স্টাফ রিপোর্টার : গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে পৃথক পৃথক সংগঠনের কর্মসূচি। সবমিলে অর্ধশতাধিক লোকের উপস্থিতি দেখা গেছে। তারা প্রত্যেকেই শাহবাগের বিভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা মাইক বসিয়ে কর্মসূচি পালন করছে।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের এ বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে।

মঙ্গলবার চারটি অংশে বিভক্ত হয়ে শাহবাগে কর্মসূচি পালন করেছে তারা। তবে পুলিশ পাহারায় থাকায় তাদের মধ্যে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

* জাতীয় জাদুঘরের উত্তর দিকে মিডিয়া সেলের সামনে একাংশের অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারা নিজেদের গণজাগরণ মঞ্চের মূল অংশ বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করে। এখানে কামাল পাশা চৌধুরী, ছাড়াও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান, শাহিন, মেসবাহ, প্রজন্ম ৭১, স্নোগান ৭১, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রজন্ম সংসদের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।

মাওলানা নিজামীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা গণজাগরণ মঞ্চের মূল অংশের পক্ষে আন্দোলন করছি। কোনো বিতর্কিত নেতার সঙ্গে আন্দোলনে জড়াচ্ছি না।’

* জাদুঘরের প্রধান ফটকের ঠিক সামনে ‘শাহবাগ আন্দোলন’ নামে একাংশ সমাবেশ করে। এখানে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ অংশে জাসদ ছাত্রলীগ, বাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র সমিতি, যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চ, ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।

ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ‘আমরা দ্বি-খণ্ডিত আন্দোলনের সঙ্গে নেই। কারও দালালি করি না। নিজামীর ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

* জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনে ‘ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক (বোয়ান)’- এর ব্যানারে আন্দোলন করছে আরেকটি অংশ। এ অংশের নেতৃত্বে আছেন বোয়ানের সভাপতি অনিমেষ রহমান।

সাগর লোহানী বলেন, ‘আমরা না কারও পক্ষে, না বিপক্ষে। আমরা নিজামীর ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করছি।’

* আর জাদুঘরের প্রধান ফটকের দক্ষিণ দিকে রাস্তার ওপর অবস্থান কর্মসূচি পালন করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডা. ইমরান এইচ সরকারের সমর্থকরা। এছাড়া এখানে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তার, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি জোনার্দন দত্ত নান্টুকে দেখা গেছে।

ইমরান সরকারের কর্মীরা নিজামীর ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল শেষে ইমরান এইচ সরকার সাংবাদিকদের কাছে রায় স্থগিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি নিজামীর রায় না হওয়াকে জামায়াতের অব্যাহত ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেন। বলেন, আগেও নিজামী অসুস্থ হয়েছেন অনেকবার। তখন বিচারকাজে কোনো বাধা সৃষ্টি হয়নি। এ অজুহাতে আজ কেন তার রায় কার্যক্রম বন্ধ থাকবে?

ইমরান বলেন, রায়কে ঘিরে সব সময় জামায়াত হরতালের মত সহিংস কর্মসূচি দিলেও এবার দলটি চুপ ছিল। গতকাল দলটির নিরবতায় তখনই বুঝা গিয়েছিল কোনো একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সরকার জামায়াতের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে।

মাওলানা নিজামীর রায় ঘিরে সকাল নয়টা থেকে শাহবাগে কর্মীরা জড়ো হলেও বৃষ্টিতে নেতারা না আসায় কোনো পক্ষই কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। পরে সকাল ১০টার দিকে শাহবাগে আসেন ডা. ইমরান এইচ সরকার।

এরপর অন্য সব পক্ষের নেতারাও এসে তাদের কর্মীদের নিয়ে মিছিল, স্লোগানে মুখর করে তোলে শাহবাগ। দুপুর পর্যন্ত ইমরানের কর্মসূচিতে তাকেসহ ৩৫ জন, শাহীন আহমেদের অংশে ১৪ জন, বাপ্পাদিত্য বসুর অংশে ১১ জন এবং বোয়ান অংশে ১০ জনকে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

পরে শাহীন আহমেদের অংশ দুপুর সাড়ে ১২টা, বাপ্পাদিত্য বসুর অংশ ১২টা ৫০ মিনিটে এবং ইমরানের নেতৃত্বাধীন অংশ দুপুর সোয়া একটার দিকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করে।

এদের মধ্যে শুধুমাত্র আজ ইমরান এইচ সরকারের অংশ সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

(ওএস/এস/জুন ২৪, ২০১৪)