শরীয়তপুর প্রতিনিধি : পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে গোসাইরহাটে ইদিলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক যুবলীগ নেতার মায়ের কুলখানি উপলক্ষে গণভোজ। ফলে পৌনে ২হাজার শিক্ষার্থীর প্রথম সাময়িক পরীক্ষা করে দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলাসহ বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। একই সূচিতে একই সময়ে সকল বিদ্যালয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আজ শনিবার ছিল বাংলা দ্বিতীয় পত্র ও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা।

গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষা চলাকালে ইদিলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান পরিক্ষার্থীদের অনিবার্য বারণ দেখিয়ে শনিবারের পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ দিয়ে দেন। বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, ইদিলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষায় ১ হাজার ৭শ' ২৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দুটি শিফটে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। আজ শবিারও ছিল দুটি শিফটের পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্ত ঐ যুবলীগ নেতার পারিবারিক অনুষ্ঠানের কারণে তা বন্ধ করে দেন প্রধান শিক্ষক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শনিবার স্কুল মাঠে গোসাইরহাট পৌরসভা যুবলীগের আহ্বায়ক, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও পৌরসভার কাউন্সিলর কামাল উদ্দিন সরদারের মায়ের কুলখানি উপলক্ষে গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে। মাঠের পূর্ব পার্শ্বে প্যান্ডেল তৈরি করে রান্না বান্নার কাজ চলছে। এ কারণে শনিবারের বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধাস্ত নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিদ্যালয়ে সাংবাদিকরা গেলে দেখা যায় বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এ আয়োজনের দেখা শুনা করছেন। এতে বিদ্যালয়ের অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে।

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, হঠাৎ পরীক্ষা বন্ধ রাখার খবর পেয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়েছি। পরে খবর নিয়ে জানতে পারলাম মাঠে সরকার দলীয় এক নেতার পারিবারিক অনুষ্ঠান হবে। এভাবে কোন ব্যক্তির পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য ১হাজার ৭শ'রও বেশী পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বন্ধ রাখা ঠিক হয়নি।

গোসাইরহাটে ইদিলপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, প্রশ্নপত্র না পাওয়ার কারনে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কামাল উদ্দিন সরদার এর অনুষ্ঠানের বিষযটিও বিবেচনায় ছিল। সকল শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে আমি অনুমতি দিয়েছি। সব পরীক্ষা শেষ হলে স্থগিত রাখা পরীক্ষা নেয়া হবে।

গোসাইরহাট পৌরসভা যুবলীগের আহবায়ক কামাল উদ্দিন সরদার বলেন, আমার বাড়িতে জায়গা কম থাকায় আমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপিত বরাবর লিখিত আবেদন করে বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করি।

গোসাইরহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান মিয়া বলেন, প্রধানন শিক্ষক এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। কোন অবস্থাতেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা স্থগিত রেখে কোন ব্যক্তির অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিতে পারেন না। এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়াহ ইয়া খান বলেন, ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান করার জন্য স্কুল মাঠ ব্যবহারের কোন তথ্য আমার জানা নেই। পরীক্ষা বন্ধ রেখে এমন কাজ করা অন্যায়। প্রধান শিক্ষক কারো সঙ্গে আলাপ না করেই একা এমন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। এটা খুবই দুঃখজনক।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনক মোঃ মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। কি ভাবে প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা বন্ধ রেখে বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানের অনুমতি দিল, তা গোসাইরহাট উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ব্যাখ্যা নেয়ার নিদের্শ দেয়া হয়েছে।

(কেএনআই/এএস/জুলাই ০৮, ২০১৭)