ভ্রমণ ডেস্ক : ভ্রমণপাগলদের মাঝে হামহাম খুব পরিচিত একটি নাম। অনেকেই যারা এই চমৎকার সুন্দর ঝর্ণাটি দেখেননি নিজেদের বাকেট লিস্টে এর নাম রেখেছেন ঠিকই। কবে যাবেন সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না! ঝর্ণায় বেড়াতে যাওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। এখনই ঘুরে আসুন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার এই ঝর্ণা থেকে।

১৫০ ফুট উঁচু সবুজ লতা গুল্মে আবিষ্ট পাহাড় থেকে নেমে আসা চঞ্চলা জলধারা এই হামহাম। দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা ঝর্ণাটি গত ১ বছর থেকে পর্যটক আকর্ষণ করতে শুরু করে। ইতিমধ্যেই অসংখ্য পর্যটক এখানে ভ্রমণ করেছেন। পথের সুবিধার কথা চিন্তা শুকনো মৌসুমে এখানে গেলে মন খারাপ করে আসতে হবে। যেতে হবে এখনই।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক বা রেল পথে চলে আসুন মৌলভীবাজার।

সড়কপথে

ঢাকার সায়েদাবাদ, কমলাপুর, কল্যাণপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দিনে-রাতে বিভিন্ন পরিবহনের অসংখ্য বাস এই রুটে চলাচল করে। এই রুটে এসি ও নন-এসি দুই ধরনের বাসই রয়েছে। এসি বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রিন লাইন, আল-মোবারাকা সোহাগ, সৌদিয়া ও এস আলম। আর নন-এসি বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, মামুন, ইউনিক পরিবহন।

রেলপথে

ঢাকা থেকে সরাসরি মৌলভীবাজারের সাথে রেল যোগাযোগ রয়েছে। ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো মৌলভীবাজার হয়ে সিলেটে যায়। ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা – সিলেট রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো হলো- কালনী এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস।

বাস, ট্রেন বা বিমান যেভাবেই যান না কেনো, প্রথমে আপনাকে মৌলভীবাজার অথবা শ্রীমঙ্গল স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে যেতে হবে কমলগঞ্জ।

কমলগঞ্জ থেকে কুরমা চেকপোষ্ট পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার পাকারাস্তা। কুরমা চেকপোষ্ট থেকে চাম্পারায় চা বাগান পর্যন্ত ১৫ কি.মি. মাটির রাস্তা। সেখান থেকে আবার প্রায় ৫ কি.মি. দূরে সীমান্ত এলাকায় আদিবাসীদের বসতি কলাবনপাড়ায় যেতে হয়। সেখান থেকেই দুর্গম জঙ্গল শুরু। সেই জঙ্গলের প্রায় ৮.৫ কিঃমিঃ ভিতরে অবস্থিত হামহাম জলপ্রপাত।

পাকা রাস্তা পর্যন্ত আসা কোন সমস্যা নয়। কিন্তু এরপরই আপনার কষ্টের শুরু। বৃষ্টির কারণে মাটির রাস্তার অবস্থা এখন খুবই খারাপ। সিএনজিতে অন্যসময় এই রাস্তায় যাওয়া গেলেও এখন সমস্যা হতে পারে। কলাবনপাড়া থেকে আপনাকে গাইড নিতে হবে। এরপরের রাস্তায় ভরসা আপনার পা দু'টো।

এখানেই পাবেন আপনার ৩য় পা অর্থাৎ বাঁশ। বর্ষায় জোঁকের প্রকোপ থাকবেই। তাই তেল। লবন এগুলোও নিতে হবে সাথে, এখানেই পেয়ে যাবেন। এই পথে জোঁকের হাত থেকে বাঁচার উপায় নেই। জোঁককে ভয় পাবেন না। নিজের দিকে এবং সংগীর দিকে খেয়াল রাখুন। জোঁক ধরার সাথে দেখতে পেলে সহজে ছাড়ানো যাবে। তবে জোঁক কখনো টেনে তুলতে যাবেন না। লবণ দিলে ওরা এমনিই আপনাকে ছেড়ে দেবে।

জঙ্গলের ভেতর বেশ খানিকটা এগিয়ে গেলে আপনি একটি পাহাড় পাবেন। উঁচু, খাড়া, পিচ্ছিল এই পাহাড় পার হওয়া খুব কষ্টকর। সাবধানে পার হবেন। আপনি যদি খুব বৃষ্টির মাঝে যান তাহলে হয়ত বুক সমান পানির মাঝ দিয়ে যেতে হবে আপনাকে। ভালো গ্রিপের জুতা পরবেন অবশ্যই। নাহলে আহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাস্তা ভীষণ খারাপ এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তবে পর্যটক সমাগম পূর্বের তুলনায় এই পথকে সুগম করেছে। পথে কিছু খাবার বহন করুন। স্যালাইন বা গ্লুকোজ সাথে রাখুন, কাজে দেবে। সব কষ্টের পর ঝর্ণার লীলাখেলা দেখলে মনে হবে, এই সৌন্দর্যই একমাত্র সত্য। বাকি সব মিথ্যা!

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৬, ২০১৭)