লালমনিরহাট প্রতিনিধি : ‘তিস্তার নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে হামার বাড়ি ভিটা কোনা ভাংগি গেল বাহে। এখন হামা কই থাকম? বাড়ি ভিটা কোনা ছিল সেকনাও মরা নদী নিয়া গেল।’

ভিটে হারিয়ে কষ্টের কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ ধুবনী গ্রামের তিস্তা পাড়ের জাহেদা (৫০)।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে তিস্তা পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোর করুণ চিত্র। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো ঘর-বাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সরকারি সাহায্য কেউ পেয়েছে কেউ বা পাননি।

বৃহস্পতিবার সকালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম হলদী বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীর গর্ভে বিলিন হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টির পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

পশ্চিম হলদী বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, কাচাঁ-পাকা ভবনটি তিস্তা নদীর গর্ভে বিলিন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অন্য স্থানে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন স্পার বাঁধের ভাটিতে ভাঙন শুরু হয়েছে। পানির তোড়ে নদীতে ভেসে গেছে অসংখ্য ঘরসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র।

স্থানীয়রা জানান, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে তিস্তার তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গোবর্দ্ধন সলিডি স্পার-২ এর ভাটিতে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আব্দুল গাফফার আলী, ইউসুফ আলী, দবিয়ার, মশিয়ার, আফজাল, ইউসুফ উদ্দিন, আমির ও বজলার রহমানের ঘর ও বাড়ি নদীর গর্ভে বিলিন হয়।

এ ঘটনায় ওই এলাকায় চলছে গৃহহারা মানুষের আহাজারি। ঘরবাড়ি সরানোর কাজে ছোটাছুটি করছেন নদীতীরের মানুষ, আতংক বিরাজ করছে গ্রামগুলোতে।

ওই এলাকার ফজলুর রহমান (৫০) জানান, স্পার বাঁধ রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে কয়েক হাজার বসত বাড়িও ভাঙনের মুখে পড়বে।

মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, স্পার বাঁধের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। ভাঙন রক্ষায় জরুরিভাবে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান জানান, স্পার বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ রয়েছে। এ পর্যন্ত পরিবারের মাঝে ৫শ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৪০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১৩, ২০১৭)