক্যাম্পের পাশে একটি পাহাড়ে গিয়ে যেভাবে ‘সামিট সামিট’ বলে চিৎকার করছিলেন, তা দেখে হাইক্যাম্পে তাঁবুতে বসে বেশ পুলকিত অনুভব করছিলাম। ভেবেছিলাম, ইনাম আল হক যোগ্য শিষ্য তৈরি করেছেন তাহলে। চূড়ায় না গিয়েই সামিটের দাবি। পরে এমএ মুহিত আর সজল খালেদ নেপাল থেকে এর সনদও নিয়েছিলেন। পর্বত জয় না করেই সনদ! দেশে ফিরে যখন পুরো বিষয়টা অনুধাবন করে ইনাম আল হককে বলেছি, তখন তিনি কার্যত আমাকে নিষ্ক্রিয় থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টা আমার জন্য সম্মানহানিকর বিবেচনায় বিএমটিসি পরিত্যাগ করে সে বছরই নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এর পুরো আদ্যোপান্ত বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘পাহাড় চূড়ার হাতছানি: কেওক্রাডং থেকে এভারেস্ট’ শীর্ষক বইয়ে লিপিবদ্ধ আছে। যদি কেউ চ্যালেঞ্জ করতে চান, তাহলে অনুগ্রহ করে এমএ মুহিতকে সঙ্গে আনবেন। কারণ, চুলু ওয়েস্ট পর্বত জয় না করেই সনদ নেয়ার কৃতিত্ব যে দুই জনের, তার মধ্যে সজল খালেদ এখন প্রয়াত।

লাংসিসা রি পর্বতাভিযান নিয়ে ইনাম আল হক, বেনু আর মীর শামসুল আলম বাবুর মিথ্যাচারের জবাব ২০১৪ সালে এটিএন নিউজে এক অনুষ্ঠানেই দেয়া হয়েছিল। তারপরও সবার জ্ঞাতার্থে আবারও বলছি, বিএমটিসি ছেড়ে দেয়ার পর নিজেরা যখন নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশ (এনএসিবি) প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, সে সময় বাংলাদেশ থেকে এভারেস্ট জয় এবং এভারেস্ট শীর্ষে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল এনএসিবিকে বাংলাদেশের সবার জন্য একটা সাধারণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে গড়ে তোলার এবং ২০১০ সালে যে এভারেস্ট অভিযানের পরিকল্পনা ছিল, সেটায় যেন এনএসিবিকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে, সার্বজনীন হয়। সে উদ্দেশ্যে এর প্রাথমিক ধাপ লাংসিসা রি অভিযানে দলে নেয়া হয়েছিল এনএসিসির দুই সদস্য ছাড়াও এনএসিবির বাইরে মীর শামসুল আলম বাবু, রিমন ও তার বোনকে। আমাদের ছয় জনের জন্য তিন লাখ টাকা প্রয়োজন হলেও আমরা মাত্র অর্ধেক টাকা স্পন্সরদের কাছ থেকে নিয়ে নেপালে হাজির হয়েছিলাম। নেপালে যেখানে সব অভিযানই ‘প্রিপেইড’ সিস্টেমে হয়, সেখানে মাত্র অর্ধেক টাকা নিয়ে নেপালে হাজির হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ ছিল না। কিন্তু আমি মরিয়া ছিলাম এ অভিযানকে সফল করে তোলার জন্য। এনএসিবি থেকে এভারেস্ট অভিযানে যাওয়ার প্রথম ধাপেই আমি মুখ থুবড়ে পড়তে চাইনি। এ পরিস্থিতিতে আমার বিশেষ অনুরোধে নেপালের বন্ধু কোমল অরিয়াল এবং সারিন প্রকাশ প্রধান আমাকে বাকি টাকা ধার দিয়ে আমাদের সহায়তা করে। এজন্য তাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। অভিযান শেষে যখন দেশে ফিরেছি, তখন সময় ঘনিয়ে এলো লাংসিসা রি অভিযানের ধার করা অর্থ ফেরত পাঠানোর। কিন্তু ভিন ক্লাবের সদস্যরা ‘এটা নিয়ে আজ নয়, কাল বসব’ ধরনের কথা বলে এড়িয়ে যেতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে মীর শামসুল এই অর্থ পরিশোধে পুরোপুরি অপারগতা প্রকাশ করলেন।

এ অভিযানে মীর শামসুল আলমের একটা দায়িত্ব ছিল। তিনি পুরো অভিযানের ভিডিও ডকুমেন্টারি করে দিবেন। অভিযান শেষে দেশে ফিরে যখন তাকে ডকুমেন্টারিটা বানিয়ে দিতে অনুরোধ করলাম, তিনি ‘আজ দেবেন, কাল দেবেন’ করে মাস তিনেক সময় পার করলেন। এরপর যা বানালেন, তা অনেকেরই মনোপূত হলো না। তাকে ডকুমেন্টারিটা ‘রিটাচ’ করতে অনুরোধ করায় তিনি আর সেই অনুরোধ রাখলেন না।

এই অভিযান শেষে যখন আমরা অন্নপূর্ণা ফোর পর্বতারোহণে যাওয়ার দল গঠনের চেষ্টা করছিলাম, সে সময়ে মীর শামসুল আলম বাবুর একটা এসএমএস এলো: ‘আই ক্যান ডু দি ভিডিও’। এটা দেখে বহু কষ্টে হাসি চেপে রেখেছিলাম। যাই হোক। তাকে যখন দলে নেয়া হলো না, তিনি গল্প ফাঁদলেন লাংসিসা রি আমরা জয় করিনি। এমনই তাদের আত্মসম্মানবোধ! এবার ভিডিওটা দেখুন এবং সিদ্ধান্ত নিন: https://youtu.be/qH1RVyIDlC4 এবং https://youtu.be/3M3kQuhY-kk। মীর শামসুল আলম বাবুর এমন বিরোধিতা দেখে মনে হয়, আমরা সবসময় পাহাড়ে পিকনিক আয়োজন করি, তিনি সেখানে অংশ নেয়ার ‘সামান্য’ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মাত্র।

অন্নপূর্ণা ফোর নিয়েও আপনাদের এন্তার অভিযোগ। সব অভিযোগের জবাব সেই ২০১১ সালেই দেয়া হয়েছিল। অনুগ্রহ করে দেখে নিবেন: http://fusionfactory.blogspot.com/2...। তারপরও যদি আর কোনো বক্তব্য থাকে, সোজা চলে যান নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনে। অভিযোগ দায়ের করুন সেখানে, যেমন করেছিলেন ইনাম আল হক, মীর শামসুল আলম বাবু এবং শাহজাহান মৃধা বেনু।

২.
বলটা নিজেদের মতো করে খেলতে না পারলে ইনাম আল হকরা সবসময়ই বেসুরে খেলেছেন। ইনাম আল হক, সজল খালেদ, তারেক অনুদের আরও নিচে নামাটা শুরু হয়েছিল, ২০১০ সালের ২৩ মে বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৫ মিনিটে এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছানো আর ৫টা ১৬ মিনিটে এভারেস্ট চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো'র পর। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ৬৭তম এভারেস্টজয়ী দেশ। তবে আমি এভারেস্ট চূড়া জয় করে বেস ক্যাম্পে নেমে আসার পরপরই এক সাংবাদিক ফোনে বললেন, মুসা আপনি কি সার্টিফিকেট পেয়েছেন? জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেনো এই প্রশ্ন? উত্তরে সেই সাংবাদিক বলেছিলেন, ঢাকায় সজল খালেদসহ বেশ কয়েকজন একটা ‘চেইন ইমেইল’-এ আপনার এভারেস্ট জয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। আর বলেছে, আপনি এভারেস্ট জয়ের সার্টিফিকেট না পেলে সেটাকে ‘অফিসিয়াল’ বলে মানা নাকি সম্ভব নয়। শুনে মনটা ছোটো হয়ে গিয়েছিল। কারণ, আমাদের গ্রুপে তিনজন মন্টেনেগ্রিয়ান ছিলেন, যারা প্রথমবারের মতো তাদের দেশ থেকে এভারেস্ট জয় করেছিলেন। তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে বেস ক্যাম্পে স্বয়ং তাদের রাষ্ট্রপ্রধান ফোন করেছিলেন। আর আমাদের দেশের কতিপয় ব্যক্তি তখন উঠে পড়ে লেগেছিলেন প্রমাণ করতে যে, ‘এভারেস্ট জয়টা মুসা ইব্রাহীমের দাবি। ব্যাটা আদৌ এভারেস্টে যায় নি, গিয়েছিল চট্টগ্রামের পাহাড়ে’। এই বলার চলটা শুরু করে গিয়েছিলেন প্রয়াত সজল খালেদ । ২০১০ সালে ২৩ মে আমি এভারেস্ট জয়ের পরপরই (২৪ মে ২০১০) তিনি সবাইকে ইমেইল করে জানিয়েছিলেন, মুসা ইব্রাহীম এভারেস্টে যায়নি। পরে আবার এক বিবৃতিতে (২৭ মে ২০১০) জানিয়েছিলেন যে, তার বক্তব্য ভুল ছিল।

কিন্তু যারা সংশয়বাদী, তারা কি এমন সহজে এসব মানবেন? তারা আসলে মানতে পারেননি। ফলে এই গোষ্ঠী - যার শিরোমনি ইনাম আল হক, সহযোগী সজল খালেদ, তারেক অনু, এমএ মুহিত, মীর শামছুল আলম বাবু, শাহজাহান মৃধা বেনু প্রমুখ - শুরু করেছিল প্রচারণা। আর সচলায়তনের কতিপয় ব্লগার শুরু করেছিলেন অনলাইনে ব্লগিং - নেভারেস্ট। সেই ঘৃণ্য অধ্যায়ের সমাপ্তি তারা নিজেরাই করেছিলেন, যখন অনেকেই আমার এভারেস্টের ছবি সিঙ্গাপুর এবং ইউরোপের ফটো ফরেনসিক ল্যাব থেকে ফরেনসিক টেস্ট করিয়ে আনলেন এবং বললেন যে, কোনো ছবিতে একটা পিক্সেলেরও হেরফের করা হয়নি, সব মেটাডেটা ঠিক আছে - তখন এই ন্যাক্কারজনক ব্লগিং থেমেছিল। আমার এভারেস্ট জয়ের ছবি নিয়ে জ্যামিতিক বিশ্লেষণ দেখুন এখানে: http://www.sachalayatan.com/arifjebtik/35602

এই ব্লগ এবং তার ২৫০টা কমেন্ট পড়ে এসে এরপর আলোচনা করুন। ফেসবুক যুগের আগে ব্লগ ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়। সেখানেই তখন আলোচনা হয়েছিল। আমার ছবি মিথ্যা প্রমাণ করতে না পেরে অনেকেই পিছু হটেছিলেন। আমাকে নিয়ে আরও প্রোপাগান্ডার জবাব ১: http://fusionfactory.blogspot.com/.../07/blog-post_2489.html এসব নিয়ে সচলায়তনে হিমুর করা বিশ্লেষণের উপসংহার: http://www.sachalayatan.com/himu/35653 আচ্ছা যারা তখন আমার বিরু‌দ্ধে প্রচারণা চা‌লি‌য়েছি‌লেন তারা কী কেউ ক্ষমা চে‌য়ে‌ছি‌লেন?

৩.
২০১১ সালে ইনাম আল হক, সজল খালেদরা টাকা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে লেখানোর লোক খুঁজছিলেন। একজন প্রকাশ করেছিলেন সেই ষড়যন্ত্রের কথা। আরো অনেকে যে ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিলেন, তা অনুধাবন করতে কষ্ট হয় না। দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের লেখায় শুনুন সেই ষড়যন্ত্রের কথা। এটি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় ব্লগে প্রকাশ করেছিলেন ২ অক্টোবর ২০১১ সালে।

একটা অন্যায়ের ভয়

‘যারা পর্বতারোহন করে, তাদের মন হবে পর্বতের মতো বিশাল। কিন্তু আফসোস, আমাদের দেশের পর্বতারোহীরা ওপরে উঠতে থাকে, আর মনটা নিচে নামতে থাকে।’

: আমাদের এক শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক, সাহিত্যিকের বলা কথা উদ্ধৃত করলাম।

কথাটির সত্যতা কিছুটাও হলে টের পাচ্ছি। সবাই হয়তো নন, তবে পর্বতারোহীদের কারো কারো চেহারা বড় নোংরা হয়ে ধরা দিল আমার কাছে।

এতো ভনিতা না করে আসল গল্পটাই বরং বলে ফেলি।

গত সোমবার গভীর রাতের ঘটনা। আমার ফেসবুক বন্ধু কাজী মামুন আমাকে ফেসবুকে একটি ম্যাসেজ পাঠালেন। ম্যাসেজটির ভাষ্য এরকম যে, আমি পর্বতারোহন বিষয়ে কিছু লেখালিখি করতে চাই কি না?

পর্বতারোহন বিষয়ক আমার সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবনের কিছু টিলায় জান হাতে নিয়ে হাচড়ে-পাচড়ে ওঠা। হাইট-ফোবিয়া, ক্লাস্ট্রো-ফোবিয়া দুটোই আছে বলে পর্বতারোহন বা বিমানে চড়ার কোনোটির প্রতিই কোনো টান অনুভব করি না। তারপরও লিখতে বাধা কোথায়?

বিশেষ করে নগদ-নারায়ন প্রাপ্তির যেহেতু সম্ভাবনা আছে, তাই রাজি না হয়ে উপায় কী? ছা-পোষা সাংবাদিক; বাড়তি দুই পয়সা আয় হলে মাস শেষে ধার-দেনার পরিমাণটা কমে। তাই বদর বদর বলে হ্যাঁ বলে দিলাম। এবং তারই ধারাবাহিকতায় সজল খালেদকে ফোন করে দিলাম।

সজল খালেদের নামটি পরিচিত। একজন অভিযানপ্রিয়, পর্বতারোহী হিসেবে তার পরিচিতি আছে। কৌতুহলী মানুষ হিসেবে তার নাম এবং কাজ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা ছিল। তাই অনুমান করলাম, হয়তো কোনো বই অনুবাদ-টনুবাদের কাজ দেবেন।

আমার মোবাইলের লগবুক সাক্ষ্য দিচ্ছে, রাত ১২টা ৮ মিনিটে আমি তাকে ফোন করলাম। আমার আগ্রহের কথা বলার পর তিনি বললেন, পরের দিন সকালে, মানে গতকাল, তিনি আমার সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করবেন। ফুটনোট হিসেবে জুড়ে দিলেন, কাজী মামুন যেহেতু আমাকে সুপারিশ করেছেন, তাই কাজ পাওয়া একরকম নিশ্চিত।

গতকাল সকালে নয়, দুপুর ১টা ২২ মিনিটে সজল খালেদের ফোন এল। তিনি প্রথমেই আমাকে বললেন, আগামী শুক্রবার আমি শাহবাগের দিকে আসতে পারবো কি না? সময় আটটা, সাড়ে আটটা।

সে সময় আমি অফিসে থাকি; শুক্রবার ছুটি নেই। তাই একটু ‘তো তো’ করতেই সজল খালেদ বললেন, আসাটা জরুরি এই জন্য যে, যে বিষয় নিয়ে আমাকে লিখতে হবে; সেটি সরাসরি আমাকে ব্রিফ করবেন ইনাম আল হক।

নামটা শুনে চমকে উঠলাম। পক্ষীবিশারদ, বিশিষ্ট প্রকৃতিপ্রেমী, অভিযানপ্রিয়; সবমিলিয়ে রোমাঞ্চকর সেই মানুষ ইনাম আল হক! আমার মতো নগণ্য মানুষের সঙ্গে তিনি কি কথা বলবেন?

শুধু কথা নয়, সজল খালেদ জানালেন, ইনাম আল হক আমার লেখা তৈরি করার স্বার্থে কিছু ডকুমেন্টসও আমাকে দিয়ে দেবেন। এরপর বললেন, বিষয়টা নিয়ে তারাও লেখালিখি করতে পারতেন; কিন্তু নৈতিকতায় বাধে বলে তারা নিজেরা এসব করবেন না। এ জন্য একজন সাংবাদিক খোজ করছিলেন। আর এসব কথার মাঝে মাঝে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে বলে দিলেন, আমাকে সম্মানীটা মন্দ দেওয়া হবে না।

কিন্তু একটু কেমন ভয় ভয় লাগল। ব্রিফ, ডকুমেন্টস, এথিকস; এগুলো শব্দ শুনলে কেমন যেন সিক্রেট-অপারেশন জাতীয় কিছু মনে হয়। তাই সজল ভাইকে প্রশ্ন করলাম, আসলে কি নিয়ে লিখতে হবে? একটু যদি ধারণা দিতেন....

উনি একটু ইতস্তত করে বললেন, ‘আসলে আমরা ওই ক্যাম্পেইনটা আবার শুরু করতে চাই।”

:কোন ক্যাম্পেইনটা!

:ওই যে হিমু যেটা করেছিল।

প্রথমটা মনে করতে পারলাম না। ইন্টারনেটে আমার বিচরণ বেশি নয় তো, তাই। পরে হঠাৎ মনে পড়ে গেল, সচলায়তন ব্লগে হিমু নামে একজন ব্লগার মুসা ইব্রাহিমকে নিয়ে টানা লেখালেখি করেছিলেন। লেখার প্রতিপাদ্য ছিল, মূসা এভারেস্টে ওঠেনি!

সেই লেখালিখির প্রতিবাদও হয়েছিল। প্রতিবাদটা বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা। এসব প্রতিবাদের মুখে হিমু একসময় স্বীকার করে নেন, মূসার এভারেস্টে ওঠার সত্যতা তিনি পেয়েছেন। সে ব্যাপার তো ওখানেই শেষ। তাহলে এখন আবার কী?

তার চেয়েও বড় প্রশ্ন মূসার এভারেস্টে ওঠা, না ওঠা বিষয়ক ক্যাম্পেইনের সঙ্গে সজল খালেদ বা ইনাম আল হকের সম্পর্ক কি? মূসাও পর্বত ওঠে, সজল খালেদও ওঠেন। মূসা, সজল খালেদ, মুহিত; সবার গুরুস্থানীয় ইনাম আল হক। তিনি কেন এদের কারো বিরুদ্ধে প্রচারণা করতে যাবেন?

আমি আর কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারি না। থতমত খেয়ে বলি,

: সজল ভাই, আমাকে ক্ষমা করে দিন। মূসাকে কাছ থেকে চিনি। ইনাম ভাইকে দূর থেকে শ্রদ্ধা করি। আমি কোনো নোংরামির মধ্যে যেতে চাই না।

সজল ভাই বুদ্ধিমান মানুষ। এক মুহূর্ত ভেবে বললেন,

: না, না। মূসার বিরুদ্ধে কিছু নয়...ঠিক আছে, আপনি রাজি না হলে তো কিছু করার নেই। তবে এই যা কথাবার্তা হল, সেটা ভুলে যান প্লিজ।

আমি অনেক চেষ্টা করেছি। সেই দুপুর থেকে আজ এই মাঝরাত অবদি; প্রায় পাঁচটি দিন ধরে চেষ্টা করেছি ভুলে যেতে।

পারলাম না সজল ভাই। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। নিজের বিবেকের তাড়নায় আমি এই ঘটনাটা ওয়েব দুনিয়ায় প্রকাশ করে দিতে বাধ্য হলাম। এই পুরো ঘটনার মর্মার্থ কি, তা সংশ্লিষ্টরা বুঝতে পারবেন; তারা হয়তো ব্যাখ্যাও দেবেন।

আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতাটা বললাম। সেই অভিজ্ঞতা ফিরে দেখতে গিয়ে একটা ব্যাপারই মনে হয়েছে, আবার একটা অন্যায় হতে চলেছে। আবার একটা ছোট কাজ হতে চলেছে। তখনই মনে হল কথাটা: পর্বতারোহীরা ওপরে উঠছে আর মনটা নিচে নামছে!

৪.
ইনাম আল হকের মনমানসিকতা কতোটুকু নীচু, তার প্রমাণ পেয়েছি আরও একবার। খবর বের হলো এমএ মুহিত ২০১১ সালের ২১ মে তীব্বত দিক দিয়ে এভারেস্ট জয় করেছেন। তিনি ফেরার পর চ্যানেল আইয়ের ফরিদুর রেজা সাগর ভাই ফোন দিয়ে বললেন, মুসা একটু অফিসে এসো। তোমাকে আর মুহিতকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করি। সাগর ভাইয়ের আমন্ত্রণে যখন গেলাম চ্যানেল আইতে, দেখি মুহিতের সঙ্গে ইনাম আল হকও এসেছেন। সালাম দিয়ে যখন কুশল বিনিময় করতে গেছি, মনে হলো যেনো কোনো পাপ করে ফেলেছি। বাংলা সিনেমার দৃশ্য যেন। বাংলা সিনেমায় সৎ মা যেমন অপর পক্ষের সন্তানকে দেখতে পারেন না, তার চোখ জ্বালাপোড়া করে, তেমনি ইনাম আল হকও স্টুডিওতে ঢুকে আমার এভারেস্ট জয়ের ছবি দেখে বেশ চড়া গলায় এবং আমাকে শুনিয়ে বলছেন, এটা আবার কে?

যেন মাত্রই তিনি মঙ্গল গ্রহ থেকে নেমে এসেছেন এবং পৃথিবী নামক গ্রহের হালহকিকত যেনো জিজ্ঞেস করছেন! সে সময় থেকে চিন্তা করছিলাম, যেদিন আমি এভারেস্ট জয় করে দেশে ফিরেছিলাম, সেদিন এই ইনাম আল হক অভিনন্দন জানাতে এসেছিলেন। চ্যানেল আইয়ের স্টুডিওতে তখন মনে একরাশ ঘৃণা জন্মেছিল।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইনাম আল হক বা সজল খালেদ শুরুতে যে নাকে খত দিয়ে স্বীকার করে নিয়েছিলেন, সেখানে তারা থামলেও পারতেন। কিন্তু তারা সেটা করেননি। বরং, খোদ এলিজাবেথ হাউলিকে আমার এভারেস্ট জয়ের ছবি নিয়ে সংশয়মূলক ইমেইল করেছে তারা। এলিজাবেথ হাউলির মুখপত্র রিচার্ড সালিসবুরি কিন্তু ফিরতি ইমেইলেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে আমার ছবিগুলো এভারেস্ট চূড়াতেই তোলা। খোঁজখবর করতে গিয়ে ইনাম আল হক, সজল খালেদ, বাবু, বেনু প্রমুখদের এই কুৎসিত কর্মকাণ্ড রিচার্ড সালিসবুরিই আমাদের জানিয়েছে।

আর কাঠমান্ডুভিত্তিক মার্কিন সাংবাদিক এলিজাবেথ হাওলি হিমালয়ান ডেটাবেস নামে একটি ডেটাবেস চালু করেছেন, যেখানে শুধু নেপাল হিমালয়ের সাত হাজার মিটারের চেয়ে উঁচু পর্বত জয়ের রেকর্ডগুলো সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে ১৯০৫ সাল থেকে। আমেরিকাভিত্তিক আমেরিকান আলপাইন ক্লাব এই ডেটাবেস প্রকাশ করে থাকে। সারা বিশ্বের অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ এই তালিকাকে অবিসংবাদিতভাবে সামিটিয়ারদের চুড়ান্ত তালিকা হিসেবে গ্রহণ করে। বিশ্বব্যাপী এই তালিকা পর্বতারোহীদের কাছে বাইবেল হিসেবে গৃহীত হয়ে আসছে। হিমালয়ান ডাটাবেজে আমার ও আমার সহযাত্রীদের নাম স্পষ্ট করে লেখা আছে। দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করেন: http://www.himalayandatabase.com/2010%20Season%20Lists/2010%20Spring%20A4.html

৫.
যাই হোক, বিতর্ক থামল। কিন্ত সেই গোষ্ঠীর ‌ক্ষোভ মিট‌ল না। ২০১২ সালে এভারেস্ট জয় করে দেশে ফিরে তারা কিছুটা শান্ত হ‌লেন। ত‌বে তখনো ক্ষোভ কেন মুসা প্রথম? মিডিয়াগুলো যখন দেশের সব এভারেস্টজয়ীকে নিয়ে অনুষ্ঠান করতে চেয়েছে, নতুন এভারেস্টজয়ী এবং তাদের পালের গোদা ইনাম আল হক তাতে বাগড়া দিয়ে বলেছেন - হয় এ বছর (২০১২ সালে) যারা এভারেস্ট জয় করেছেন, শুধু তাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হবে, নয়ত এ বছর (২০১২ সালে) এভারেস্টজয়ীরা অনুষ্ঠানেই যাবেন না। তাদের বেঁকে বসায় কতো অনুষ্ঠান নির্মাতা যে আমাকে ফোন করে শেষ মুহূর্তে যেতে মানা করেছেন, তার হিসেব নেই। বেশি অসহায়বোধ করেছি নতুন এভারেস্টবিজয়ী গোষ্ঠীর মনমানসিকতা দেখে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সবাইকে ডেকে পাঠালেন, সবাইকে সংবর্ধনা দিলেন, তখন আবার তারা সেখানে ঠিকই গেছেন। সেখানেও যখন তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে গেছি, তারা নিজেদের অহম প্রকাশ করেছেন। মনকে বুঝ দিযেছি, তেলে জলে মিশবে না। আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখতে চাই। ব্যাপারটা খুবই ফানি। নিশাত মজুমদার যে বাসায় থাকে, সেই একই বিল্ডিংয়ে আমার শ্বশুরবাড়ি। সেখানে গেলে প্রায়ই তার সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু দেখা হলেই যেন তিনি ভূত দেখেছেন, এমন একটা তটস্থ ভাব তার মধ্যে দেখি। দ্রুতই সরে পড়তে চেষ্টা করেন। কারো বিরুদ্ধে অন্যায় করলে তার মুখোমুখি হতে অসস্তি লাগে, নিশাতের হয়তো সেই বোধটা কাজ করে। এখন যদি কেউ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিশাত মজুমদারের ছবি ক্রপ করে আমি ছোটলোকি করেছি, সেক্ষেত্রে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, আমার ওয়ালে আমি ছবি ক্রপ করবো না এনলার্জ করবো, না কি সংকুচিত করবো - এটা একান্তই আমার ব্যাপার। আর যে আমাকে এড়াতে চায়, তার চেহারা আমি দেখতে চাইনা বলেই ক্রপ করেছি।

যাই হোক, এরপর এলো ২০১৪। ওই গোষ্ঠীর ২০১০ সালের ইচ্ছাপূরণ হ‌লো একাত্তর টিভি দি‌য়ে। সেখানে ইনাম আল হক, এমএ মুহিত, নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া, মীর শামছুল আলম বাবু, শাজাহান মৃধা বেনু প্রমুখ ঢালাও বলে গেলেন, মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট জয়ে তাদের সন্দেহ আছে। কিন্তু আমাকে কিছু বলতে হয়নি। তাদের প্রোপাগান্ডায় বহু মানুষ তাদের ছি ছি করেছেন। তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন:

সাম্প্রতিককালে আবার যারা আমার এভারেস্ট জয়ের ছবি নিয়ে ফটো ফরেনসিক টেস্ট করার ইচ্ছা পোষণ করছেন, তাদের জন্য নিচের এই নোটটা শেয়ার করলাম। লিংক: goo.gl/k1m5sj

সত্যি বলতে, ইনাম আল হকদের এমন দাবিতে আমি মোটেও ভ্যাবাচেকা খাইনি। একটু বিরক্ত হয়েছি ঠিকই। তবে বুঝতে চেষ্টা করেছি যে, কেনো তারা লাইনে হাঁটলেন বা তারা কেনো ‘মুসা ইব্রাহীম যেভাবে ১৭ কোটি মানুষকে বোকা বানালেন’ প্রকল্প হাতে নিলেন? তারা কি নিজেদের কোনো দোষ লুকাতে চান? বলতে পারেন, এখানেই রহস্যের সমাধান পেয়ে গেছি।

আমার এভারেস্ট জয়ের ছবি নিয়ে যতো গবেষণা হয়েছে, নতুন যারা এভারেস্ট জয় করলেন, তাদের ছবি নিয়ে কি তা হয়েছে? হয়নি। তারা তো একেকটা পর্বত জয় করেন, আর মুহূর্তেই তা মিডিয়ায় চলে আসে, আর তা সবাই বিশ্বাস করে নেন। প্রমাণের দায়ভার তাহলে সব আমার? আপনারা শুধু আমাকেই প্রশ্ন করে যাবেন? কই, কাউকে তো দেখলাম না যে অন্যসব এভারেস্টজয়ীকে তাদের এভারেস্টসহ অন্য পর্বতারোহণের ছবি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে? তারা 'জয় করেছেন' বলতেই আপনারা বুঝে গেলেন? কেনো প্রশ্ন করলেন না? না কি ভাসুরের নাম মুখে আনা যায় না বলে? আমি বলতে চাই, সবার এভারেস্ট জয়ের ছবি নিরীক্ষা নিয়ে সমান দাবি উঠুক। কষ্ঠিপাথরে যাচাই হয়ে আসুক নির্ভেজাল সত্য।

কথাটা বলার কারণ আমার বন্ধু ও সহযোগী পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্তের এভারেস্টজয়ের ছবি জালিয়াত করে ভারতের এক পুলিশ দম্পতি গত বছর ধরা খেয়েছেন। এই ঘটনা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। এভারেস্ট নিয়ে জালিয়াতি যে কোন পর্যায়ে গেছে, তা দেখে হতভম্ব হয়ে গেছি। https://www.nytimes.com/2016/09/01/...

ইন্টারনেট খুব অদ্ভুত জায়গা। এইখানে যেকোনো মানুষ কম্পিউটার স্ক্রিনের আড়ালে লুকায়ে নিজেরে যেইভাবে খুশি সেইভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। এখানেই যেহেতু আপনারা সত্যমিথ্যা প্রমাণের উদ্যোগ হাতে নিছেন, কাজেই, আপনাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলাম, যদি সম্ভব হয়, আমার এভারেস্ট জয়টা মিথ্যা ছিল প্রমাণ করুন। এটা প্রমাণ করার পরে এমএ মুহিতকে প্রথম এভারেস্টজয়ী হিসাবে দাবি করুন, আমি মেনে নেব। ইতরামির একটা সীমা থাকা উচিত।

বাংলা চ্যানেল সাঁতার

এ প্রসঙ্গটা সামনে এলে ভালোই লাগে। কারণ, যেমন দেশের মানুষ, তেমনি তাদের সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিক। একাত্তর টিভি যা করে দেখালো দাদা! প্রায় সবাই লুফে নিয়েছেন। এখানে সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, আমি সেই অর্থে সাঁতারু নই। তবে যেকোনো অ্যাডভেঞ্চারের কথা শুনলে যদি তা আমার সামর্থ্যের মধ্যে থাকে, তা আমি করতে চাই। তেমন একটা ব্যাপার ছিল বাংলা চ্যানেল সাঁতার। এই চ্যানেল যখন সাঁতরে পাড়ি দেয়ার আগ্রহের কথা এই চ্যানেলে আবিষ্কারক মরহুম কাজী হামিদুল হককে জানিয়েছিলাম, তিনি সোৎসাহে এগিয়ে এসে সাহস যুগিয়েছিলেন। তার কথাতেই নিজেকে প্রস্তুত করে বাংলা চ্যানেল জয় করতে নেমে পড়েছিলাম।

আমি সাঁতার কেটেছি ২০১১ সালে (প্রথমবার)। আর একাত্তর টিভি ভুলে ভরা মিথ্যা নিউজ করেছে ২০১৪ সালে। একাত্তর টিভি যা দেখিয়েছে, তাতে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমি ৫ থেকে ১০ মিনিট নৌকায় ছিলাম। আর আপনারা যে মিথ্যা রিপোর্ট করলেন, আমি পুরো পথ নৌকায় পাড়ি দিয়েছি, সেই ফুটেজের মেটাডাটা জাতির সামনে প্রকাশ করুন। করে বলুন যে আমি পুরোটা পথ নৌকায় করে পার হয়েছি। আর যদি তা না পারেন, তাহলে জাতির কাছে আপনাদের ক্ষমা চাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।

বাংলা চ্যানেল নিয়ে কথা বলতে চাইলে লিপটন সরকারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ২০১১ সালে ঘটনা কি ঘটেছিল? আমার দুর্ভাগ্য যে, বাংলা চ্যানেলের আবিষ্কারক মরহুম কাজী হামিদুল হক আর নেই। তিনি সেবার আমার মেন্টর হিসাবে ছিলেন।

২০১১ সালে বাংলা চ্যানেল সাঁতারের সময় দুর্ঘটনায় পড়ায় আমাকে নৌকায় ওঠানোর বিষয়টি আমি কখনই গোপন করিনি। বরং সেন্টমার্টিনে যে সাংবাদিকরা সেদিন উপস্থিত ছিলেন, তারা নিজেরাই ওই প্রশ্ন করেছিলেন যে, দুর্ঘটনায় মুখে পড়ায় আমাকে উদ্ধার করার পর নৌকায় তোলা হলেও কীভাবে ফের বাকি পথ সাঁতরে পাড়ি দিলাম? উত্তরে বলেছিলাম, নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল দেখেই নৌকা থেকে নেমে ফের সাঁতরে বাকি পথ পাড়ি দিয়েছি। এসবই ১৮ মার্চ ২০১১-তে বাংলা চ্যানেল অভিযান শেষে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যে প্রেস কনফারেন্স করা হয়েছিল সেখানে ভিডিওতে নৌকায় আমাকে উদ্ধার করার দৃশ্যও দেখানো হয়েছে। আর আমাকে এই ৫-৭ মিনিট নৌকায় তোলার পুরো ঘটনা ২০১২ সালে একুশে বইমেলায় ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আমার লেখা ‘মিশন বঙ্গোপসাগর ও কিলিমানজারো’ বইয়ে লিপিবদ্ধ আছে। ১৫ মে ২০১৪ সালে আমার লেখা নোট পড়তে পারেন এখানে : goo.gl/bBSm54

আর এটাও যদি যথেষ্ট মনে না হয়, ভিডিও দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করেন -https://www.youtube.com/embed/wkjbDBQrDRY

এতেও যদি আপনাদের মন না ভরে, তাহলে সেদিন প্রোগ্রামের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের প্রশ্ন করুন। অন্যান্য টিভির ও সংবাদপত্রের রিপোর্ট দেখুন। এরপর আর আপনাদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করছি। দয়া করে ‘কান নিয়ে গেছে চিলে’ শুনেই চিলের পেছনে দৌড়াবেন না।

সবার জ্ঞাতার্থে বলছি, এরপর ২০১২ সালে ডাচ সুইমার ভ্যান গুল মিলকোর সঙ্গে আরও একবার মরহুম কাজী হামিদুল হকের নেতৃত্বে বাংলা চ্যানেল সাঁতার আয়োজন করেছি। সেটা নিয়ে একাত্তর টিভির কোনো ‘রা’ নেই। আবার ২০১৬ সালে ভারতীয় ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী রিতু কেডিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ফ্রি স্টাইলে বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পাড়ি দিয়েছি। এসব নিয়ে একাত্তর টিভি একেবারে ‘স্পিকটি নট’।

কার্সটেঞ্জ পিরামিড অভিযান

কার্সটেঞ্জ পিরামিড অভিযানে আমাদের সহঅভিযাত্রী নন্দিতা চূড়া জয় করে বেস ক্যাম্পে ফেরার পথে হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। দলের সিদ্ধান্তটা এমন ছিল: যেহেতু মূল লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, কাজেই সেখান থেকে নিরাপদে ফেরাটা জরুরি। অভিযাত্রীদের জীবন বিপন্ন করে অভিযান সম্পন্ন করাটা আমাদের কাছে কাজের কোনো বিষয় মনে হয়নি। পুরো ট্রেইলের যে ভয়াবহতা, তা থেকে নন্দিতাকে রক্ষা করতেই আমরা হেলিকপ্টারে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এ নিয়ে পুরো ফেসবুকে যাচ্ছেতাই রকমের গালাগালি করতে দেখলাম। ব্যাপারটা কি এমন যে, আপনারা একটা লাশ চেয়েছিলেন? কারো মৃত্যু আপনারা কামনা করেছিলেন? ব্যাপারটা যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে আমি ধরে নিচ্ছি, আমরা মনুষ্যত্ব বিবর্জিত জীবনসত্ত্বার একেবারে কিনারে এসে পৌঁছেছি। ভাগ্যিস নন্দিতা বাংলা পড়তে পারে না। নয়তো আমি মন্টেনিগ্রোর ব্লেকা (যিনি আমার এভারেস্ট জয়ের ব্যাপারে ভিডিও সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন) এবং অস্ট্রেলিয়ার ব্রেন্ডানের (যিনি আমাকে এভারেস্ট রিজে অক্সিজেন সরঞ্জাম ঠিকঠাক করে দিয়েছিলেন, পাওয়ার জেল খাইয়েছিলেন, এবং এভারেস্ট জয়ের ব্যাপারে ভিডিও সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন) মতো বন্ধুদেরকে আমি হারাতাম। তারা ভিডিও সাক্ষাতকার দেয়ার পর তাদের গালাগালি করে বাংলাদেশীরা বেশ কতক ই-মেইল, মেসেজ পাঠিয়ে বেশ নেকি হাসিল করেছিলেন।

সবশেষে দুটো গল্প বলি। এক নেতার প্রায় শ দুয়েক চ্যালাচামুণ্ডা। নেতার বাসার সামনে প্রতিদিন সকালে তারা হাজির হয়। নেতা তাদের হাতে একশটা করে টাকা তুলে দেয়। এ দিয়ে চ্যালারা বাজারসদাই করে বাড়িতে দিয়েই এলাকায় লাঠিবল্লম নিয়ে বের হয়ে পড়ে। নেতার কর্তৃত্ব জাহিরে তারা ‘নুন খেয়ে গুণ গায়’। লোকজন তাদের কথায় উঠে আর বসে। সমঝদারদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। তাই এই গল্প আর বাড়ালাম না।

দ্বিতীয় গল্পটা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। কবিগুরু নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁর ‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরি’ অবস্থা। সবার বক্তব্য, রবীন্দ্রনাথ যেহেতু জমিদার, তাই যেহেতু তার ইংরেজদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো, তাই তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাকে ব্যঙ্গ করে চল্লিশের দশকে কল্লোল নামে একটা সাপ্তাহিকে সেই পর্যায়ের লেখালেখি হতো। সেই যুগটা কল্লোল যুগ নামে পরিচিত। কবিগুরু কিন্তু সেসবের জবাব গায়ের জোরে নয়, বরং লেখার মাধ্যমে দিয়েছিলেন। কবিগুরুর সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে বলছি: কাজ, কাজ আর কাজ। এর মধ্য দিয়েই আমি সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমি চাই তরুণদের নিয়ে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। সেজন্য আপনাদের সবার বুদ্ধি-পরামর্শ-সহায়তা চাই।

লেখক : পর্বতারোহী ও সাংবাদিক

(ওএস/অ/জুলাই ০৩, ২০১৭)