আহম্মদ ফিরোজ, ফরিদপুর : মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের আশাপুর সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক শেখ তানভীর আহমেদ শিমুল (২৭) কে অপহরণের পর ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে দায়ের করা একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। একটি মেয়েলি ঘটনায় আটক হয়ে ফরিদপুরে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দেয়ার পর মাদ্রাসা শিক্ষক শিমুলের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন একই ইউনিয়নের বিড়ালদিয়া বাজারের সিমেন্ট, বালুর ব্যবসায়ী নাজমুল হোসাইন (২৮)। শিক্ষকতার পাশাপাশি একই বাজারে শিমুলেরও একটি সিমেন্ট, বালুর ব্যবসা রয়েছে।

গত ৬ জুলাই মধুখালী থানায় দায়ের করা মামলায় নাজমুল হোসাইন বলেন, ৭ দিন পূর্বে শিমুল ও চর বামুন্দী গ্রামের লিখন (৩০) নামে দুই যুবক তাকে ছলেবলে কৌশলে টিন কেনার কথা বলে ২লাখ ৫হাজার টাকাসহ তার মোটর সাইকেলযোগে ফরিদপুর নিয়ে যায়। এরপর ৭/৮ জন মিলে তাকে অপহরণ করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তাকে মারপিট করে খুন করার হুমকি দেয় ও শিমুলের নির্দেশে সবাই মিলে তার টাকা নিয়ে যায়। গোয়ালচামটের মো: সৈয়দ আলীর ছেলে মো: সবুজ হোসেন এ সময় সাদা ষ্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নিয়ে ঘটনার কথা কাউকে না জানাতে বলে।

ঘটনার ৭দিন পর শিমুলকে প্রধান আসামী করে থানায় অপরহণ ও মক্তিপণ আদায়ের মামলা গ্রহণের পর গত বুধবার বিকেল ৩টায় শিমুলকে আটক করে কোর্টে প্রেরণ করে পুলিশ।

এ ব্যাপারে জানতে নাজমুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অপহরণকারীরা শিমুলের নাম বলেছে। ঘটনা জানানোর পর রুকসুর ভিপি কাওসার আকন্দ তাকে বাঁচিয়ে দেন। যদিও এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, শিমুলের নির্দেশে ওরা টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং কাওসারকে মামলার স্বাক্ষিও করা হয়নি। নাজমুল অবশ্য মোবাইলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে প্রথমে অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলে ভাই বিজি আছি। এক ঘন্টা পরে কথা বলেন। এরপর অনুরোধ জানিয়ে সংক্ষিপ্ত কথা শেষে দ্বিতীয়বার ফোন করার পরে সে ফোনটি কেটে দেয়।

শুক্রবার বিকেলে রাজেন্দ্র কলেজের ভিপি কাওসার আকন্দের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একটি মেয়েকে দিয়ে ফোন করিয়ে নাজমুলকে ফরিদপুরে আনা হয়েছিল। এরপর ১ লাখ টাকা ২০ হাজার টাকা ও মোটর সাইকলে রেখে নাজমুলকে ছেড়ে দেয়া হয়। বিষয়টি পরে জানতে পেরে নাজমুলের গাড়িটা উদ্ধার করে দিতে পেরেছি। কিন্তু টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি। কাওসার জানান, টাকা শিমুল নেয়নি। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারাও শিমুলের নাম বলেনি।

উল্লেখ্য, নাজমুলের লিখিত অভিযোগ মামলার এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে মধুখালী থানার ওসি মামলাটি গ্রহণ করেন। ফরিদপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে প্রেরিত মধুখালী থানার ওসি রুহুল আমিন ও এসআই মোজাম্মেল স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শিমুল এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত। তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য পৃথক প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে।’

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মধুখালী উপজেলার সরকার দলীয় এক নেতার নির্দেশে শিমুলের বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। খোয়ানো টাকা ফিরে পেতে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে শিমুল ও লিখনকে আসামী করে এ মামলা। মেগচামী ইউনিয়নের বিল আড়ালিয়া বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ঘটনার দিন নাজমুল একাই মোটর সাইকেলে ফরিদপুর রওনা হয়।

মিথ্যা মামলায় আটক এই মাদ্রাসা শিক্ষক শেখ তানভীর আহমেদ শিমুলের মুক্তি দাবি ও মিথ্যা অভিযোগকারীর শাস্তি দাবি করেছে তার পরিবার।

(একে/এএস/জুলাই ০৭, ২০১৭)